সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

শুধু ট্রফি নয়, ভবিষ্যতও নির্ধারণ করবে বার্সা-রিয়ালের এল ক্লাসিকো

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২৯ পিএম

শেয়ার করুন:

শুধু ট্রফি নয়, ভবিষ্যতও নির্ধারণ করবে বার্সা-রিয়ালের এল ক্লাসিকো

ফুটবল মানেই এক রকম নাটক। কখনো বিজয়ের উল্লাস, কখনো করুণ পরিণতি; কখনো স্বপ্ন, কখনো ব্যর্থতা। আর ঠিক মঞ্চের পর্দা ওঠার আগের সেই নিস্তব্ধ উত্তেজনার মুহূর্তে এখন দাঁড়িয়ে আছে বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ।

মৌসুমের গুরুত্বপূর্ণ সমাপ্তির পথে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী সামনে আসছে মুখোমুখি দুইটি লড়াই। আগামী শনিবার সেভিয়ায় কোপা দেল রে ফাইনাল দিয়ে শুরু রিয়াল-বার্সার মুখোমুখি লড়াই, এরপর ১১ মে মনজুইকে লিগের শেষ এল ক্লাসিকো। এই দুই ম্যাচ শুধু স্প্যানিশ দুই জায়ান্ট ক্লাবের ট্রফি নয়, দুই ক্লাবের ভবিষ্যতের দিকও নির্ধারণ করে দিতে পারে।


বিজ্ঞাপন


বার্সেলোনার জন্য এটা নতুন করে নিজেদের প্রমাণের সুযোগ। সমালোচকদের বার্তা দিতে চাইবে কাতালান ক্লাবটি যে 'বার্সেলোনা এখনো মরেনি'। আর রিয়াল মাদ্রিদের জন্য সম্ভবত এটি হতে চলেছে একটা অধ্যায়ের শেষ মুহূর্ত।

নিজেদের ফিরে পেয়েছে বার্সেলোনা
বার্সেলোনা দীর্ঘদিন রিয়ালের মতো ধারাবাহিক আর অনিবার্য সফলতা খুঁজছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা মিলছিল না। এ মৌসুমে পরিস্থিতি বদলেছে। হান্সি ফ্লিকের নেতৃত্বে বার্সা আবার নিজেদের পরিচয় খুঁজে পেয়েছে। ফলাফল নয়, ফুটবলের সৌন্দর্যকেই গুরুত্ব দিয়েছে তারা।

মায়োর্কার বিপক্ষে গত সপ্তাহের ম্যাচে, একাদশে সাতটি পরিবর্তন থাকা সত্ত্বেও দলটি ৪০টি শট নেয় যা সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আধিপত্য দেখানো পারফরম্যান্স। একটাই গোল হয়েছে, তবে দলের লক্ষ্য ও পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আসেনি।

ফ্লিক শুধু কৌশলগত দিকেই নয়, আবেগিক দিক থেকেও দলটিকে গুছিয়ে এনেছেন। খেলোয়াড়দের অহমিকা ও প্রত্যাশা তিনি চমৎকারভাবে সামলাচ্ছেন। যেমন, সেল্টার বিপক্ষে বেঞ্চে থাকার ক্ষোভ যারা দেখিয়েছিল (ফেরান তোরেস, হেক্টর ফোর্ট, আনসু ফাতি), তাদের পরের ম্যাচেই মাঠে নামিয়েছেন। শাস্তি নয়, এটা ছিল দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর বার্তা।


বিজ্ঞাপন


এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই সেভিয়ায় যাচ্ছে বার্সা, প্রায় পুরো স্কোয়াড সতেজ এবং একদিন বেশি বিশ্রামের সুবিধা নিয়ে।

লেভান্ডভস্কির অনুপস্থিতিতে নতুন তারকাদের জ্বলে ওঠার সুযোগ
দানি ওলমো এ মৌসুমের একমাত্র বড় চুক্তি। চোটের কারণে শুরুতে আলোচনার বাইরে থাকলেও ২৭ ম্যাচে ১৩টি গোল-অ্যাসিস্টে তিনি নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন। লেওয়ানডস্কি না থাকায় ওলমোর বুদ্ধিদীপ্ত মুভমেন্ট দলের জন্য বড় হাতিয়ার হতে পারে।

ফেরান তোরেসও এখন দারুণ ছন্দে। ক্লাসিকাল নাম্বার নাইন না হলেও ফ্লিকের সিস্টেমে সেটাই তার শক্তি। তিনি কোপার যৌথ সর্বোচ্চ গোলদাতা (৫ গোল)। আর ১৭ বছরের লামিন ইয়ামাল? তার খেলা কেবল আত্মবিশ্বাস নয়, একেবারে নির্ভীকতার প্রতিচ্ছবি। রাফিনিয়াও দুর্দান্ত ছন্দে আছেন, লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলিয়ে ২৭ গোল ও ১৬ অ্যাসিস্ট করে ব্যালন ডি'অরের অন্যতম দাবিদার হয়ে উঠেছেন।

রিয়ালের জন্য মান বাঁচানোর লড়াই
রিয়াল মাদ্রিদের জন্য এই ফাইনাল সম্মান বাঁচানোর সুযোগ। জুড বেলিংহ্যাম এখন শুধু তারকা নন, দলের প্রতীক। তবে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও কিলিয়ান এমবাপ্পের মতো ফরোয়ার্ডরা রক্ষণে তেমন সহায়তা না করায় দলের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। ফলে বেলিংহ্যামকেই করতে হচ্ছে অতিরিক্ত পরিশ্রম। ভিনিসিয়ুস ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা ছন্দহীন হলেও বড় ম্যাচে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার ক্ষমতা দেখিয়েছেন।

লিগে মাত্র ৪ পয়েন্ট ব্যবধান থাকলেও বার্সা আগের দু'বার রিয়ালকে বিধ্বস্ত করেছিল— প্রথমে ৪-০ (২৬ অক্টোবর), পরে স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে ৫-২ (১২ জানুয়ারি)। এমন ফলাফল রিয়ালের মতো ক্লাবের কাছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। সেভিয়ার ফাইনাল তাই তাদের জন্য আত্মবিশ্বাস ফেরানোর সুযোগ।

আনচেলত্তির শান্ত মুখের আড়ালে চাপা হতাশা
কোচ কার্লো আনচেলত্তি তার ভবিষ্যত নিয়ে ধীরে ধীরে এগোচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, মৌসুম শেষে তিনি ব্রাজিল জাতীয় দলের কোচ হবেন। এরপর সাময়িকভাবে সান্তিয়াগো সোলারি দায়িত্ব নেবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে জাভি আলোনসো আসবেন।

তবে এখনই আনচেলত্তি কোনো সমঝোতায় যেতে নারাজ। তিনি বলেন, “আমি চাবুক হাতে নিয়ে কোচিং করাই না। মানুষ নিয়ে কাজ করি, রোবট নিয়ে নয়।” তবে ভেতরে ভেতরে এ মৌসুমে দলে ইগোর ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে অনেকবার হতাশ হয়েছেন তিনি।

পরিসংখ্যানও সেই চিত্র ফুটিয়ে তোলে। ৩২টি লিগ ম্যাচে মাত্র ১২টি ক্লিন শিট, সব মিলিয়ে পাঁচটির বেশি টানা জয় নেই। এখন তাদের সামনে মাত্র একটি পথ, টানা আটটি জয় ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

যাই হোক, সেভিয়ার ফাইনালই সব শেষ নয়। ১১ মে'র এল ক্লাসিকোতে লা লিগার শিরোপাও নির্ধারিত হতে পারে। সেদিন বার্সেলোনা যাবে এগিয়ে থেকে, আর রিয়াল যাবে হয়তো নায়ক হয়ে, নতুবা আহত অতিথি হিসেবে। কিন্তু সেটা তো আরেক রাতের গল্প!

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর