মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের (এমসিজি) উইকেট নিয়ে বড় বিতর্ক তৈরি হয়েছে এবারের বক্সিং ডে টেস্টে। সাধারণত এমসিজির উইকেটে প্রায় ৭ মিলিমিটার ঘাস রাখা হয়। তবে তৃতীয় দিন থেকে প্রচণ্ড গরমের আশঙ্কায় কিউরেটর ম্যাট পেজ বাড়তি সতর্কতা হিসেবে এবার ১০ মিলিমিটার ঘাস রাখেন।
উদ্দেশ্য ছিল শেষ তিন দিনে উইকেট ভালো রাখা। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ম্যাচ দুই দিনেই শেষ হয়ে যায়, যা কেউই আশা করেনি।
বিজ্ঞাপন
এই অপ্রত্যাশিত ফল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দুই দলের অধিনায়কই। ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস সরাসরি বলেন, অন্য কোনো মাঠে এমন উইকেট হলে একে ‘নরক’ বলা হতো। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথও স্বীকার করেন, পেস বোলারদের জন্য উইকেটে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সহায়তা ছিল।
উইকেটে বাড়তি বাউন্স ও সুইং থাকলেও ব্যাটসম্যানদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল বলের অনিয়মিত আচরণ। একই জায়গায় পড়া বল কখনো বেশি নড়েছে, কখনো কম, আবার কখনো একেবারেই নড়েনি। এতে ব্যাটিং করা হয়ে পড়ে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
এই পরিস্থিতিতে বড় দুশ্চিন্তায় পড়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। কারণ ম্যাচ দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়ায় তাদের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পার্থ টেস্টও দুই দিনে শেষ হওয়ায় আগেই প্রায় ৫০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার ক্ষতির শঙ্কা ছিল। এবার মেলবোর্ন টেস্টও দুই দিনে শেষ হওয়ায় মোট ক্ষতি প্রায় ১ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার ছাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মেলবোর্নে প্রথম দুই দিনে দর্শকসংখ্যা ছিল রেকর্ডসংখ্যক। আগাম টিকিট বিক্রির হিসাবে তৃতীয় দিনে ৯০ হাজারের বেশি দর্শক আসার কথা ছিল। কিন্তু ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ায় তৃতীয় দিনের সব টিকিটের টাকা ফেরত দিতে হয়েছে। এমনকি চতুর্থ দিনের অনেক টিকিটও আগে থেকেই বিক্রি হয়েছিল।
বিজ্ঞাপন
টিকিট বিক্রির পাশাপাশি সম্প্রচার স্বত্ব ও স্পন্সরশিপ থেকেও বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়েছে বোর্ড। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী টড গ্রিনবার্গ জানান, সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির চিন্তায় তার ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
সবচেয়ে আলোচিত কিউরেটর ম্যাট পেজ নিজেও ম্যাচের পরিস্থিতিতে বিস্মিত। তিনি বলেন, “প্রথম দিনেই ২০টি উইকেট পড়েছে। দিন শেষে আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। এমন টেস্ট ম্যাচে আগে কখনো যুক্ত ছিলাম না, আর ভবিষ্যতেও থাকতে চাই না।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতি বছর পরিস্থিতি আলাদা হয়, ব্যবধান খুবই সামান্য। আমরা সবসময় চেষ্টা করি যেন চার-পাঁচ দিন ধরে ব্যাট ও বলের লড়াই দেখা যায় এবং দর্শকরা আকর্ষণীয় টেস্ট ক্রিকেট উপভোগ করতে পারেন।”
এখন সবার নজর ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রোর সিদ্ধান্তের দিকে। তার দেওয়া রেটিংই নির্ধারণ করবে এমসিজির এই বিতর্কিত উইকেটের ভবিষ্যৎ মূল্যায়ন।

