শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ম্যারাডোনা চলে যাওয়ার তিন বছর

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

ম্যারাডোনা চলে যাওয়ার তিন বছর

১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আইরেসের সুবিধাবঞ্চিত এক এলাকা ভিয়া ফায়োরিতায় জন্ম নিয়েছিলেন ফুটবলের বিস্ময় জাগানো এক মহাতারকা ডিয়েগো ম্যারাডোনা। সেই ছোট বেলা থেকে ফুটবলকে ঘিরে স্বপ্ন ছিল যার। বিশ্ব ফুটবলে নিজের দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এই আর্জেন্টাইন না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন আজ তিন বছর হলো। 

নিজ দেশের কাব্যিক ইতিহাস রচনার নতুন সূর্যটি লিওনেল মেসির হাত ধরে যে ২০২২ সালে এসেছিল তা আর দেখে যেতে পারেন নি ফুটবলের ইতিহাসের এই মহাতারকা। ২০২০ সালের ২৫শে নভেম্বর বিশ্ব ফুটবলে ভেসে আসে শোকের এক সংবাদ। সবাইকে স্তব্ধ করে সেদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যান সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। তার প্রস্থানের পর বদলেছে তার দেশের ফুটবলের ইতিহাস। শুধু নিজ চোখে দেখতে পারেননি তার উত্তরসূরিদের মহাকাব্যিক সফলতা। 


বিজ্ঞাপন


ম্যারাডোনার ইতিহাস রচনার শুরুটা হয়েছিল ১৬ বছর বয়স থেকে। অল্প বয়সেই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে যান নিজের মেধা ও ফুটবল দক্ষতায়। ছোট দৈহিক গড়নের ছেলেটি ১৯৭৯ সালে জাপানে নিজ দেশের হয়ে অনন্য এক অর্জন বয়ে আনে। ১৯ বছর বয়সেই আর্জেন্টিনার হয়ে যুব বিশ্বকাপ জিতেন তিনি। যেখানে গোল্ডেন বলের খেতাবও উঠেছিল ম্যারাডোনার কাঁধে। সেবারই তার দেশ বুঝে গিয়েছিল ফুটবলের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে আসছেন নয়া এক তারকা। 

maradona_birthday_20231030_095312125

১৯৮২ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে নামেন ম্যারাডোনা। তবে সেবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখে শেষ হয় তার আসর। কিন্তু পরের বিশ্বকাপ ১৯৮৬ সালে মেক্সিকোতে ইতিহাস রচনা করেন তিনি। পুরো বিশ্বকে তার দুর্দান্ত নৈপুণ্য ও নেতৃত্বে তাক লাগিয়ে দেন। নিজ দেশকে দ্বিতীয়বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেন ম্যারাডোনা। 

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি ফুটবল জাদুকর। একে একে গড়েছেন নয়া বিস্ময়। নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন ফুটবল বিশ্বে। নিজ দেশ ছাড়িয়ে ইতালির নাপোলির ত্রাণকর্তা হয়ে যান। শত আধারের মাঝে আশির দশকের শেষে ইতালির নাপোলিকে জেতান লিগ ও ইউরোপিয়ান কাপ শিরোপা।


বিজ্ঞাপন


জুভেন্টাস-এসি মিলানদের মতো জায়ান্টদের ভিড়ে ইতালির নয়া সম্রাট হয়ে আবির্ভূত করেন তার ক্লাব নাপোলিকে। ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে মাত্র সাত বছর ফুটবল খেলেই তিনি সেই শহরটির দেবতা বনে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে তার ফুটবল দক্ষতা দিয়ে তিনি শহরের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ফিলিস্তিনের পক্ষেও কথা বলেছিলেন তিনি। নিজের ক্যারিয়ার জুড়ে তিনি অসহায়দের অধিকারের জন্যও কথার যুদ্ধে লড়েছিলেন বহুবার। 

ইতালির নাপোলসের মানুষের কাছে চিরকাল ম্যারাডোনা থাকবেন তাদের নিঃশ্বাসে, তাদের ভালোবাসায়। তবে ফুটবল এই জাদুকরের জীবনে সমালোচিত কাণ্ডও ছিল অনেক। 

১৯৯০ বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনাকে তুলেছিলেন ফাইনালে। তবে সেই আসরে ডোপ টেস্টে পজিটিভ হন এই ফুটবল কিংবদন্তি। ফলে ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরলেও স্বাভাবিক ছন্দে দেখা যায়নি ম্যারাডোনাকে। এরপর ১৯৯১ সালে ড্রাগসহ ধরা পড়েন নেপলসে। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কৃত হন ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে। ২০ বছরের আন্তর্জাতিক ও ক্লাব ক্যারিয়ারে আর্জেন্টাইন এই মহাতারকা মোট গোল করেছেন ৩৪৬টি। 

ক্যারিয়ারে কোচিংও করেছেন ম্যারাডোনা। ২০০৮ সালে ছিলেন মেসিদের কোচ। সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে হজম ৪ গোল হজম করে বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা। কোচ হিসেবে সফল না হলেও ম্যারাডোনা যে ছিলেন আর্জেন্টাইনদের আলোর দিশারি হয়ে। যা পরবর্তীতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্চছেন লিওনেল মেসি। 

messi_maradona_20231030_095252863

২০২০ সালে বুয়েন্স আইরেসের হাসপাতালের আইসোলেশনে থেকে ৬০তম জন্মদিন পালন করেন ম্যারাডোনা। তবে অনিশ্চিত এই পৃথিবীতে কেউ ভাবেনি অল্প বয়সে হার মানবেন ‘এল দিয়াগো’। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর মাত্র ৬০ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে না-ফেরার দেশে পাড়ি জমাবেন বিশ্বকাপজয়ী এ কিংবদন্তি। তার চলে যাওয়ার ঠিক দুই বছর পর আর্জেন্টিনাকে আবারো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেন লিওনেল মেসি। তার দেখানো পথেই ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেন মেসিরা। তারপর ক্যারিয়ারের অষ্টম ব্যালন ডি'অর জিতেন মেসি। 

তবে ফুটবল বিধাতার নির্মম পরিহাস ছিল কিংবদন্তি বেঁচে থেকে তার শিষ্যদের মহাকাব্য রচনা দেখতে পারেননি। তবুও তাঁর চলে যাওয়ার পরেও প্রতিটি সাফল্যে তাকেই স্মরণ করে ফুটবল বিশ্ব। মেসি তো তাঁর নিজের অষ্টম ব্যালন ডিঅর তাঁর মহানায়ককে ম্যারাডোনাকেই উৎসর্গ করেছেন। ‘এল দিয়াগো’ চলে যাওয়ার তিন বছর আজ পেরিয়ে গেলেও যতকাল ফুটবল থাকবে বেঁচে ততকাল তিনি থাকবেন ইতিহাসের অন্যতম এক তারা হয়ে। 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর