ইংল্যান্ডের লেগ স্পিনার আদিল রশিদের একটি মন্তব্যই বদলে দিয়েছে ২০ বছর বয়সী ইজাজ সাওয়ারিয়ার জীবন। চলতি বছরের শুরুতে ইনস্টাগ্রামে নিজের বোলিংয়ের রিলসে রশিদের প্রশংসা পান তিনি। সেখান থেকেই শুরু- ঘুম থেকে উঠেই নোটিফিকেশন দেখা, প্রতিদিন অনুশীলনের পর একটি করে রিল পোস্ট করা। কয়েক শ ভিউ থেকে আজ তার ভিডিওতে জমছে হাজার হাজার ইমপ্রেশন।
এই পথ ধরেই ইজাজের নাম পৌঁছে গেছে আইপিএল ২০২৬ নিলামে। মঙ্গলবার আবুধাবিতে নিলামে ডাক উঠবে তার। আনক্যাপড স্পিনারদের তালিকায় ২৬৫ নম্বরে থাকা ইজাজ কোনো প্রতিনিধিত্বমূলক ক্রিকেট না খেলেই নিলামে জায়গা করে নিয়ে তৈরি করেছেন এক অনন্য গল্প।
বিজ্ঞাপন
উত্তর কর্ণাটকের ছোট শহর বিদারে বড় হয়েছেন ইজাজ। তার বাবা ভারতীয় বিমান বাহিনীতে কর্মরত, পোস্টিং গোরখপুরে। ২০১৭ সালে বিজয় ক্রিকেট ক্লাবে ক্রিকেট শুরু করেন তিনি। শুরুতে ছিলেন পেসার, পরে কোচদের পরামর্শে মন দেন লেগ স্পিনে।
তিন বছর খেলেও অনূর্ধ্ব-১৫ দলে সুযোগ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। তখন সিদ্ধান্ত নেন নিজের শিকড় রাজস্থানে ফিরে যাবেন। কোভিডের পর ২০২২ সালে যান জয়পুরে। ভর্তি হন সংস্কার ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। সেখানে কোচ ছিলেন সুরেন্দ্র সিং রাঠোর, যিনি ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপজয়ী কামলেশ নাগরকোটিকেও কোচিং করিয়েছেন।
শুরুর দুই বছর সহজ ছিল না। জেলা দলে থাকলেও ম্যাচ খেলার সুযোগ মিলত না। গত বছরও সুযোগ না পেয়ে ভাবনার মোড় ঘোরান ইজাজ। তখনই ইনস্টাগ্রামে নিয়মিত রিল পোস্ট করা শুরু করেন।
প্রতিদিন অনুশীলনের পর একটি করে রিল। এটাই হয়ে ওঠে তার রুটিন। শুরুতে সাড়া কম থাকলেও আদিল রশিদের মন্তব্য বদলে দেয় দৃশ্যপট। ইনস্টাগ্রাম মেসেজে রশিদ তার বোলিংয়ের প্রশংসা করেন। সেই স্বীকৃতি ইজাজের আত্মবিশ্বাস কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
বিজ্ঞাপন
এরপর নজর পড়ে আইপিএল দলগুলোর। সাবেক পাঞ্জাব কিংস বোলিং কোচ সুনীল যোশীর মতো মানুষও তার ভিডিও দেখেন। চেন্নাই সুপার কিংসের স্কাউটরা যোগাযোগ করেন। পাঞ্জাব কিংস তাকে লখনউতে ট্রায়ালে ডাকে। সেখানে পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট হয়ে নিলামের জন্য তার কাগজপত্র পাঠানো হয়।
নিজের এই যাত্রা নিয়ে উচ্ছ্বসিত ইজাজ। তার বিশ্বাস, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে আইপিএল নিলামে ওঠা প্রথম ক্রিকেটার তিনিই হতে পারেন। এখন ইনস্টাগ্রামে অনেক তরুণকে তার মতো রিল বানাতে দেখেন, যা তাকে বাড়তি আনন্দ দেয়।
এই পথচলায় পরিবারের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি। বাবা ও বড় বোন দীর্ঘদিন আর্থিকভাবে তাকে সহায়তা করেছেন। কোচ সুরেন্দ্র সিং রাঠোরের অবদানও বড় লেগ স্পিন, ভ্যারিয়েশন আর টেকনিকে উন্নতির পেছনে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
রোল মডেল হিসেবে রাজস্থানেরই ছেলে রবি বিষ্ণোইয়ের নাম বলেন ইজাজ। আদিল রশিদের পাশাপাশি তার বড় অনুপ্রেরণা এমএস ধোনি। ছোটবেলা থেকেই চেন্নাই সুপার কিংসের সমর্থক তিনি। সুযোগ পেলে সিএসকেতেই খেলতে চান, তবে যেকোনো দলে নিজের সেরাটা দেওয়াই তার লক্ষ্য।

