শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কোহলির শেষ রাজ্য জয়ের উপাখ্যান

সালমান ইসলাম
প্রকাশিত: ০৪ জুন ২০২৫, ০১:২৪ এএম

শেয়ার করুন:

কোহলির শেষ রাজ্য জয়ের উপাখ্যান

তিনি কাঁদলেন। এক ফোঁটা, দুই ফোঁটা নয় পুরো চোখ ভিজে গেল। আনন্দে, স্বস্তিতে, পরম তৃপ্তিতে। বিরাট কোহলি যখন কান্নায় ভেঙে পড়েন, তখন শুধু তিনি নয়; একটা জাতি কাঁদে, এক দলভক্তদের চোখে জল আসে। ক্রিকেটের এক রাজা, যার ঝুলিতে ছিল সব কিছু, কিন্তু ছিল না আইপিএলের ট্রফি। অবশেষে এল সেই কাঙ্ক্ষিত জয়, আর সঙ্গে এল শত শত রাতের ঘুমহীন স্বপ্নপূরণের কান্না।

২০১৩ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন বিরাট কোহলি। তখন থেকেই শুরু হয়েছিল এক অনন্ত সাধনার পথচলা। কেটে গেছে ১১টি আসর, বহুবার সম্ভাবনা জেগেছে, কিন্তু শেষ অবধি স্বপ্নটা ফসকে গেছে। ১৮ তম মৌসুমে এসে, শেষবারের মতো যেন ক্রিকেটের দেবতারা বললেন, 'এবার ওর সময়।'


বিজ্ঞাপন


আহমেদাবাদের স্টেডিয়ামে তখন ফাইনালের শেষ ওভার। পাঞ্জাব কিংসের শশাঙ্ক সিং একের পর এক ছক্কা হাঁকিয়ে যেন পুরো ম্যাচটাই বদলে দিতে চাইছিলেন। আর স্টেডিয়ামের এক কোনায়, বসে ছিলেন কোহলি। চোখে একরাশ দুশ্চিন্তা, মুখে বিশ্বাসের রেখা।

FB_IMG_1748978304563

শেষ পর্যন্ত জয় নিশ্চিত। ছয় রানে জয় পেল আরসিবি। স্টেডিয়াম যেন মুহূর্তেই লাল-কালো সাগরে পরিণত হলো। আর কোহলি? তিনি দাঁড়িয়ে পড়লেন। হাত উঁচু করলেন। এরপর চোখে জল। এক রাজা শেষ রাজ্য জয় করলেন।

উৎসবের মুহূর্তে কোহলির চোখ গেল গ্যালারিতে থাকা এবি ডি ভিলিয়ার্সের দিকে। একসময় এই বেঙ্গালুরুর সবচে বড় দুই স্তম্ভ ছিলেন তারা। বারবার চেষ্টা করেও দুজনের হাতেই শূন্য থেকে গিয়েছিল ট্রফির ছোঁয়া। এবারে, এবি গ্যালারিতে আর কোহলি মাঠে। এ যেন অসমাপ্ত প্রেমের পরিণতি। একসঙ্গে  না হলেও, ভালোবাসার সেই গল্পের আজ পরিণতি হলো।


বিজ্ঞাপন


এ জন্য হয় তো আজ আবেগি কন্ঠে ম্যাচ শেষে সঞ্চালনাকে কিং কোহলি  মনে করিয়ে দিলেন বেঙ্গালুরু তার হৃদয়ে একাংশ। 'আমার হৃদয় বেঙ্গালুরুর জন্য, আমার আত্মা বেঙ্গালুরুর জন্য... আইপিএলে আমি শেষ দিন পর্যন্ত এই দলের হয়েই খেলব।'

FB_IMG_1748976300404

হ্যাঁ, আজ ম্যাচে কোহলির মন্তর বেটিং নিয়ে অনেক প্রশ্ন! কেন ৩৫ বলে ৪৩ করলেন। কিন্তু এটিই ছিল সেই ইনিংস, যা ভিত গড়ে দিলো। পুরো আসর জুড়ে যখন স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রশ্নই ওঠেনি, তখন এই ইনিংস বুঝিয়ে দিলো; সময় বুঝে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া নামই বিরাট কোহলি। তিনি জানতেন এটা হাই স্কোরিং ম্যাচ নয়। এই উইকেটে লড়তে হয়, লড়েছেনও ঠিক তাই।

২০২৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে এই একই মাঠে ভারত হেরেছিল। সেই দিন কোহলি করেছিলেন শতক, হয়েছিলেন প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট, কিন্তু ট্রফি ছিল না তার হাতে। এবার সেই একই মাঠ তাকে ফিরিয়ে দিলো তার সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ট্রফি।

ক্রিকেটে যা জেতা যায়, বিরাট কোহলি তা জিতেছেন। বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল, ব্যাটারদেত সব রেকর্ড। বাকি ছিল শুধু একটি শিরোপা, আইপিএল। সেটিও এবার তার।

এই গল্প কেবল পরিসংখ্যানের নয়। এক রাজা, যিনি সিংহাসনে বসেও অসম্পূর্ণ ছিলেন, অবশেষে নিজেকে সম্পূর্ণ করলেন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর