বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে লর্ডসে চতুর্থ ইনিংসের লক্ষ্য তাড়া করতে নামার আগে আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে প্রোটিয়া ব্যাটার ডেভিড বেডিংহ্যাম জানালেন, যে লক্ষ্যই হোক না কেন, সেটি টপকে যাওয়ার সক্ষমতা তাদের আছে, আর দলটির ভেতরে রয়েছে প্রবল বিশ্বাস।
দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ইতোমধ্যেই ২১৮ রানের লিড নিয়ে রেখেছে, হাতে আছে আর মাত্র দুটি উইকেট। অর্থাৎ দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কঠিন এক লক্ষ্য।
টানা দ্বিতীয় দিনেও লর্ডসে ১৪টি উইকেট পড়ে গেছে। সিম সহায়ক উইকেটে গতি ও সুইং সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে দুই দলই। দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাদার পর এবার অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স নিজের নাম তুলেছেন লর্ডসের অনার্স বোর্ডে। মাত্র ২৮ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ৩০০ উইকেটের মাইলফলকও স্পর্শ করলেন কামিন্স।
বিজ্ঞাপন
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে একাই লড়েছেন বেডিংহ্যাম। ১১১ বল মোকাবেলায় ৪৫ রানের ধৈর্যশীল ইনিংস খেলে তিনি বলেন, “প্যাট কামিন্স দুর্দান্ত বল করেছে, তাকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। তবে আমরা সুযোগটা কাজে লাগাতে প্রস্তুত। দারুণ একটা সুযোগ সামনে, আমরা সবাই খুবই রোমাঞ্চিত।” তিনি আরও যোগ করেন, “ফল যেকোনো দিকে যেতে পারে, তবে ড্রেসিংরুমে যে আত্মবিশ্বাস আছে, সেটা সত্যিই অসাধারণ।”
বিকেলের দিকে আকাশ মেঘলা হয়ে আসার পর নিজেদের অস্ত্র কাজে লাগিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ৭৩ রানে ৭ উইকেটে ফেলে দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা। এরপর অবশ্য ক্যারি ও স্টার্ক মিলে দলকে টেনে তোলেন। কিন্তু বেডিংহ্যামের মতে, “তারা তৃতীয় ইনিংসে ব্যাটিং শুরু করার পর যদি কেউ বলে ২২০-৮ থাকবে, আমরা খুশি হয়ে সেটাই মেনে নিতাম। আমাদের দলে ভীষণ আত্মবিশ্বাস কাজ করছে।”
অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক কামিন্স স্বীকার করেছেন, আরও কিছু রান যোগ হলে ভালো হতো। তবে এই পিচে ব্যাটিং কঠিন, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। “গেমের ধারা অনুযায়ী রানগুলো কমে আসছে। এখনও ব্যাট করা কঠিন। তাই আগামীকাল সম্ভবত ম্যাচের ফলাফল বের হবে, তবে আমাদের ভালো বোলিং করতে হবে।”
তিন ইনিংসেই নিয়মিত উইকেট পতন ও ব্যাটিং ধস অনেকেই সমালোচনা করলেও কামিন্স মনে করেন, এই পিচ আদর্শ টেস্ট ম্যাচের মতোই। “এই ম্যাচটা ৫০-৫০। কারও কারও জন্য ব্যাটিং সহজ লেগেছে, আবার অনেকে শুরুতেই আউট হয়ে গেছে। এটিই টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্য।”
বিজ্ঞাপন
তবে এমন অবস্থা কেন হচ্ছে? এর উত্তরে কামিন্স বলেন, “উইকেট এখনো কিছুটা কাজ করছে। মাঝে মাঝে হঠাৎ করেই বল সিম করে অনেক দূর চলে যাচ্ছে। সঙ্গে দুই দলের পেসাররা অনেক ডিসিপ্লিনড ছিল। খুব কম ফুলটস বা হাফ ভলি দেখা গেছে।”
কামিন্সের সঙ্গে একমত বেডিংহ্যামও। তবে তিনি আশা করছেন, তৃতীয় দিন ব্যাটিং কিছুটা সহজ হতে পারে। “এই উইকেটের গতি একটু কমে এসেছে। ফলে কিছু বল ব্যাটে ভালো করে লাগবে। তবে সোজা বলই বিপদ ডেকে আনতে পারে। তবুও আমরা আত্মবিশ্বাসী।”
লক্ষ্য জেনে খেলাটা আরও সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি। দ্বিতীয় দিন যে সাহসিকতা দেখা গেছে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে, সেটা প্রথম দিনের শেষ অংশে অনুপস্থিত ছিল। “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সিদ্ধান্তে নিশ্চিত থাকা- আপনি ডিফেন্স করবেন না অ্যাটাক। মাঝামাঝি মনোভাব নিলে এই ধরনের পেস অ্যাটাকের বিপক্ষে টিকে থাকা কঠিন।”
১৯৯৮ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর আর কোনো বৈশ্বিক ট্রফি জিততে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেও ভেঙে পড়েছিল তারা। তবে এবার যদি তেম্বা বাভুমার দল অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ডব্লিউটিসি জেতে, তবে ১৩ জুন হয়ে উঠতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা এক দিন।

