একটা সময় ছিল, যখন আমির সোহেল মাঠে ব্যাট হাতে দাঁড়ালেই প্রতিপক্ষ বোলারদের মুখে চিন্তার ভাজ জমে উঠত। তার আত্মবিশ্বাসী এবং ভয়ডরহীন খেলা নিয়ে, বিপক্ষ দলের জন্য বাঁহাতি এই ওপেনার ছিলেন পাকিস্তানের ইনিংসের প্রথম ধাক্কা। তবে ক্যারিয়ারের শেষ দিকে, আরেকটি ইনিংস শুরু করেন আমির, সঠিক সময়ে সঠিক প্রশ্ন তোলার ক্ষমতা। তিনি ছিলেন একজন ওপেনার, একজন অধিনায়ক, কিন্তু সবচেয়ে বড় পরিচয়; একজন সাহসী হুইসেল ব্লোয়ার।
১৯৬৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর, লাহোরে জন্ম নেওয়া মোহাম্মদ আমির সোহেল আলী আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রবেশ করেন ১৯৯০ সালে। টেস্ট এবং ওয়ানডে মিলিয়ে প্রায় ২০০ ম্যাচ খেলেছেন। ৪৭টি টেস্টে ২৮২৩ রান এবং ১৫৬টি ওয়ানডেতে ৪৭৮০ রান সংগ্রহ করে প্রমাণ করেছিলেন, তিনি পাকিস্তান দলের মেরুদণ্ড।
বিজ্ঞাপন
বিশেষ করে ১৯৯২ বিশ্বকাপে তার ব্যাটিং দলকে একাধিকবার টেনে তোলে। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে সোহেলের সেই ‘আঙুল তোলা’ ইশারা আজও ক্রিকেট ইতিহাসের আলোচিত দৃশ্য। কিন্তু ইতিহাস তাকে মনে রাখে আরও বড় একটি কারণে, তিনি ছিলেন সেই বিরল ক্রিকেটার, যিনি যখন অন্য সবাই মুখ বুজে ছিল, তখন সামনে এসে বলেছিলেন, ‘এই খেলার ভিতরে কিছু পচন ধরেছে।’
‘খেলায় টাকার প্রভাব যত বাড়ছে, নৈতিকতার প্রশ্ন তত জটিল হয়ে উঠছে,’ সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে বলেন আমির সোহেল। ক্রিকেটে যখন থেকে বড় অর্থ আসতে শুরু করল, তখন পাল্লা দিয়ে বেড়াল ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মতো নোংরা ঘটনা। অনেকেই চুপ ছিলেন।
কিন্তু আমির ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি মুখ খুললেন। নব্বই দশকে পাকিস্তান ক্রিকেটে চলা ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে তিনিই প্রথম কজনের মধ্যে ছিলেন, যিনি নাম ধরে ধরে অভিযোগ তুলেছিলেন।
বিজ্ঞাপন
ইএসপিএন ক্রিকইনফোর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, দুর্নীতি নিয়ে সে সময়ে সোহেলের বক্তব্য পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ও আইসিসিকে নাড়া দেয়। পরবর্তীতে সে নব্বই দশকে সেলিম মালিকসহ একাধিক ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। আর সে সময় থেকে এক সাহসী হুইসেল ব্লোয়ার হিসেবে তার নাম ইতিহাসে গেঁথে যায়।

খেলা ছেড়ে দেওয়ার পরও অবশ্য চুপ থাকেননি সাবেক পাকিস্তান এই তারকা। ক্রিকেট বিশ্লেষক, ধারাভাষ্যকার এমনকি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। মাঠের বাইরেও পাকিস্তানি ক্রিকেটকে গঠনমূলকভাবে এগিয়ে নিতে চেয়েছেন।
আমির সোহেল শুধুই একজন সাবেক ক্রিকেটার নন। তিনি সেই বিরল কণ্ঠ, যিনি অন্যায় দেখে মুখ ফিরিয়ে নেননি। আজ যখন ক্রিকেট আরও বেশি কর্পোরেট, আরও বেশি রাজনৈতিক; তখন সোহেলের মতো ব্যক্তিত্ব মনে করিয়ে দেন, সাহস আর সততারও একটা আলাদা ইনিংস আছে।

