টেনিস বিশ্বের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী আসর ‘উইম্বলডন’ চলছে প্রায় ১৫০ বছর ধরে। এত দীর্ঘ সময়ের এই টুর্নামেন্টে নানা রকম মজার আর অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটেছে। তবে ১৯৯৬ সালের ‘স্ট্রিক’ কাণ্ডকে এখনো বলা হয় সবচেয়ে আলোচিত ও মজার মুহূর্ত।
সেদিন উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টে দাঁড়িয়ে ছিলেন ফাইনালিস্ট দুই টেনিস তারকা রিচার্ড ক্রাইচেক ও মালিভাই ওয়াশিংটন। ম্যাচ শুরুর আগে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, ছবি তুলছিলেন। কিন্তু দিন শেষে ‘সেরা স্ট্রিক’-এর খেতাবটা গেল তাদের কারও কাছে নয়, ছিনিয়ে নিলেন লন্ডনের এক তরুণী শিক্ষার্থী মেলিসা জনসন।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন- কাকাকে ব্রাজিল দলে ফেরাচ্ছেন আনচেলত্তি!
আরও পড়ুন- স্কালোনির পছন্দে মেসি নেই, রয়েছেন যে তিন ফুটবলার!
মেলিসা ছিলেন ওই সময় উইম্বলডনের এক খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মকালীন কর্মী। ছুটির সময়ে কাজ করছিলেন ক্যাটারিংয়ে। বিশ্রামের সময় হুট করেই লাফিয়ে সেন্টার কোর্টে ঢুকে পড়লেন তিনি। গায়ে তখন শুধুই একটা ছোট কিচেন এপ্রোন। সেটাও মাঠে দৌড়ানোর সময় কোনো কাজেই আসেনি।
উইম্বলডনের অতিথিদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ড্রেস কোড না থাকলেও, ‘স্মার্ট’ পোশাকে উপস্থিত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে জনসন সেই নিয়ম মানেননি, বরং পুরো পরিস্থিতিকে রীতিমতো মাথায় নিয়েই নেমে পড়লেন দৌড়ে।
বিজ্ঞাপন

জনসন দৌড় দিয়ে পুরো কোর্ট পেরিয়ে যান, মুখে তখন বড় এক হাসি। খেলার দুই প্রতিযোগীকেই একটা ‘বিশেষ দৃশ্য’ উপহার দেন তিনি। এরপর রাজকীয় গ্যালারির সামনেও গিয়ে সেই এপ্রোনটা তুলেন। পরে নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে সরিয়ে নিয়ে যান।
সেদিন উইম্বলডনের ফাইনাল দেখতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ১৪ হাজার দর্শক। মেলিসার এমন কাণ্ডে তারা অনেকেই হয়ে যান হতবিহ্বল, তবে অনেকেই আবার এতে মজাও খুঁজে পেয়েছেন।এদিকে সেদিনের ফাইনালে তখন গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন কেন্টের ডিউক-ডাচেস এবং প্রিন্স-প্রিন্সেস অফ কেন্ট। রাজকীয় অতিথিদের জন্যও এমন দৃশ্য বেশ বিব্রতকর ছিল তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে!
এমন ঘটনায় দুই ফাইনালিস্টও একটুখানি হাসাহাসি করেন। ঘটনার পর উইম্বলডন ক্লাব এক বিবৃতিতে জানায়, “আমরা এমন কিছু সমর্থন করি না, তবে টানা খারাপ আবহাওয়ার কারণে বিরক্ত হয়ে থাকা দর্শকদের জন্য এটা কিছুটা আনন্দের খোরাক ছিল।”
এরপর ম্যাচ শুরু হয়, আর শিরোপার অভিযান শেষে ক্রাইচেক হয়ে যান ইতিহাসের প্রথম ডাচ খেলোয়াড় যিনি উইম্বলডন জেতেন। আর পরাজিত ওয়াশিংটন দোষ দেন সেই স্ট্রিকারের কাঁধেই! পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বলেন, “আমি হঠাৎ দেখি, একটা স্ট্রিকার! সে এপ্রোনটা তোলে, আমার দিকে তাকিয়ে হাসে। আমি তখন পুরোপুরি বিভ্রান্ত! তিন সেটের মধ্যেই বিদায়... মজার ঘটনা, কিন্তু!” পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ওটাই ছিল ম্যাচের সবচেয়ে আলোচিত মুহূর্ত!”

মেলিসা এ ঘটনা নিয়ে পরে বলেন, আগেই সহকর্মীদের জানিয়েছিলেন এমন পরিকল্পনার কথা। ইউনিফর্ম খুলে শুধু এপ্রোন পরেই কোর্টে দৌড়াবেন। “সবার কাছ থেকেই উৎসাহ পেয়েছিলাম,” বলেন তিনি। তবে শেষে যোগ করেন, “চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা আমারই ছিল। এমন কিছু আগে হয়নি, হতেই হতো, তাই করলাম।”
তিনি বলেন, “খেলোয়াড়রা যখন মাঠে নামল, মনে হলো, এখন না হলে আর কখনো নয়। তাই দৌড় দিলাম। লজ্জা পাইনি একটুও। আসলে একটা জামা পরার কথা ছিল, পরে ভাবলাম- এপ্রোনই ভালো।”
টেনিসের বিশ্বমঞ্চে এমন অনেক মজার এবং বিব্রতকর ঘটনাই ঘটতে দেখা গেছে। তবে ১৯৯৬ সালের উইম্বলডনের মাঠে মেলিসার করা এই কাণ্ড বেশ আলোচিত।

