মেক্সিকো, যেখানে ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজন হবে, সেখানকার একটা বড় স্টেডিয়ামের চারপাশে এখন ভয়ের ছায়া। আক্রন স্টেডিয়াম যেখানে বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলা হবে, সেখান থেকে শত শত ব্যাগ ভর্তি মানুষের দেহের টুকরো পাওয়া গেছে। এই ভয়ংকর খবরে সবাই চিন্তায় পড়েছে যে, ফুটবলের এই বড় উৎসব কি নিরাপদে হবে? এমনটায় জানায় ইউরোপের একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
জলিস্কো প্রদেশে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামের আশপাশ থেকে গত সেপ্টেম্বরে নতুন করে আরও লাশের অংশ উদ্ধার হয়েছে। তদন্তকারীরা বলছেন, এসব নৃশংস হত্যার পেছনে রয়েছে মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদক চক্র বা কার্টেল। বিশেষ করে 'জলিস্কো নিউ জেনারেশন কার্টেল' (সিজেএনজি), যা দেশের সবচেয়ে আগ্রাসী অপরাধী গ্রুপ। এই কার্টেলকে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত সন্ত্রাসী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছিলেন।
বিজ্ঞাপন
ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সংস্থা 'স্ট্রার্টফর' বলছে, জলিস্কো প্রদেশটা এই কার্টেলের মূল ঘাঁটি। তারা মাদক পাচার করে, হত্যা করে আর ভয় দেখিয়ে এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। এখন বিশ্বকাপের জন্য এই স্টেডিয়াম প্রস্তুত করার সময় এমন লাশ পাওয়ায় সবাই উদ্বিগ্ন।

মেক্সিকোতে নিখোঁজ মানুষের সংখ্যা এখন ১ লাখ ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর বেশিরভাগই শুরু হয়েছে ২০০৬ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট ফেলিপে ক্যালদেরনের 'ড্রাগ যুদ্ধ' শুরুর পর। এই যুদ্ধে কার্টেলদের বিরুদ্ধে সেনা নামানো হয়, কিন্তু তার ফলে হত্যা আর নিখোঁজের সংখ্যা আরও বেড়েছে।
জলিস্কো রাজ্য এখানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়। ন্যাশনাল সার্চ কমিশনের তথ্য অনুসারে- ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৭,৩৭৬ জন নিখোঁজ হয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২১ সালে আরও ৯,৫৯৩ জন। অপরাধের হারেও জলিস্কো মেক্সিকোর শীর্ষ চার রাজ্যের মধ্যে এক নম্বর। চলতি বছরের শুরুতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে নিখোঁজ স্বজনদের সন্ধানের দাবিতে প্রতিবাদ করেছে।
বিজ্ঞাপন
আক্রন স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের মূল পর্বের চারটা ম্যাচ হওয়ার কথা। তার আগে আগামী মার্চে এখানে ইন্টার-কনফেডারেশন প্লে-অফ ম্যাচ হবে। নিউ ক্যালেডোনিয়া বনাম জ্যামাইকা, আর বিজয়ী খেলবে ডিআর কঙ্গোর সঙ্গে। কিন্তু লাশের স্তূপ আর কার্টেলের দাপটের মাঝে এসব ম্যাচ কতটা নিরাপদ?

তবে সরকার আর ফিফা নিরাপত্তা জোরদার করার চেষ্টা করছে। পদক্ষেপগুলো হলো- ৩ হাজার অতিরিক্ত সিসি ক্যামেরা লাগানো। বর্মবাহিত যানবাহন ব্যবহার। মেটাল ডিটেক্টর আর ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন। তদন্তকারীরা বলছেন, এসব করে স্টেডিয়ামকে নিরাপদ করা হবে। কিন্তু কার্টেলদের এই এলাকায় ফুটবলের মহাযজ্ঞ কতটা সফল হবে, সেটা দেখার অপেক্ষা।
এই ঘটনা শুধু মেক্সিকোর অপরাধের ছবি নয়, বরং বিশ্বকাপের মতো আন্তর্জাতিক ইভেন্টের চ্যালেঞ্জও তুলে ধরছে। ফুটবলের উৎসবের মাঝে ভয়ের ছায়া কি দূর হবে, না কি আরও গভীর হবে? সময়ই বলবে।

