উয়েফা নেশনস লিগের ফাইনালে মাঠে নামছে স্পেন ও পর্তুগাল। এই ম্যাচ ঘিরে আলোচনার ঝড়টা স্বাভাবিকভাবেই ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আর লামিনে ইয়ামালকে ঘিরে। দুই প্রজন্মের দুই ফুটবল প্রতীক, দুই মেরু। তবে এই ম্যাচ কেবল দুজন তারকার ব্যক্তিগত গল্প না, এটা আসলে দলগত গভীরতা, সময়জ্ঞান আর দুই ফুটবল দর্শনের বিবর্তনের গল্প।
রোনালদো আর ইয়ামাল যেন ফুটবলজগতের দুই প্রান্ত। একজন তার ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়ে এসে ইতিহাস গড়তে মরিয়া, আরেকজন মাত্র শুরু করেই ভবিষ্যতের ছাপ রেখে চলেছে। কিন্তু বিষয়টা এখানেই থেমে নেই, এই ম্যাচে ধরা পড়বে দুই জাতীয় দলের ভবিষ্যতের রূপরেখা।
বিজ্ঞাপন
৩৯ বছর বয়সেও রোনালদোকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। এখনো গোল করছেন, রেকর্ড ভাঙছেন। ক্যারিয়ারে ইতোমধ্যে করেছেন ৯৩৭ গোল, হাজার গোলের মাইলফলক খুব কাছে। এই ফাইনাল তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আরেকটা স্মরণীয় মুহূর্ত যোগ করার সুযোগ।
অন্যদিকে ১৭ বছরের ইয়ামাল যেন পরিণত খেলোয়াড়দের ভিড়েও নিজের জায়গাটা পাকা করে ফেলেছেন। ইউরো জিতিয়ে এসেছেন, বার্সেলোনার হয়ে পুরো মৌসুমই ছিলেন আলোচনায়। নেশনস লিগ জিতলে আরেকটি ট্রফি যোগ হবে তার সংগ্রহে। তবে ম্যাচ যতই রোনালদো বনাম ইয়ামাল মনে হোক, আসল লড়াইটা দলগত পারফরম্যান্সের যা একক নৈপুণ্যের চেয়ে বেশি।
পর্তুগালের দলে বদলের হাওয়া বইছে বেশ কিছু দিন ধরেই। রোনালদো এখনো দলে আছেন নেতা ও ফিনিশার হিসেবে, কিন্তু মূল ভারটা বহন করছেন জোয়াও ফেলিক্স, ভিটিনহা, রাফায়েল লেয়াও, বার্নার্দো সিলভা, আর রুবেন দিয়াসরা। তারা আর সম্ভাবনা নয়, এখন দলটার মেরুদণ্ড। কারিগরি দক্ষতা আর গতিময়তা- এই দুইয়ের মিশেলে পর্তুগাল এখন এক ভয়ংকর দল। সামনে রোনালদো থাকলেও আশপাশে যে সমর্থন দলটি পাচ্ছে, তাতে এটি হতে পারে ২০১৬ ইউরো জয়ের পর পর্তুগালের সবচেয়ে ব্যালান্সড দল।
স্পেনের দিকে তাকালে বোঝা যায়, তারা যেন আবার নিজেদের খুঁজে পেয়েছে। ইয়ামাল যতই আলো কাড়ুন, নিকো উইলিয়ামসের উত্থানও সমান গুরুত্বপূর্ণ। মাঝমাঠে রদ্রি দিচ্ছেন নিয়ন্ত্রণের ছাপ, আর রক্ষণে রবিন লে নরমঁ ও গ্রিমালদো গড়েছেন নির্ভরযোগ্য দেয়াল। এই স্পেন আর আগের মতো শুধু বল পজেশন নিয়েই পড়ে থাকে না। কখন আক্রমণ করতে হবে, কখন ধৈর্য ধরতে হবে- সব বোঝে তারা। এবং সবচেয়ে বড় কথা, বড় মঞ্চেও তারা তরুণদের ভরসা করতে ভয় পায় না।
বিজ্ঞাপন
রোনালদো সব দেখেছেন, সব জিতেছেন। কিন্তু এই ফাইনাল এখনো তার জন্য এক পরীক্ষা। অভিজ্ঞতার নয়, বরং মানিয়ে নেওয়ার। স্পেনের দ্রুতগতির রক্ষণ তাকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলতে পারে। তবে পর্তুগালকে জিততে হলে, হয়তো আবারও সেই এক মুহূর্তের জন্য তাকিয়ে থাকতে হবে রোনালদোর দিকে, একটা গোল, একটা হেড, কিংবা একটা দৌড়।
আর ইয়ামালের জন্য এটা আরেকটা বড় মাইলফলক। তাকে নতুন করে কিছু প্রমাণ করতে হবে না। শুধু নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলে যেতে হবে- চাপমুক্ত, মুক্তমনে।
এই নেশনস লিগ ফাইনাল আসলে শুধু রোনালদো বনাম ইয়ামাল নয়। এটা আন্তর্জাতিক ফুটবলের নতুন ধারার প্রতিফলন। দুই দলই নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে, এবং তারা প্রমাণ করছে যে প্রজন্ম বদল মানেই সব কিছু শুরু থেকে শুরু করা নয়। কখনও কখনও সেটা মানে হয় আরও দ্রুত উন্নতি করা।

