ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি পোস্ট হতেই চমকে ওঠেন অনেকে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পায়ের নখে কালো নেইল পলিশ! তবে এটা কোনো ফ্যাশনের অংশ নয়, এর পেছনে রয়েছে সম্পূর্ণ যৌক্তিক এক কারণ। পর্তুগালের হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নেশন্স লিগ জিতে সদ্য ফিরেছেন রোনালদো। এর পরই নিজের ১৪ বছরের ছেলে ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়রকে সঙ্গে নিয়ে ইনটেনস ওয়ার্কআউট শেষে জিমে ছবি তুলেছেন তিনি। ছবিতে দু’জনেরই পেশি টানাটান।
ছবিটি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করার পর ১ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি লাইক পড়ে। কমেন্ট সেকশনে সাবেক সতীর্থ প্যাট্রিস এভরা মজার ছলে লেখেন, “তোমার ছেলে তো এখন তোমার থেকেও লম্বা!” তবে বেশিরভাগ ভক্তের নজর গিয়ে পড়ে অন্যদিকে। রোনালদো খালি পায়ে দাঁড়িয়ে, আর তার পায়ের নখে কালো নেইল পলিশ!
বিজ্ঞাপন
অনেকে ভাবেন, এটি হয়তো কোনো ফ্যাশনের অংশ- ইমো রক স্টাইল বা আধুনিক ট্রেন্ডের অনুসরণ। কিন্তু রোনালদোর মতো একজন যিনি তার শরীরের যত্নে কোনো ধরনের ছাড় দেন না, তার এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে স্বাস্থ্যগত গুরুত্ব।
জার্মান সংবাদমাধ্যম বিল্ড জানিয়েছে, রোনালদো নখে নেইল পলিশ লাগান যাতে নখ ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। একজন পেশাদার ফুটবলার হিসেবে প্রতিনিয়ত তাকে ঘাম জমা বুট ও জুতা পরে থাকতে হয়। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। নেইল পলিশের মাধ্যমে একটি সুরক্ষামূলক স্তর তৈরি হয় যা নখকে শক্ত করে তোলে এবং সহজে ভাঙা বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে।
এই পদ্ধতিটি কেবল রোনালদো নয়, অনেক পেশাদার অ্যাথলেট, ট্র্যাক অ্যাথলেট, বক্সার এবং এমএমএ ফাইটারদের মাঝেও দেখা যায়। কিংবদন্তি বক্সার মাইক টাইসন তার ক্যারিয়ারের শীর্ষ সময়ে নখে রং করতেন বলে শোনা যায়। ইউএফসির সাবেক মিডলওয়েট চ্যাম্পিয়ন ইসরায়েল আদেসানিয়াও কালো নেইল পলিশ পরা অ্যাথলেটদের একজন।
রোনালদোর নখের আঙুলে নেইলপলিশ নেওয়ারও আছে কারণ। এর মূল কারণ হলো যেনো পায়ের নখ শক্ত হয়। ফুটবলের মত খেলায় শারীরিক সংঘর্ষ অনিবার্য। এমন সব সময়ে যেন পায়ের নখ ভেঙে না যায়, এ কারণেই অনেকেই পায়ে কালো নেইলপলিশ ব্যবহার করেন। রোনালদোও তাদের একজন। এর ব্যভার জনপ্রিয় করেছেন মিক্সড মার্শাল আর্টসের অ্যাথলেটরা।
বিজ্ঞাপন
২৩ বছর ধরে পেশাদার ফুটবলে ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রেখেছেন রোনালদো। এর পেছনে তাঁর কঠোর রুটিন ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পাঁচবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী এই তারকা উচ্চ প্রোটিনভিত্তিক খাবার খেয়ে থাকেন, চিনি সম্পূর্ণ পরিহার করেন। তার প্রিয় খাবারের একটি হলো 'বাকালহাউ আ ব্রাস' যেটি পর্তুগিজ একটি পদ, তৈরি হয় লবণাক্ত শুঁটকি মাছ, পেঁয়াজ, আলু ও ডিম দিয়ে।
রোগ থেকে সেরে উঠতে রোনালদো ব্যবহার করেন ক্রায়োথেরাপি। বিশ্রামের দিকেও তার মনোযোগ অনেক বেশি। তিনি দিনে প্রায় পাঁচবার, দেড় ঘণ্টা করে ছোট ছোট ঘুম দিয়ে থাকেন। রিয়াল মাদ্রিদে থাকার সময় ঘুমের কোচ নিক লিটলহেইলসের সঙ্গে কাজ করেছেন রোনালদো। তখনই জানা যায়, দিনের মধ্যে ছোট ছোট ঘুম অনেক বেশি কার্যকর হতে পারে রাতজেগে টানা আট ঘণ্টা ঘুমানোর চেয়ে।
রোনালদোর এই নিখুঁত পরিকল্পিত জীবনযাপনই প্রমাণ করে, সাফল্য পেতে শুধু প্রতিভা নয়, দরকার কঠোর পরিশ্রম ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা।