নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য একের পর এক বড় ইনিংস আসছে। ক্রাইস্টচার্চে জাস্টিন গ্রিভসের ডাবল সেঞ্চুরির পর এবার সামনে এলেন কেভেম হজ। তৃতীয় দিনের শেষ দিকে দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে অপরাজিত ১০৯ রানে দিন শেষ করেছেন ডোমিনিকার এই ব্যাটার। তাঁর দৃঢ় ইনিংসেই ফলোঅন এড়িয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, টেস্ট বাঁচানোর বাস্তব সুযোগ তৈরি হয়েছে সফরকারীদের সামনে। তবে এখনও তারা পিছিয়ে আছে ১৯৪ রানে, নিউজিল্যান্ডের ৫৭৫/৮-এর জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ দিন শেষে ৩৮১/৬।
দিনের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনাররা আগের দিনের ভালো শুরুর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জ্যাকব ডাফির প্রলোভনে পড়েন জন ক্যাম্পবেল। কাভারের ওপর দিয়ে বড় ড্রাইভ মারতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন তিনি, আগের দিনের ব্যক্তিগত সংগ্রহে কোনো রানই যোগ করতে পারেননি। শুরুতে স্বাগতিকরা চাপ তৈরি করলেও হজ পরপর তিনটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেই চাপ ভাঙেন। তবুও প্রথম ঘণ্টার মধ্যেই ডাফি আবার আঘাত হানেন, লাইন মিস করে খেলে ব্র্যান্ডন কিং আউট হন।
বিজ্ঞাপন
ড্রিংকস বিরতির পর মাইকেল রে’র এক ওভার থেকে টানা তিনটি চার মারেন হজ। অন্য প্রান্তে টেভিন ইমলাখ ধীরগতিতে শুরু করেন, ১৫তম বলে প্রথম রান নেন। এরপর আজাজ প্যাটেলের বলে লং-অন দিয়ে সুন্দর ছক্কা হাঁকান তিনি। পরের বলে লেন্থ বেশি হওয়ায় ইমলাখ পাঞ্চ করে বল পাঠান বাউন্ডারিতে। হজ-ইমলাখ জুটি ৫০ রানের জুটি গড়েন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই হজ নিজের ফিফটি পূর্ণ করেন। মধ্যাহ্নভোজের ঠিক আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দলীয় সংগ্রহও ২০০ ছাড়িয়ে যায়।
বিরতির পর নিউজিল্যান্ড শুরু করে টানা দুইটি মেডেন দিয়ে। এরপর মনোযোগ হারিয়ে ইমলাখ অফ স্টাম্পের বাইরে বল খেলতে গিয়ে উইকেটকিপারের গ্লাভসে ক্যাচ দেন। হজের সঙ্গে যোগ দেন আরেক ডোমিনিকান ব্যাটার এলিক অ্যাথানেজ, যিনি শুরুতেই ফাইন লেগের দিকে একটি বাউন্ডারি পান। এক প্রান্তে হজ দৃঢ় থাকলেও রান তোলার দায়িত্ব নেন অ্যাথানেজ। আজাজ প্যাটেল ও গ্লেন ফিলিপসের বল মিলিয়ে মাত্র আট বলে চারটি চার মারেন তিনি। তবে ৪৫ রানে পৌঁছানোর পর অদ্ভুতভাবে আউট হন অ্যাথানেজ।
আজাজের লেগ সাইডে ভেসে আসা বলে প্যাড লাগাতে গিয়ে বল তাঁর ডান পায়ের ভেতরের দিকে লেগে সরাসরি স্টাম্প ভেঙে দেয়। এটি ছিল ২২ ম্যাচ পর আজাজ প্যাটেলের ঘরের মাঠে প্রথম টেস্ট উইকেট। এরপর হজ ও জাস্টিন গ্রিভস কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাউন্ডারি মেরে চায়ের আগে দলকে ৩০০ পার করান।
নতুন বল হাতে পেয়েই তা কাজে লাগায় নিউজিল্যান্ড। ডাফির বলে কিছুটা নড়াচড়া দেখা গেলেও হজ ও গ্রিভস দলকে চা বিরতিতে নিয়ে যান ৩১০/৪ স্কোরে।
বিজ্ঞাপন
চা বিরতির পর দ্বিতীয় বলেই পুল করে বাউন্ডারিতে পাঠান হজ। অন্যদিকে জ্যাকারি ফোল্কসের এক ওভার থেকে পরপর দুটি কাভার ড্রাইভ মারেন গ্রিভস। তিনি দ্রুত রান তুলতে থাকায় স্বাগতিক শিবিরে উদ্বেগ বাড়তে থাকে। তবে খেলার ধারার বিপরীতে গ্রিভস একটি ভেতরে ঢোকা বল মিস করে প্যাডে লাগান এবং এলবিডব্লিউ হন। রিভিউ নিয়েও রক্ষা পাননি তিনি।
এই ওভারের মধ্যেই আজাজ প্যাটেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক রস্টন চেজকে মাত্র ২ রানে ফেরান। অন্যদিকে হজ একটি বল মিড-অফের ওপর দিয়ে তুলে মারলেও ফিল্ডারের সামনে পড়ে। নব্বইয়ের ঘরে ঢোকার পর ৩২ বল অপেক্ষা করতে হয় হজকে। শেষ পর্যন্ত স্টাম্পসের ঠিক আগে নিজের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। দিন শেষে হজ ও ফিলিপ নিরাপদেই মাঠ ছাড়েন।
তৃতীয় দিনের খেলা শেষ হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩৮১/৬ স্কোরে। এখনও ১৯৪ রানে পিছিয়ে থাকলেও, হজের অনবদ্য শতকে টেস্ট বাঁচানোর আশা জিইয়ে রেখেছে ক্যারিবিয়ানরা।

