এজবাস্টনে তৃতীয় দিনটি টেস্টের সেই বিখ্যাত ‘মুভিং ডে’র সংজ্ঞাকে যেন নতুন করে লিখে দিল। দিনের শুরু ও শেষের চিত্র হয়তো খুব বেশি বদলায়নি, ভারত এগিয়ে, ইংল্যান্ড ভুলের খেসারত দিচ্ছে বল ও ব্যাটে। তবে নাটকীয়তা, আবেগ আর বিস্ময়ে ভরপুর ছিল প্রতিটি মুহূর্ত।
দিনের দ্বিতীয় ওভারেই মোহাম্মদ সিরাজ ফিরিয়ে দেন জো রুট ও বেন স্টোকসকে টানা দুই বলে। পরে তিনটি উইকেট নিয়ে শেষ করেন ইংল্যান্ডের ইনিংস- সিরাজের ক্যারিয়ারের চতুর্থ ও ইংল্যান্ডে প্রথম পাঁচ উইকেট (৬/৭০)। ভারতের বিশাল প্রথম ইনিংসের (৫৮৭) জবাবে ইংল্যান্ড অলআউট হয় ৪০৭-এ, ফলে দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর আগে ভারতের লিড দাঁড়ায় ১৮০। দিনের শেষে এই ব্যবধান বেড়ে হয় ২৪৪, ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৪/১- একমাত্র আউট যশস্বী জয়সওয়াল (২৮), আউট হন জশ টাংয়ের বলে এলবিডব্লিউ হন।
বিজ্ঞাপন
তবে তৃতীয় দিনে ম্যাচের মূলে ছিলেন জেমি স্মিথ। ৮০ বলে সেঞ্চুরি করে শুরু করা স্মিথের ব্যাট থেকে আসে ১৮৪ রান। ইংল্যান্ডের উইকেটরক্ষকদের মধ্যে সর্বোচ্চ। হ্যারি ব্রুকের ১৫৮ রানের দুর্দান্ত সঙ্গ পেয়ে তাঁরা মিলে গড়েন ৩০৩ রানের ছয় নম্বর উইকেট জুটি, ইংল্যান্ডের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সেই জুটিই একসময় মনে করিয়েছিল, ইংল্যান্ড হয়তো ভারতের ৫৮৭ রানকেও ছুঁয়ে ফেলবে।
কিন্তু রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে পড়ে ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপ। আকাশ দীপ নতুন বল হাতে তুলে নেন ব্রুককে, এরপর ২০ রানের ব্যবধানে পড়ে যায় শেষ পাঁচ উইকেট। স্মিথ যেভাবে লড়াই চালিয়ে গেছেন, তাতে গোটা স্টেডিয়াম যেন তাঁকে এককভাবে সমর্থন করছিল।
স্মিথের ইনিংসের শুরুটা হয়েছিল বিপর্যয়ের মধ্যেই- ২২তম ওভারে ইংল্যান্ড ৫ উইকেটে ৮৪! সেখান থেকে আগ্রাসী মেজাজে স্মিথ চার-ছক্কা হাঁকিয়ে ঘুরিয়ে দেন ম্যাচের গতি। প্রসিধ কৃষ্ণর এক ওভারে চারটি চার ও একটি ছয় হাঁকিয়ে নেন ২৩ রান, এরপর পরের ওভারেই আরও একটি ছয় মারেন। ৬২ বলে পৌঁছান ৮৪ রানে, তবে সেঞ্চুরির সময়সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় গিলবার্ট জেসপের সর্বকালের দ্রুততম সেঞ্চুরি ছুঁয়ে যেতে পারেননি।
বিজ্ঞাপন
দ্বিতীয় সেশনে আরও জ্বলে ওঠেন ব্রুক- ১৩৭তম বলে করেন তাঁর নবম টেস্ট সেঞ্চুরি। ভারতের বিপক্ষে এটি তাঁর প্রথম শতক, নিজ দেশে মাত্র দ্বিতীয়। যদিও এরপর ভারত আক্রমণভাগে নিয়ন্ত্রণ নেয় সিরাজ-জাদেজা-ওয়াশিংটনের বোলিংয়ে।
শেষদিকে আকাশ দীপ বল হাতে তুলে নেন ব্রুককে (বিস্ময়ের কিছু নয়, তিনি তখন ব্যথা পেয়ে ব্যানানা খাচ্ছিলেন!)। এরপর সিরাজ ফিরিয়ে দেন টাংকে ও বাশিরকে- ম্যাচের অন্যতম সেরা মুহূর্ত ছিল বাশিরকে আউট করার সেই ডেলিভারি, যা স্টাম্পে আঘাত হানে বাশির যখন বল ছেড়ে দিয়েছিলেন।
শেষদিকে রাহুল (২৮*) ও জয়সওয়াল ঝড় তুলেন দ্বিতীয় ইনিংসে। জয়সওয়াল মাত্র ২২ বলে করেন ২৮ রান, ক্রিস ওকস ও ব্রাইডন কার্সের খাটো বলগুলোকে বারবার শাস্তি দেন। যদিও তিনি আউট হওয়ার আগে একটি বিতর্কের জন্ম দেন- টাংয়ের এলবিডব্লিউতে তিনি রিভিউ নিতে কিছুটা দেরি করেন, অথচ আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা তাঁকে রিভিউ নিতে দেন। স্টোকস আপত্তি জানান, কিন্তু পরে তিনটি রেড সিগনালে সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।
তবে ইংল্যান্ডের সে বিজয় ক্ষণিকের। কারণ বাকি পুরো দিনজুড়ে দাপট ছিল ভারতের। এজবাস্টনের গ্যালারিতে তখন হিন্দি-ইংরেজি মিশিয়ে ধ্বনি উঠছে—"স্মিথ শো শেষ, এবার ভারতীয় শো টাইম!"