সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

হ্যাডলির ৪০ বছরের পুরনো রেকর্ড ভাঙলেন ডাফি

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৫ পিএম

শেয়ার করুন:

হ্যাডলির ৪০ বছরের পুরনো রেকর্ড ভাঙলেন ডাফি

জ্যাকব ডাফির আগুনে বোলিংয়ে ভর করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তৃতীয় টেস্টে ৩২৩ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। সোমবার পঞ্চম দিনের ভাঙাচোরা উইকেটে ক্যারিবীয়দের মাত্র ১৩৮ রানে গুটিয়ে দেন কিউই বোলাররা, যেখানে ডাফির শিকার ৫ উইকেট, খরচ ৪২ রান।

এই ম্যাচে ডাফি শুধু ম্যাচ জেতাননি, গড়েছেন ইতিহাসও। এক ক্যালেন্ডার বছরে নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডে তিনি পেছনে ফেলেছেন কিংবদন্তি রিচার্ড হ্যাডলিকে। বছরজুড়ে তার উইকেটসংখ্যা এখন ৮০ ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৮৫ সালে ২৩ ম্যাচে ৭৯ উইকেট পেয়েছিলেন হ্যাডলি। পুরো সিরিজে ডাফির সংগ্রহ ২৩ উইকেট, গড় মাত্র ১৫.৪। এর মধ্যে তিনটি পাঁচ উইকেটের ইনিংস। তিন টেস্টে ১৫৪ ওভারের বেশি বল করে নিউজিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণের ‘ওয়ার্কহর্স’ ছিলেন তিনি।


বিজ্ঞাপন


সিরিজসেরা নির্বাচিত ডাফি বলেন, “লাঞ্চের সময় তালিকাটা দেখেছিলাম। সেখানে দারুণ সব নাম ছিল। সেই তালিকায় নিজের নাম দেখতে পাওয়া সত্যিই বিশেষ অনুভূতির।”

চোট-জর্জর পেস আক্রমণের মধ্যেই এই সিরিজ খেলতে হয় দুই দলকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ছিলেন না শামার জোসেফ ও আলজারি জোসেফ। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডে একের পর এক ইনজুরিতে ছিটকে যান ম্যাট হেনরি, উইল ও’রর্ক, বেন সিয়ার্স, কাইল জেমিসন, নাথান স্মিথ ও ব্লেয়ার টিকনার। ফলে ডাফিই হয়ে ওঠেন কিউইদের প্রধান ভরসা।

তৃতীয় টেস্টটি ছিল পরিসংখ্যানপ্রেমীদের জন্য এক উৎসব। প্রথম ইনিংসে ডেভন কনওয়ে করেন ২২৭ রান, টম ল্যাথাম ১৩৭। দু’জনের ৩২৩ রানের উদ্বোধনী জুটিতে নিউজিল্যান্ড তোলে ৫৭৫/৮ (ডিক্লেয়ার্ড)। দ্বিতীয় ইনিংসেও একই জুটি আলো ছড়ান, কনওয়ে করেন ১০০, ল্যাথাম ১০১; ১৯২ রানের জুটির পর নিউজিল্যান্ড ৩০৬/২ এ ইনিংস ঘোষণা করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৬২ রান।

এই ম্যাচে কনওয়ে টেস্ট ইতিহাসের দশম ক্রিকেটার এবং প্রথম নিউজিল্যান্ডার হিসেবে একই ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরি করেন। ল্যাথাম ও কনওয়ে টেস্ট ইতিহাসে প্রথম ওপেনার জুটি, যারা একই ম্যাচের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছেন। দুই ইনিংস মিলিয়ে তাদের রান ৫১৫—ওপেনিং জুটির জন্য নতুন রেকর্ড। ল্যাথাম আরও একটি বিরল কীর্তিতে নাম লেখান; বাবার (রড ল্যাথাম) পর তিনিই দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি টেস্টের দুই ইনিংসেই ১০০+ ওপেনিং পার্টনারশিপে ছিলেন।


বিজ্ঞাপন


কনওয়ে বলেন, “এখনও পুরোটা মাথায় ঢুকছে না। কী ঘটল, বুঝতে সময় লাগবে। তবে জয়টা পাওয়ায় ভীষণ খুশি।” ডিক্লেয়ারেশন দেরিতে দেওয়ায় কিছু সমালোচনাও শুনতে হয় নিউজিল্যান্ডকে। বে ওভালের উইকেট প্রথম তিন দিন তুলনামূলক শান্ত ছিল, তবে চতুর্থ দিন থেকে ফাটল দেখা দেয়। শেষ দিনে বল লাফাতে শুরু করে অনিয়মিতভাবে।

চতুর্থ দিনের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনার ব্র্যান্ডন কিং ও জন ক্যাম্পবেল ১৬ ওভার টিকে থেকে ৪৩ রান যোগ করেন। পঞ্চম দিনে প্রথম ঘণ্টাতেও তারা কিউই বোলারদের হতাশ করেন। কিং করেন ফিফটি। তবে পাঁচ বলের ব্যবধানে দু’জনই আউট হলে ধস নামে। লাঞ্চের আগেই পড়ে যায় পাঁচ উইকেট, যার তিনটিই নেন ডাফি।

লাঞ্চের পর রোস্টন চেজকে শর্ট অব লেন্থ থেকে ওঠা তীব্র বাউন্সারে কাঁধসমান বল তুলে আউট করেন ডাফি, গ্লেন ফিলিপস নেন দিনের তৃতীয় ক্যাচ। শাই হোপ ৭৮ বল খেলে মাত্র ৩ রান করে এলবিডব্লিউ হন, আজাজ প্যাটেলের তৃতীয় উইকেট এটি। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর নিউজিল্যান্ডে টেস্ট খেলতে নেমে প্যাটেল এই ম্যাচেই নেন দেশের মাটিতে নিজের প্রথম টেস্ট উইকেট।

চোট নিয়েই ব্যাট করতে নামা কেমার রোচ (৪) বোল্ড হন ফিলিপসের বলে। অ্যান্ডারসন ফিলিপ ও তেভিন ইমলাখ ১৪ ওভার টিকলেও শেষ পর্যন্ত ভাঙে জুটি। রাচিন রবীন্দ্র আউট করেন ফিলিপকে। শেষে জেডেন সিলসকে বোল্ড করে নিজের পঞ্চম উইকেট নেন ডাফি, ৮০.৩ ওভারে শেষ হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস।

পুরো সিরিজেই লড়াই করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম টেস্টে ৫৩১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে জাস্টিন গ্রিভস ৫৬৪ মিনিট ব্যাট করে ২০২ রান করেন। ক্যারিবীয়রা ১৬৩.৩ ওভার ব্যাট করে ৪৫৭/৬ এ ম্যাচ ড্র করে—পাঁচ দিনের টেস্টে এটি সর্বোচ্চ চতুর্থ ইনিংস স্কোর। দ্বিতীয় টেস্টে নিউজিল্যান্ড ৯ উইকেটে জেতে, যেখানে অভিষেকে মিচ হে-র ৬১ রানই ছিল ম্যাচের সর্বোচ্চ।

শেষ পর্যন্ত সবকিছুর কেন্দ্রে ছিলেন জ্যাকব ডাফি- রেকর্ড, ধারাবাহিকতা আর ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্সে যিনি নিউজিল্যান্ডের সিরিজ জয়কে এনে দিয়েছেন দাপুটে রূপ।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর