বিশ্ব ক্রিকেট সংস্থা আইসিসি নিজস্ব মোবাইল গেম চালুর পরিকল্পনা করছে। সম্প্রচারের সত্ত্বমূল্যে সম্ভাব্য মন্দার আশঙ্কায় বিকল্প আয়ের উৎস খুঁজতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যদিও ক্রিকেট গেমিং-এর ইতিহাস বেশ পুরনো, তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এটি হবে আইসিসির নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি প্রথম গেম।
আজ (সোমবার) হারারেতে শুরু হওয়া আইসিসির বোর্ড মিটিংয়ে চিফ এক্সিকিউটিভ কমিটির সামনে আইসিসির ডিজিটাল টিম এই প্রস্তাব পেশ করবে। কয়েকটি বৈঠকে আলোচনার পর এবার সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অনুমোদন পেলে গেম তৈরির জন্য ডেভেলপারদের কাছে টেন্ডার আহ্বান করবে সংস্থাটি। প্রাথমিকভাবে এটি মোবাইল প্ল্যাটফর্মের জন্য তৈরি হবে।
বিজ্ঞাপন
গেমিং দুনিয়ায় একসময় ইএ স্পোর্টস-এর ‘ক্রিকেট’ সিরিজ কিংবা কডমাস্টার্সের ‘ব্রায়ান লারা ক্রিকেট’ ছিল জনপ্রিয়। ১৯৮০-এর দশক থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু মোবাইল ক্রিকেট গেমও দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে আইসিসির সরাসরি মালিকানাধীন একটি গেম চালু হলে সেটি হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
কিন্তু শুধু পরিকল্পনা করলেই হবে না, গেম তৈরির ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে ‘নেম, ইমেজ অ্যান্ড লাইকনেস’ (এনআইএল ) অধিকার নিয়ে। ২০০৭ সালে EA Sports ক্রিকেট সিরিজ বন্ধ করে দেওয়ার পেছনে এই লাইসেন্স জটিলতাই ছিল অন্যতম কারণ। অনেক সময় কিছু দলের নাম ঠিক থাকলেও ভারতের মতো দলের খেলোয়াড়দের নাম থাকতে দেখা যেত কাল্পনিক!
আইসিসি টুর্নামেন্ট চলাকালে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর জন্য এনআইএল অধিকার নিশ্চিত করে। তবে বাইরের কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজ, ঘরোয়া কিংবা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ—এসবের অধিকার সংস্থার আওতায় পড়ে না। ফলে যদি গেমে জাতীয় দল, টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি কিংবা ঘরোয়া দলগুলোও থাকে, তাহলে আইসিসিকে আলাদা করে বোর্ড ও খেলোয়াড়দের সংস্থাগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে হবে।
বিশ্ব ক্রিকেটারদের সংগঠন ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্প্রতি উইনার্স অ্যালায়েন্স–এর সঙ্গে চুক্তি করেছে, যারা এই ধরনের বাণিজ্যিক চুক্তি পরিচালনা করবে। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়রা এই সংগঠনের সদস্য। যদিও ক্রিকেটারদের এ সংগঠন আইসিসির পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত, তারা এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে গেমিং-এনআইএল অধিকার নিয়ে বোর্ড ও খেলোয়াড়দের মধ্যে বিরোধের খবর প্রকাশ পেয়েছে। রিয়েল ক্রিকেট অ্যাপে খেলোয়াড়দের ছবি ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে এই দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। নিউজিল্যান্ড বোর্ড এর মধ্যেই ভারতের একটি অ্যাপের সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেছে, যেখানে আগে থেকেই ক্রিকেটারদের সংগঠন অ্যালায়েন্সের মাধ্যমে একাধিক খেলোয়াড় এনআইএল অধিকার দিয়ে রেখেছেন।
সব মিলিয়ে, আইসিসির গেম চালুর পরিকল্পনা আকর্ষণীয় হলেও, মাঠে গড়ানোর আগে অনেক জটিলতা সামনে রয়েছে। বিশেষ করে খেলোয়াড়দের নাম-ছবি ব্যবহারে বৈশ্বিক সমন্বয়ের বিষয়টি। তবে অনুমোদন পেলে, ক্রিকেটভক্তদের জন্য এটি হতে পারে নতুন এক ডিজিটাল অভিজ্ঞতা।