শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

রজতজয়ন্তীতে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট, আক্ষেপের ভার ২৫ বছরে ২৩ জয়

সালমান ইসলাম
প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২৫, ০১:২৯ পিএম

শেয়ার করুন:

রজতজয়ন্তীতে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট, আক্ষেপের ভার ২৫ বছরে ২৩ জয়

আজ বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ২৫ বছর পূর্তি। ২০০০ সালের ২৬ জুন, যেদিন বাংলাদেশ ক্রিকেটের অভিজাত মঞ্চে দশম সদস্য হিসেবে টেস্ট মর্যাদা পেয়েছিল, সেই দিনটি ছিল স্বপ্নের শুরু। কিন্তু রজতজয়ন্তীর এই মুহূর্তে উৎসবের উচ্ছ্বাসের চেয়ে আক্ষেপের ছায়াই যেন ভারী হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২৫ বছরের পথচলায় বাংলাদেশ ক্রিকেট কতটা এগিয়েছে, আর কতটাই বা পিছিয়ে আছে। এই প্রশ্ন আজ ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে।

১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়, ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর টেস্ট মর্যাদা এসেছিল একটি জাতির স্বপ্ন হিসেবে। কিন্তু ২৫ বছর পর সেই স্বপ্ন পূরণের পথে বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে। উচ্ছ্বাসের মুহূর্তগুলো যতটা না হৃদয়ে আনন্দ জাগায়, আক্ষেপের ভার ততটাই মন ভারী করে। প্রশ্ন থেকে যায় আগামী ২৫ বছরে বাংলাদেশ কি টেস্ট ক্রিকেটে সত্যিকারের শক্তি হয়ে উঠতে পারবে, নাকি আক্ষেপের ছায়া আরও গাঢ় হবে?


বিজ্ঞাপন


সংখ্যার হিসাবে লাল বলের ক্রিকেটে বেশ পিছিয়ে বাংলাদেশ। ২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট ম্যাচ দিয়ে যাত্রা শুরু। এরপর ২৫ বছরে বাংলাদেশ খেলেছে ১৫৪টি টেস্ট, জিতেছে মাত্র ২৩টি, হেরেছে ১১১টি, আর ড্র হয়েছে ১৯টি। জয়ের হার মাত্র ১৪.৯৩ শতাংশ। যা টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম জয়, ২০১৭ সালে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো পরাশক্তির বিপক্ষে ঘরের মাঠে জয়, এমনকি ২০২৪ সালে পাকিস্তানের মাটিতে ঐতিহাসিক জয়, এই সাফল্যগুলো যেন মরুর মাঝে মরীচিকা। বেশিরভাগ সময়ই হতাশার গল্পই প্রকট।

bangladesh_test_cricketer_25_years

আক্ষেপের কারণ কী? প্রথমত, ধারাবাহিকতার অভাব। আমিনুল ইসলামের সেঞ্চুরি দিয়ে শুরু হওয়া টেস্ট যাত্রায় সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমের মতো তারকারা উজ্জ্বল হলেও, দলগত সাফল্যে তা রূপান্তরিত হয়নি। ব্যাটিং লাইনআপের ভঙ্গুরতা, বোলিংয়ে বৈচিত্র্যের অভাব, আর ফিল্ডিংয়ে বারবার ব্যর্থতা বাংলাদেশকে পিছিয়ে রেখেছে। বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে জয়ের সংখ্যা হাতেগোনা মাত্র ৫টি। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ এখনো একটি টেস্ট জয়ের মুখ দেখেনি।

দ্বিতীয়ত, ক্রিকেট প্রশাসনের অদূরদর্শিতা। বিসিবির পরিকল্পনার অভাব, ঘরোয়া ক্রিকেটের দুর্বল কাঠামো, এবং তৃণমূল থেকে প্রতিভা বিকাশে বিনিয়োগের ঘাটতি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে ব্যর্থ হয়েছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের উত্থানে তরুণ ক্রিকেটাররা টি-টোয়েন্টির দিকে ঝুঁকছেন, ফলে টেস্টের জন্য ধৈর্যশীল ও কৌশলী খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে না।


বিজ্ঞাপন


অবশ্য কিছু মুহূর্ত আক্ষেপের মেঘ সরিয়ে উচ্ছ্বাসের স্মৃতিও জাগায়। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম জয়, ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকায় রোমাঞ্চকর জয়, ২০২১ সালে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ঐতিহাসিক জয়। এগুলো বাংলাদেশের সম্ভাবনার প্রমাণ। সাকিবের অলরাউন্ড দ্যুতি, মুশফিকের অধিনায়কোচিত ইনিংস, তামিমের আগ্রাসী ব্যাটিং, আর তরুণ তাসকিন-মিরাজদের উত্থান বাংলাদেশকে আশার আলো দেখিয়েছে। কিন্তু এই আলো কেন বারবার ম্লান হয়ে যায়?

এগিয়ে যাওয়ার পথে, বিসিবি আজ রজতজয়ন্তী উদযাপনের আয়োজন করেছে। মিরপুরে প্রথম টেস্ট দলের সম্মাননা, তৃণমূলে ক্রিকেট কার্নিভাল, নতুন প্রতিভা খোঁজার প্রতিযোগিতা। কিন্তু এই উৎসবের মাঝেও প্রশ্ন উঠছে, এই আয়োজন কি শুধুই আনুষ্ঠানিকতা, নাকি সত্যিকারের পরিবর্তনের সূচনা? 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর