২৩ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাব হয়েছিল উইল পুকোভস্কি। আর ২৭ বছরেই ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন অস্ট্রেলিয়ার তরুণ ক্রিকেটার পুকোভস্কি। অথচ ২০২১ সালে ভারতের বিপক্ষে সিডনি টেস্টে ৬২ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন তিনি। মনে করা হচ্ছিলো এই উইল টেস্টে অজিদের ওপেনিংয়ে পাকা জায়গা করে নিতে এসেছেন। সেই ম্যাচটা তার শেষ হয়ে গিয়েছিল কাঁধের চোটে। তবে মূল সমস্যা সেটা নয়। কাঁধের ওই চোটটা তার ক্যারিয়ারে ‘ব্যতিক্রম’ই হয়ে এসেছিল।
তার ক্যারিয়ারজুড়ে মূল সমস্যা হয়ে ছিল মাথায় বল লাগা। ২০১৯ সাল থেকে সব ধরনের ক্রিকেটে কনকাশন সাব নিয়ম প্রচলন ঘটার পর থেকে সবচেয়ে বেশি কনকাশন সাব হয়েছে এই উইল পুকোভস্কির জন্যই। কেন, কীভাবে তার মাথাতেই বল লাগে, সেটা এক গবেষণার বিষয়ই বটে। সব মিলিয়ে ১৩ বার বল লেগেছে তার মাথাতে। অবশেষে এবার সে কারণেই মোটে ২৭ বছর বয়সে পুকোভস্কি ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
উইল পুকোভস্কি মঙ্গলবার মেলবোর্নের একটি রেডিও স্টেশনে সাক্ষাৎকারে বলেন,“আমি ক্রিকেটকে সবকিছু দিয়েছি, কিন্তু বারবার মাথায় আঘাত পাওয়ার পর বুঝেছি—এটা আমার শরীরের জন্য আর সম্ভব নয়। আমি জানি, আমার এই সিদ্ধান্তে অনেকেই হতাশ হবে, কিন্তু আমার কাছে এটা এখন জীবন-মরণের প্রশ্ন। আমি আর ক্রিকেট খেলতে পারবো না।”
তিনি আরও বলেন,“খেলাটা আমার জীবনের ভালোবাসা ছিল। ১৫ বছর ধরে আমি স্বপ্ন দেখেছি, দেশের হয়ে খেলব, ম্যাচ জিতব, ইতিহাস গড়ব। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। গত এক বছরে আমার অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যেখানে সকালেই ঘুম থেকে উঠতে পারতাম না, হেঁটে বেরোতে কষ্ট হতো। প্রতিদিন মাথাব্যথা, ক্লান্তি, বমি ভাব – এগুলো সহ্য করা আমার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।”
চিকিৎসক প্যানেল তাকে খেলা ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেয়। সব দিক বিবেচনা করেই পুকোভস্কি সিদ্ধান্ত নেন, “আমি চাই না জীবনের বাকি অংশটা বিছানায় পড়ে কাটাতে হোক। ক্রিকেট আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে, কিন্তু এখন সময় এসেছে নতুন পথে এগিয়ে যাওয়ার।”
“আমি কৃতজ্ঞ, আমি গর্বিত—যদিও ভেঙে পড়েছি, তবুও আমি জানি আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়েছি। এখন আমি এমন একটা জীবন চাই যেখানে সুস্থভাবে বাঁচতে পারবো,” মাত্র ২৭ বছর বয়সেই ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে এই কথাগুলো বলে যেন কাঁপিয়ে দিলেন হাজারো ক্রিকেটপ্রেমীর হৃদয়।
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘ সময় ধরে চলা মাথার চোটের কারণে শুধু ক্রিকেট নয়, পুকোভস্কির ব্যক্তিজীবনেও নেমে আসে এক অভিশপ্ত অস্থিরতা। তিনি জানান, “সত্যি বলতে, আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন বছর ছিল এটা। চোট পাওয়ার কয়েক মাস পর ঘরের ভেতর হেঁটে বেড়ানো পর্যন্ত কষ্ট হতো। আমার বাগদত্তা বিরক্ত হতো কারণ আমি কোনো ঘরের কাজেই সাহায্য করতে পারতাম না। সারাক্ষণ ঘুমাতাম।”
এই মানসিক ও শারীরিক সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে পুকোভস্কি বলেন, “বিষয়টা অনেক জটিল। এর মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যাগুলো তো আছেই, কিন্তু ক্লান্তিও খুব বেশি। নিয়মিত মাথাব্যথা হয়। আমার শরীরের বাঁদিকে কোনো কিছুর গতি থাকলে আমি অসুস্থ অনুভব করি, মাথা ঘোরে। মোশন সিকনেস খুব বেশি হয়। সব মিলিয়ে, মাত্র ২৭ বছর বয়সেই আমি এমন একটা অবস্থায় পৌঁছে গেছি, যেখানে স্বাভাবিক জীবনযাপনও কঠিন হয়ে পড়েছে।”

