রোববার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

৩৭ পূর্ণ করলেন বিরাট কোহলি

প্রকাশিত: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০২:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

৩৭ পূর্ণ করলেন বিরাট কোহলি

আজ, ৫ নভেম্বর, বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে এক অদম্য আগুনের স্মৃতি জ্বলে উঠছে। ১৯৮৮ সালের এই দিনে দিল্লির ধুলোময় গলিতে জন্ম নিয়েছিলেন ভারতের সেই যুবক, যার ব্যাটের প্রতিটি স্পর্শ যেন একেকটা ঝড়ের ঘোষণা। ভারতীয় ক্রিকেটের 'কিং' বিরাট কোহলি, আজ ৩৭ বছরের পথিকৃৎ। কিন্তু এই জন্মদিন শুধু মোমবাতির আলোয় উদযাপিত নয়; এটি এক অসমাপ্ত মহাকাব্যের অধ্যায়, যেখানে জয়-পরাজয়ের মাঝে লুকিয়ে আছে একজন মানুষের অটুট সংগ্রাম।

২০১১ সালের বিশ্বকাপের সেই রাত, যখন কলকাতার ইডেন গার্ডেনে দর্শকদের চোখে অশ্রু জমে উঠেছিল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফাইনালের মাঠে কোহলি, তখনো অভিজ্ঞতার অভাবে ভারসাম্যহীন, কিন্তু চোখে এক অদ্ভুত দৃঢ়তা। তার ব্যাট থেকে বেরিয়ে আসা সেই ৩৫ রান। কম বলে মনে হলেও, সেটা ছিল ভারতের বিজয়ের ভিত্তি। টিম ইন্ডিয়া বিশ্বজয়ী হয়েছে, কিন্তু কোহলির মনে সেই রাতের অন্ধকার এখনো অমলিন। 'আমি বেশি করতে পারতাম,'—এই কথাটা তার মুখে ফুটে ওঠে বছরের পর বছর। সেই হতাশা তার জ্বালানি হয়ে উঠেছে, যা তাকে 'চেজ মাস্টার' বানিয়েছে। 


বিজ্ঞাপন


আজকের কোহলি আর সেই যুবক নেই। ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সে আবার ফিরে এসেছে, যেন এক প্রতিশোধের গাথা লিখতে। মেলবোর্নের সেই সেমিফাইনালে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার অপরাজেয় ৮২ রান যেন মাঠের প্রতিটি বল তার প্রতি ব্যক্তিগত আঘাত। দর্শকরা চিৎকার করছে, কিং! কিং! কিন্তু তার চোখে সেই পুরনো আগুন ২০১১-এর অসম্পূর্ণতা মিটিয়ে দেওয়ার লালসা। এবং গত বছরের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতের বিজয়, সেখানে তার নেতৃত্বে টিমের উত্থান, যেন এক ড্রামার মতো উঠে পড়ে লড়াই।

virattt

সে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছে, কিন্তু ওয়ানডে এবং আইপিএল-এর মাঠে সে এখনো অজয়। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর জার্সিতে তার নামটা যেন এক লিঙ্গের মতো অটুট, অপরাজেয়। কিন্তু এই জন্মদিনের পিছনে লুকিয়ে আছে আরও গভীর একটা গল্প। কোহলি শুধু রানের যন্ত্র নয়; সে এক মানুষ, যার জীবনের অন্ধকার অধ্যায়গুলো তাকে গড়ে তুলেছে। ২০১৮ সালের সেই মানসিক সংকটের সময়, যখন তার ব্যাট চুপ করে গিয়েছিল, সে বলেছিল, 'আমি ভেঙে পড়েছিলাম, কিন্তু ফিরে এসেছি শক্ত হয়ে।' তার স্ত্রী অনুষ্কা শর্মা বলিউডের তারকা—তার পাশে দাঁড়িয়ে সেই অন্ধকারকে আলোয় রূপান্তরিত করেছে। 

আর 'বিরাট কোহলি ফাউন্ডেশন'? সেটা তার জন্মদিনের সবচেয়ে সুন্দর উপহার, অনগ্রসর শিশুদের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষার দ্বার খুলে দেয়া। আজ, যখন বিশ্বের লক্ষ লক্ষ ফ্যান তার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছা পাঠাচ্ছে, তখন মনে হয়, এই যোদ্ধা কখনো হারবে না!


বিজ্ঞাপন


kohliii

কেননা ভারত এক সময় শচীন টেন্ডুলকারের নামের সঙ্গে জড়িত থাকলেও এখন তিন অক্ষরের নামেই জনতার উচ্ছ্বাস– বিরাট। বিরাট কোহলিই এখন ভারতের ক্রিকেটের পরিচয়। ক্রিকেটের রাজদণ্ডটি মুম্বাইয়ের শান্ত ধ্যানী শচীনের হাত থেকে ধীরে ধীরে দিল্লির উদ্যমী যুবক বিরাটের কাছে এসে পৌঁছেছে। এই পরিবর্তন কোনো এক দিনের ঘটনা নয়। তপস্যা, শৃঙ্খলা, অধ্যবসায়—শচীনের খেলাধুলার দিকনির্দেশনা বিরাটের মধ্যে মিশে গেছে। আর সেই মিশ্রণ থেকেই গড়ে উঠেছে নতুন দর্শন, নতুন এক রাজত্ব।

বিরাটের খেলাধুলার ধরন হলো আগ্রাসী ও আত্মবিশ্বাসী। শচীনের নিখুঁত টেকনিকের সঙ্গে ভিভ রিচার্ডসের আক্রমণাত্মক স্টাইল মিলিয়ে তিনি ব্যাটকে ভীষণ শক্তিশালী অস্ত্রে পরিণত করেছেন। প্রতিপক্ষের উপর আধিপত্য স্থাপন করা তাঁর খেলার মূল লক্ষ্য। ১৭ বছর বয়সে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে খেলেও ৯০ রানের ইনিংস করা সেই দৃঢ় মানসিকতারই পরিচায়ক। ক্রিকেট তাঁর কাছে ধর্মের মতো, অসম্পূর্ণ থাকা মানে পাপ।

ফিটনেস ও অনুশীলনে বিরাট অত্যন্ত যত্নশীল। জিমে কঠোর পরিশ্রম, ডায়েটে নিয়ন্ত্রণ—এগুলো তাঁর শক্তির উৎস। মাঠে তিনি যেমন দ্রুত রান তৈরি করেন, তেমনি প্রতিটি ক্যাচও হাতছাড়া করেন না। বিরাটের ক্যারিয়ার চ্যালেঞ্জের পর চ্যালেঞ্জ সামলেছে। অনূর্ধ্ব-১৪ দলে বাদ পড়ার হতাশা তাঁকে আরও দৃঢ় করেছে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে ভারতকে জয়ী করার পর তিনি এক নতুন আগ্রাসনের প্রতীক হয়ে ওঠেন। 

বয়সের সঙ্গে তাঁর রানের খিদের কোনও সম্পর্ক নেই। আর মাইলস্টোন তাড়া করার প্রসঙ্গ নেই। নিজের নামের পাশে ক্রিকেটের সব ট্রফির স্বাদ নিয়েছেন তিনি। এবার উপভোগের পালা। ২০২৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলতে চান। ২০২৩ বিশ্বকাপে অল্পের জন্য আশাহত হয়েছেন। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারতে হয়েছে। তাই ২০২৭ বিশ্বকাপকে পাখির চোখ করেছেন বিরাট। ২০১১ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ছিলেন। কিন্তু তখন সবে মাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ করেন। এখন তিনি সেই ফরম্যাটে রাজা। তাই নিজের মুকুটে আরও একটি পালক যুক্ত না করে বাইশ গজকে বিদায় জানাতে চান না। নিজের ৩৭তম জন্মদিনে হয়তো তেমনই অঙ্গীকার নিয়ে ফেললেন কোহলি।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর