রোববারের এল ক্লাসিকোর শেষ মুহূর্তগুলোতে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের মধ্যে উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মাঠে নামতে হয় পুলিশকে। রেফারির শেষ বাঁশি বাজার আগেই যেন ম্যাচ পরিণত হয় এক ধাক্কাধাক্কির লড়াইয়ে।
সব শুরু ৯৯তম মিনিটে। অরেলিয়েন চুয়ামেনির সঙ্গে ট্যাকলে বার্সেলোনার মিডফিল্ডার পেদ্রি দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। সেই সময় সমতাসূচক গোলের জন্য মরিয়া চেষ্টা করছিল বার্সা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর গোল আসেনি। কিলিয়ান এমবাপে ও জুড বেলিংহ্যামের গোলে ২-১ ব্যবধানে জয় পায় রিয়াল মাদ্রিদ। ফার্মিন লোপেজের একমাত্র গোল ছিল বার্সার সান্ত্বনা। এই জয়ে লা লিগায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার চেয়ে পাঁচ পয়েন্টে এগিয়ে গেল মাদ্রিদ।
বিজ্ঞাপন
লাল কার্ড থেকে শুরু, শেষ বাঁশির পরও উত্তেজনা
পেদ্রির লাল কার্ড যেন ম্যাচে আগুন ধরিয়ে দেয়। শেষ বাঁশির পরও চলতে থাকে ধাক্কাধাক্কি আর বাকবিতণ্ডা। এসময় মাদ্রিদের বদলি গোলরক্ষক আন্দ্রি লুনিনকে লাল কার্ড দেখান রেফারি, আরও ছয়জন খেলোয়াড়কে দেখানো হয় হলুদ কার্ড।

কী ঘটেছিল মাঠে?
বিজ্ঞাপন
পেদ্রির দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ার পর চুয়ামেনিসহ কয়েকজন মাদ্রিদ খেলোয়াড় এসে তাঁকে সান্ত্বনা দেন। কিন্তু ক্যামেরা তখন ঘুরে যায় সাইডলাইনে। সেখানে দেখা যায় বদলি বেঞ্চে বসা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও গোলরক্ষক লুনিন বার্সেলোনার ফেরান তোরেস ও আলেহান্দ্রো বালদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাকবিনিময়ে জড়িয়ে পড়েছেন। রিয়ালের ফেডেরিকো ভালভার্দে, বেলিংহ্যাম, রুডিগার, মিলিতাও, আলাবা এমনকি ইনজুরিতে থাকা কয়েকজনও দৌড়ে যান বার্সা বেঞ্চের দিকে। বার্সার পক্ষ থেকেও রাফিনিয়া ও এরিক গার্সিয়াসহ বেশ কয়েকজন যুক্ত হন এই ধাক্কাধাক্কিতে।

পুলিশ মাঠে নেমে দুই দলের খেলোয়াড়দের আলাদা করে দেয়। এসময় মিলিতাও দু’হাত তুলে পরিস্থিতি শান্ত রাখার ইঙ্গিত দেন, আর কোচ জাবি আলোনসো ছুটে এসে ভিনিসিয়ুসকে পেছনে টেনে আনেন। রেফারি সিজার সোটো গ্রাদো ম্যাচ রিপোর্টে উল্লেখ করেন, লুনিনকে তিনি লাল কার্ড দেখান “আগ্রাসী ভঙ্গিতে প্রতিপক্ষের বেঞ্চের দিকে যাওয়ার জন্য, যাকে সতীর্থদেরই আটকাতে হয়েছে।”
শেষ পর্যন্ত খেলা আবার শুরু হয় থিবো কোর্তোয়ার কিক দিয়ে, এরপর রেফারি সোটো গ্রাদো বাজান শেষ বাঁশি।
শেষ বাঁশির পরও নাটক
শেষ বাঁশির পরও মাঠের মাঝামাঝি উত্তেজনা থামেনি। রিয়াল অধিনায়ক দানি কারভাহাল লামিন ইয়ামালের দিকে হাতের ইশারায় কিছু বলেন, যেন বোঝাচ্ছিলেন, ‘বেশি কথা বলো না’। ইয়ামাল এরপর কারভাহালের দিকে তেড়ে যেতেই রিয়ালের কামাভিঙ্গা তাঁকে ধরে ফেলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে কোর্তোয়া এগিয়ে এসে ইয়ামালের সঙ্গে কথাকাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন, যাদের আলাদা করতে এগিয়ে আসেন গার্সিয়া, ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং ও মার্ক কাসাদো।

এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে ব্রাহিম দিয়াজ ও ফেরান তোরেসকে ঠেলাঠেলি করতে দেখা যায়, আর মিলিতাও তর্কে জড়ান গার্সিয়ার সঙ্গে। কোচ আলোনসো মাথার দিকে ইঙ্গিত করে খেলোয়াড়দের শান্ত থাকার আহ্বান জানান। বার্সার ভারপ্রাপ্ত কোচ মার্কাস সার্গ (নিষিদ্ধ থাকায় ফ্লিক ছিলেন গ্যালারিতে) এবং ক্লাব কর্মকর্তা কার্লেস নাভালও চেষ্টা করেন উত্তেজনা থামাতে।
ইয়ামাল যখন মাঠের পাশে যাচ্ছিলেন, তখন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র আবার তাঁর দিকে একই ‘বেশি কথা বলো’ ইশারা করেন। গোলকিপিং কোচ লুইস লোপিস ভিনিসিয়ুসকে টানতে গেলে তিনি ক্ষেপে ইয়ামালের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে যান, তবে চারজন রিয়াল স্টাফ মিলে তাঁকে থামান। রাফিনিয়া দৌড়ে আসলে ভালভার্দে তাঁকে আটকান। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত হলে বার্সা খেলোয়াড়রা নিজেদের স্বল্পসংখ্যক সমর্থকদের কাছে যান, আর রিয়াল খেলোয়াড়রা হাত ধরে উদ্যাপন করেন জয়।
এই ঘটনার পর রেফারি লুনিনকে লাল কার্ড ও রদ্রিগো, ভিনিসিয়ুস, মিলিতাওকে হলুদ কার্ড দেখান। বার্সার পক্ষে হলুদ কার্ড পান ফার্মিন লোপেজ, বালদে ও ফেরান তোরেস।লা লিগা ও স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন সূত্রে দ্য অ্যাথলেটিক জানায়, রেফারির নেওয়া সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা নেই। ম্যাচের পর দুই দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কেই জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, শেষের এই অস্থিরতার কারণ কী। বিশেষ করে প্রশ্ন ছিল, লামিন ইয়ামালের ম্যাচ-পূর্ব মন্তব্য কি উত্তেজনা বাড়িয়েছিল?
ম্যাচের আগেই ইয়ামাল জেরার্ড পিকের কিংস লিগের এক লাইভে বলেছিলেন, “রিয়াল মাদ্রিদ সবসময় অভিযোগ করে, ওরা চোর।” এমনকি ম্যাচের আগের রাতে ইনস্টাগ্রামে তিনি পোস্ট করেছিলেন এক বছর আগের বার্নাব্যুতে নিজের গোলের পর রিয়াল ভক্তদের রাগান্বিত প্রতিক্রিয়ার ছবি। এই সব মন্তব্যই ম্যাচের আবহে বাড়তি আগুন যোগ করেছে বলেই মনে করছেন অনেকে।

