তথ্য-প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির এই যুগে প্রেমিক-প্রেমিকারা সহজেই একে অপরের কাছাকাছি থাকতে পারেন। মেসেঞ্জার-হোয়াটসঅ্যাপে অডিও-ভিডিও কল, ইন্সটাগ্রামে রিল আদান-প্রদান কিংবা ফেস টাইমিং- একে অপরকে জানতে পারেন খুব সহজেই। তবে এমনও সময় ছিল যখন একটা ফোন কলের খরচই ছিল আকাশছোঁয়া। তখনও প্রেমিক-প্রেমিকারা পিছপা হননি। কথা বলার সেই সুযোগটাই ছিল সবচেয়ে বড় চাওয়া। তা দিন-রাত যতই হোক না কেন। কয়েক মিনিটের কথাবার্তা রাতভর আলাপে গড়াতো, আর দূরত্ব পেরিয়ে গড়ে উঠত বন্ধুত্বের সেতু।
এমনই এক প্রেমের গল্প শুরু হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটার হরভজন সিং ও বলিউড অভিনেত্রী গীতা বসরার মধ্যে। ২০০৭ সালে ইংল্যান্ড সফরে একটি পার্টিতে দুজনের দেখা। এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয়, সেখানেই নাম্বার শেয়ার। এরপর শুরু হয় হালকা আলাপ, যা সময়ের সঙ্গে গাঢ় হতে থাকে। দেশে-বিদেশে, সময়ের ফাঁকেও গভীর হতে থাকে সেই সম্পর্ক।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন- আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা ৫ ফুটবলারের নাম জানালেন ডি মারিয়া
আরও পড়ুন- পাকিস্তান ফিরিয়ে দেওয়ায় বাংলাদেশকেই আমন্ত্রণ ভারতের
২০০৮ সাল নাগাদ স্পষ্ট হয় এই সম্পর্ক আর সাধারণ নেই। তখন ভারত শ্রীলঙ্কা সফরে খেলছে। সিরিজ জিতে গোটা টিম উদযাপনে মত্ত, কিন্তু হরভজন যেন অন্য জগতে। কারণ রাতে ইংল্যান্ডে থাকা গীতার সঙ্গে তার ফোনে দীর্ঘ আলাপ।
আরও পড়ুন- ৬ গোলে হেরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন নেইমাররা, চাকরি হারালেন কোচ
বিজ্ঞাপন

তখনই এক ফোনকলে একবার বিল এসেছিল প্রায় ২৭ হাজার রুপি, বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৭ হাজার টাকার বেশি! তবে টাকা কোনোদিনও হরভজনের চিন্তার বিষয় ছিল না। ভালোবাসা ও অনুভূতির কাছে এই অঙ্ক ছিল তুচ্ছ। বরং সেই ফোনালাপই হয়ে ওঠে তাদের জীবনের অমূল্য স্মৃতি, যা ভবিষ্যতে দুজনকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে।

এই প্রেমের গল্প প্রকাশ্যে আসতে সময় লেগেছে প্রায় আট বছর। গীতা সবসময় চাইতেন তার পরিচয় হোক একজন অভিনেত্রী হিসেবে, প্রেমিকার ছাপ যেন না পড়ে ক্যারিয়ারে। তখন হরভজনও ব্যস্ত ছিলেন ক্রিকেট নিয়ে। গুজব চললেও গীতা বারবারই বলতেন, “আমরা শুধু ভালো বন্ধু।” তবে অনেকেই বুঝতেন, বিষয়টা তার চেয়েও বেশি। ক্যারিয়ার আর ব্যক্তিগত জীবন দুটোই সামলে তারা গড়েছিলেন এমন এক সম্পর্ক, যেটা পার করেছে অনেক চ্যালেঞ্জ।
দশ বছর পর, ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর, পাঞ্জাবি ঘরানার ঐতিহ্য মেনে জালন্ধরে বিয়ে করেন হরভজন ও গীতা। পরিবারের আশীর্বাদ, ধর্মীয় রীতিনীতির মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর মুম্বাইতে হয় জমকালো রিসেপশন। ক্রিকেট ও বলিউড তারকাদের উপস্থিতিতে হয়ে ওঠে বছরের অন্যতম আলোচিত অনুষ্ঠান। যেন দুই দুনিয়ার মিলন উৎসব!
গীতা সিনেমা থেকে অবসর নিয়ে পুরোপুরি সংসারে মন দিয়েছেন। আর হরভজন সিং এখন ক্রিকেট মাঠ নয়, বরং সময় কাটান ধারাভাষ্য আর রাজনীতিতে। তাদের প্রেমের গল্প আজ প্রমাণ করে, সময় দিলে ভালোবাসা ক্যারিয়ার, দূরত্ব, এমনকি ৩৭ হাজার টাকার ফোন বিলের থেকেও বেশি শক্তিশালী হতে পারে।

