একটা সময় ছিল, যখন অস্ট্রেলিয়ার নাম শুনলেই প্রতিপক্ষের গায়ে কাঁটা দিত। ট্রফির মঞ্চে তাদের জয় ছিল যেন নিয়তির লিখন। কিন্তু ক্রিকেট, যে খেলাটি গৌরব আর গ্লানির নাট্যমঞ্চ। সেখানেই এবার মুদ্রার উল্টো পিঠও দেখতে হয়েছে অজিদের। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ; সব ফরম্যাটেই ফাইনালে হারের তিক্ততা স্বাদ নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
১৯৭৫ বিশ্বকাপ ফাইনাল: ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে প্রথম হার
বিজ্ঞাপন
ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রথম আসরে, ১৯৭৫ সালে, লর্ডসের ঐতিহাসিক মাঠে ফাইনালে উঠেছিল অস্ট্রেলিয়া। প্রতিপক্ষ ছিল শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথমে ব্যাট করে ক্লাইভ লয়েডের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ক্যারিবীয়রা গড়ে ২৯১ রানের পাহাড়। জবাবে অস্ট্রেলিয়া লড়াই করলেও ২৭৪ রানে অলআউট হয়ে ১৭ রানে হারে। এই হার দিয়ে অজিরা প্রথম ফাইনালে ট্রফি হাতছাড়ার স্বাদ পায়।
১৯৯৬ বিশ্বকাপ ফাইনাল: শ্রীলঙ্কার বিস্ফোরক জয়
দ্বিতীয়বার ফাইনালে হারের মুখ দেখে অস্ট্রেলিয়া ১৯৯৬ সালে। লাহোরে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল অপ্রতিরোধ্য শ্রীলঙ্কা। প্রথমে ব্যাট করে অজিরা সংগ্রহ করে ২৪১ রান। তবে অরভিন্দ ডি সিলভার দুর্দান্ত সেঞ্চুরি ও রণতুঙ্গার নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেট হাতে রেখে জয় তুলে নেয়। এই হার অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে ক্রিকেটে বড় ধাক্কা ছিল।
২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল: ইংল্যান্ডের কাছে ধরাশায়ী
বিজ্ঞাপন
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও ফাইনালে হারের স্বাদ পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ২০১০ সালে বার্বাডোজে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় তারা। প্রথমে ব্যাট করে অজিরা মাত্র ১৪৭ রানে গুটিয়ে যায়। ইংল্যান্ডের ক্রেইগ কিসওয়েটারের অর্ধশতকের দাপটে মাত্র ১৭ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে জয় পায় ইংলিশরা। এই হারে অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি ট্রফির স্বপ্ন ভেঙে যায়।
২০২৫ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল: দক্ষিণ আফ্রিকার ঐতিহাসিক জয়
২০২৫ সালে, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (ডব্লিউটিসি) ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারে প্যাট কামিন্সের অস্ট্রেলিয়া। লর্ডসে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে টেম্বা বাভুমার দল ৫ উইকেটে জয় তুলে নেয়। এই হারের মধ্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়া আইসিসির সব ফরম্যাটে ফাইনালে হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা পূর্ণ করে।
অজিরা ক্রিকেটের পরাশক্তি হলেও ফাইনালে হারের এই গল্পগুলো তাদের যাত্রার অংশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দাপট, শ্রীলঙ্কার উত্থান, ইংল্যান্ডের ঝড়ো ব্যাটিং, আর দক্ষিণ আফ্রিকার ঐতিহাসিক জয়। প্রতিটি হার অজিদের শিখিয়েছে নতুন করে ফিরে আসার পাঠ। তবে এই হারগুলোই প্রমাণ করে, অস্ট্রেলিয়া যতবার হোঁচট খেয়েছে, ততবারই আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরেছে।

