সোমবার (৩ জুন) আইসিসি তাদের 'হল অব ফেম'-এ নতুন করে সাত কিংবদন্তি ক্রিকেটারের নাম যুক্ত করেছে। লন্ডনের বিখ্যাত অ্যাবি রোড স্টুডিওতে আয়োজিত এক জমকালো অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ।
জয় শাহ বলেন, “আইসিসি হল অব ফেমের মাধ্যমে আমরা সেই সব অসাধারণ ক্রিকেটারকে শ্রদ্ধা জানাই, যারা তাদের পারফরম্যান্স দিয়ে ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করেছেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছেন।”
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, “এ বছর আমরা সাতজন সত্যিকারের অসাধারণ খেলোয়াড়কে এই মর্যাদাপূর্ণ তালিকায় যুক্ত করতে পেরে গর্বিত। তাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই এবং আশা করি এই স্বীকৃতি তাদের ক্রিকেট-জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
নতুন করে যারা যুক্ত হয়েছেন হল অব ফেমে, তারা হলেন:
ম্যাথু হেইডেন (অস্ট্রেলিয়া)
টেস্ট: ১০৩ ম্যাচ, ৮,৬২৫ রান, গড় ৫০.৭৩
ওডিআই: ১৬১ ম্যাচ, ৬,১৩৩ রান, গড় ৪৩.৮০
টি-টোয়েন্টি: ৯ ম্যাচ, ৩০৮ রান, গড় ৫১.৩৩
বিশ্বের সেরা ফাস্ট বোলারদের চোখে চোখ রেখে খেলার মতো আত্মবিশ্বাসী ওপেনার ছিলেন হেইডেন। টেস্টে ৩০টি সেঞ্চুরি ও ৫০-এর ওপর ব্যাটিং গড়—সেই ধারাবাহিকতাই তার ক্লাসের প্রমাণ। ২০০৭ বিশ্বকাপে তিনটি সেঞ্চুরি করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন হেইডেন। সেই আসরসহ দুটি বিশ্বকাপ জয়ের অংশ ছিলেন তিনি। এখন তিনি বিশ্বজুড়ে একজন জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকারও।
বিজ্ঞাপন
হেইডেন বলেন, “হল অব ফেমে আমি যাদের সঙ্গে যুক্ত হলাম, তাদের অনেকেই আমার হিরো। এ স্বীকৃতি পাওয়াটা দারুণ এক অনুভূতি।”
হাশিম আমলা (দক্ষিণ আফ্রিকা)
টেস্ট: ১২৪ ম্যাচ, ৯,২৮২ রান, গড় ৪৬.৬৪
ওডিআই: ১৮১ ম্যাচ, ৮,১১৩ রান, গড় ৪৯.৪৬
টি-টোয়েন্টি: ৪৪ ম্যাচ, ১,২৭৭ রান, গড় ৩৩.৬০
নির্ভরযোগ্য, ঠান্ডা মাথার একজন ব্যাটার হিসেবে পরিচিত ছিলেন আমলা। প্রতিটি ফরম্যাটেই ধারাবাহিকতা দেখিয়েছেন, তবে ওয়ানডেতে তার পরিসংখ্যান আরও উজ্জ্বল।২০১২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৩১১ রানের ইনিংস খেলে দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান হন আমলা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোট ৫৫টি সেঞ্চুরি করে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করেন।
আমলা বলেন, “এই স্বীকৃতি পেয়ে আমি গর্বিত, বিশেষ করে সাবেক সতীর্থ গ্রায়েম স্মিথের সঙ্গে একসঙ্গে এই মর্যাদা পাওয়া আমার জন্য বিশেষ মুহূর্ত।”
এমএস ধোনি (ভারত)
টেস্ট: ৯০ ম্যাচ, ৪,৮৭৬ রান, গড় ৩৮.০৮, ২৯৪ ডিসমিসাল
ওডিআই: ৩৫০ ম্যাচ, ১০,৭৭৩ রান, গড় ৫০.৫৭, ৪৪৪ ডিসমিসাল
টি-টোয়েন্টি: ৯৮ ম্যাচ, ১,৬১৭ রান, গড় ৩৭.৬০, ৯১ ডিসমিসাল
ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ক্যাপ্টেন কুল’ ধোনির নাম ক্রিকেট ইতিহাসের সঙ্গে অম্লানভাবে জড়িয়ে থাকবে। তার 'হেলিকপ্টার শট' দিয়ে ২০১১ বিশ্বকাপ জেতার দৃশ্য আজও ভোলেনি কেউ। তিনটি আইসিসি সাদা বলের টুর্নামেন্ট জিতে ইতিহাস গড়েছেন ধোনি- ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।
ধোনি বলেন, “আইসিসি হল অব ফেমে নিজের নাম দেখতে পারাটা গর্বের। এটা আমার ক্রিকেট-জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর একটি হয়ে থাকবে।”
গ্রায়েম স্মিথ (দক্ষিণ আফ্রিকা)
টেস্ট: ১১৭ ম্যাচ, ৯,২৬৫ রান, গড় ৪৮.২৫
ওডিআই: ১৯৭ ম্যাচ, ৬,৯৮৯ রান, গড় ৩৭.৯৮
টি-টোয়েন্টি: ৩৩ ম্যাচ, ৯৮২ রান, গড় ৩১.৬৭
মাত্র ২২ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হন স্মিথ। লম্বা সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন দক্ষতার সঙ্গে। ব্যাট হাতে ছিলেন দলকে ভরসা দেওয়ার মতো নেতা। তিনি বলেন, “এই স্বীকৃতি শুধু আমার নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার জন্যও গর্বের বিষয়। আমলা ও আমি একসঙ্গে হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছি—এটা বিশেষ আনন্দের।”
ড্যানিয়েল ভেটোরি (নিউজিল্যান্ড)
টেস্ট: ১১৩ ম্যাচ, ৪,৫৩১ রান, ৩৬২ উইকেট
ওডিআই: ২৯৫ ম্যাচ, ২,২৫৩ রান, ৩০৫ উইকেট
টি-টোয়েন্টি: ৩৪ ম্যাচ, ২০৫ রান, ৩৮ উইকেট
বাঁহাতি স্পিনার ভেটোরি শুধু বল হাতে নন, ব্যাট হাতেও ছিলেন কার্যকর। তিনিই টেস্টে ৪,০০০ রান ও ৩০০ উইকেটের ক্লাবে থাকা মাত্র তিন ক্রিকেটারের একজন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া দলের সহকারী কোচ ভেটোরি বলেন, “হল অব ফেমের আগের সদস্যদের দিকে তাকালেই বোঝা যায় তারা কী অবদান রেখেছেন। তাদের কাতারে নিজেকে দেখতে পারাটা অভাবনীয়।”
সানা মির (পাকিস্তান)
ওডিআই: ১২০ ম্যাচ, ১,৬৩০ রান, ১৫১ উইকেট
টি-টোয়েন্টি: ১০৬ ম্যাচ, ৮০২ রান, ৮৯ উইকেট
পাকিস্তানের প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন সানা মির। শুধু মাঠেই নন, মাঠের বাইরেও ছিলেন অনুপ্রেরণার নাম। শরীর নিয়ে কটাক্ষের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন, মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে কথা বলেছেন, কোভিডকালে পাশে থেকেছেন মানুষের। সানা বলেন, “শৈশবে যখন স্বপ্ন দেখতাম, তখন ভাবতেই পারিনি পাকিস্তানে নারীদের জাতীয় দল থাকবে। আজ এই হল অব ফেমে সেই কিংবদন্তিদের পাশে জায়গা পেলাম, যাদের দেখে বড় হয়েছি। এটা অবিশ্বাস্য এক অনুভূতি।”
সারা টেইলর (ইংল্যান্ড)
টেস্ট: ১০ ম্যাচ, ৩০০ রান, ২০ ডিসমিসাল
ওডিআই: ১২৬ ম্যাচ, ৪,০৫৬ রান, ১৩৮ ডিসমিসাল
টি-টোয়েন্টি: ৯০ ম্যাচ, ২,১৭৭ রান, ৭৪ ডিসমিসাল
ইংল্যান্ডের সাবেক উইকেটকিপার-ব্যাটার সারা টেইলর ছিলেন অসাধারণ গ্লাভসের পেছনে, বিশেষ করে তার লেগ সাইড স্ট্যাম্পিং ছিল চোখজুড়ানো। ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডকে দুটি বিশ্বকাপ জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি। ২০১৭ সালের ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ জয়ের পথেও সেমিফাইনালে সর্বোচ্চ স্কোর করে এবং ফাইনালে ৪৫ রানের ইনিংস খেলে দলের শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
টেইলর বলেন, “হল অব ফেমে নিজের নাম দেখতে পারাটা আমার জীবনের সেরা মুহূর্তগুলোর একটি। নারীদের ক্রিকেট যেভাবে এগোচ্ছে, এই সময় এমন স্বীকৃতি পাওয়া সত্যিই বিশেষ।”

