চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্সের পর থেকেই আলোচনায় বাংলাদেশ দলের দুই সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এমনকি আগামী বিশ্বকাপের পরিকল্পনায় তা থাকবেন কিনা বা তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হবে কিনা- এসব নিয়েও চলছিল আলোচনা। তারই মাঝে হুট করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবসরের ঘোষণা দিলেন মুশফিক। ওয়ানডে ফরম্যাটে লাল সবুজ জার্সিতে আর কখনো তাকে দেখা যাবে না তাকে।
বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবেগঘন বার্তায় ১৯ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের ইতি টানেন টাইগার এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। ‘আলহামদুলিল্লাহ, যখনই দেশের হয়ে মাঠে নেমেছি, শতভাগের বেশি দেওয়ার চেষ্টা করেছি,’—এমনই অনুভূতির কথা জানিয়ে মুশফিক নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই ঘোষণা দেন।
বিজ্ঞাপন
তার বিদায়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন দীর্ঘদিনের সতীর্থরাও। উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের বিদায়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তামিম ইকবাল, মাশরাফি বিন মুর্তজা, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাসকিন আহমেদ ও তাওহীদ হৃদয়সহ এক সময়ের সতীর্থরা।
তামিম ইকবাল বলেন, ‘আজ এমন একজন ব্যক্তি অবসর নিল যার সঙ্গে আমার অলমোস্ট ২০ বছর বা ২৫ বছর একটা জার্নি। একটা স্ট্যাটাসে আসলে আমি মানুষকে বোঝাতে পারব না যে আমার ফিলিংসটা তার প্রতি। আপনারা সবাই জানেন যে কিছুক্ষণ আগে মুশফিক ওয়ানডে ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছে। মুশফিককে আমি এতটুকুই বলছি যে তোর সাথে আমার খেলা শুরু অনূর্ধ্ব ১৫ থেকে। কেমনে একটা ছেলে এতটা কষ্ট করতে পারে। একটা মানুষের পক্ষে যতটা কষ্ট করা সম্ভব আমার মনে হয় সে সবটুকুই করেছে।’
খেলার প্রতি মুশফিকের ডেডিকেশন নিয়ে তামিম বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে অনেক সময় হাসাহাসি করি যে এত কষ্ট করে কীভাবে বা তার ডেডিকেশন খেলার প্রতি, ভালোবাসা। এটা কথায় কোনো দিন বোঝাতে পারব না। আজকে ওর খেলা ছেড়ে দেওয়া কত কষ্টকর আমি যেহেতু ওর কাছের একজন বন্ধু আমি এই জিনিসটা ফিল করতে পারি। যে এটা খুব কঠিন তার জন্য। একটা ফরম্যাটে ক্রিকেটার হিসেবে তো আমি এটা আশা করব যে ১০০তম টেস্ট অবশ্যই খেলবি তুই।’
মাশরাফি অতীতের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘তোমার বিদায়ের ঘোষণায় এক লহমায় অনেক কিছু ভেসে উঠল চোখে। এত বছরের একসঙ্গে পথচলা, মাঠের ভেতরে-বাইরে কতশত স্মৃতি! ওয়ানডেতে তোমার রেকর্ডই তোমার হয়ে স্বাক্ষ্য দেবে অনেক কিছুর। তোমার ব্যাটের দ্যুতিতে কত আলোর দিন এসেছে দেশের ক্রিকেটে! তবে রেকর্ড বইয়ে লেখা থাকবে না, কতটা নিবেদন আর নিষ্ঠায় তুমি ক্যারিয়ার গড়েছিলে, কতটা ঘামের স্রোত পেরিয়ে সাফল্যের তীর ছুঁয়েছিলে। তোমার পরিশ্রম, প্রতিজ্ঞা আর ত্যাগের গল্প বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রজন্মের পর প্রজন্মে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।’
বিজ্ঞাপন
ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানিয়ে ম্যাশ লেখেন, ‘আশা করি, সাদা পোশাকের বাকি অধ্যায়টুকু রঙিন করে তুলবে। তোমার ব্যাটে অভিজাত সংস্করণে দেশের ক্রিকেট সমৃদ্ধ হবে আরও…’
তাসকিন লেখেন, ‘একটি অধ্যায় শেষ হলো! মুশি ভাই, আপনাকে ছাড়া বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট কল্পনা করা কঠিন। আপনার প্যাশন, ডেডিকেশন, ফাইটিং স্পিরিট সবকিছুই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। আপনার সাথে মাঠ শেয়ার করতে পারা এবং শিখতে পারা আমার জন্য দারুণ সম্মানের ব্যাপার ছিল। পরবর্তী অধ্যায়ের জন্য আপনাকে শুভকামনা – আপনার লিগ্যাসি সবসময় থাকবে।’
মুশফিকের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে শরিফুল লিখেছেন, ‘আমার কাছে আপনি সব সময়ই সেরা। ধন্যবাদ বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এতো সুন্দর সময় উপহার দেওয়ার জন্য। আপনার পরবর্তী জীবনের জন্য শুভকামনা।’
হৃদয় লিখেছেন, ‘বগুড়া স্টেডিয়ামে আপনি (মুশফিক) প্র্যাকটিস করছেন শুনে ছোটবেলায় আপনাকে দেখার আশায় স্টেডিয়ামের গেইটের গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা থেকে শুরু করে, ওডিআই - এর আন্তর্জাতিক ক্যাপ আপনার হাত থেকে গ্রহণ করা এবং একই ড্রেসিং রুম শেয়ার করা:- আমার কাছে রূপকথার গল্পের থেকে কম নয়‼ যদিও আমি বাকরুদ্ধ হয়ে আছি, তবুও আপনাকে অবসরের জন্য শুভকামনার বার্তা, আইডল মুশফিকুর রহিম। যেকোনো কিছুর চেয়ে এবং যে কারও চেয়ে বেশি মিস করব আপনাকে।’