শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কাবাডির এক মহানায়কের নাম ‘টাইগার’ কবির

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪ আগস্ট ২০২৩, ১১:৩৫ এএম

শেয়ার করুন:

কাবাডির এক মহানায়কের নাম ‘টাইগার’ কবির

বাংলাদেশের কাবাডির এক মহানায়কের নাম ‘টাইগার’ কবির। কাবাডি খেলার জগতে যাকে সবাই চেনে ‘টাইগার’ নামে। বাবা-মা নাম রাখেন এনামুল কবির; কিন্তু দর্শকরা তাকে ভালোবেসে ডাকে ‘টাইগার’ নামে।  সেই ‘টাইগার’ কবিরের জানা-অজানা খেলোয়াড়ী জীবনের গল্প আজ শুনব।

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের দর্গাপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এনামুল কবির। হাজী মো. তোফাজ্জেল’র ১০ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সন্তান এনামুল কবির। বর্তমানে এনামুল কবির ওরফে ‘টাইগার’ খাজুরা তেলিধান্যপাড়ায় থাকেন।


বিজ্ঞাপন


শৈশবের কথা বলতে গিয়ে টাইগার কবির ঢাকামেইলকে  বলেন, ছোটবেলায় দাড়িয়াবান্ধা, গাদন, কুস্তি-কাবাডি, সাঁতার খেলার প্রতি নেশা ছিল। পড়াশোনা না করে খেলাধুলা করায় বাবা-মা অনেক বকাঝকা করত। বাবার ভয়ে অনেক সময় চাচার বাড়িতে লুকিয়ে থাকতাম। তবে আমার এসব খেলার চেয়ে কাবাডি খেলায় মন টানতো বেশি। কিশোর বয়সে বড় ভাইদের সঙ্গে কাবাডি খেলতে চাইলে, বড় ভাইরা তাচ্ছিল্য করত। কিন্তু তাদের কথা কানে না নিয়ে খেলার চেষ্টা করেছি। একটু একটু করে এলাকায় নামডাক হতে শুরু করে।

১৯৯৫ সালের দিকের কথা। তখনও ভালো করে দাড়ি-মোচ উঠেনি। একদিন সিমাখালির সিংড়াগ্রামের মামাবাড়ির এলাকায় কাবাডি টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। ওই ম্যাচে খুলনার নামিদামি বাঘা-বাঘা খেলোয়াড়রা সিংড়াগ্রামের হয়ে খেলেন। কিন্তু বিপরীত টিমে দুই গোল দিয়ে দেয়। মামারা বলে, ‘হেরে যখন যাচ্ছি ভাগ্নেকে নামাও’। খেলার শেষ কয়েক মিনিট আগে তারা আমাকে নামায়। তখন আমি নেমে দুই গোল দিয়ে ম্যাচ ড্র করি। দর্শকরা আমাকে ভালোবাসতে শুরু করে। ওই দিন ভালো খেলার কারণে দ্বিতীয় ম্যাচে মামাদের দলে  আমাকে নিলে খেলোয়াড়রা আর খেলবে না বলে দেয়। মামাদের দলের খেলোয়াড়রা অনেকটা বিদ্রোহ করতে থাকে। 

পরে মনের ক্ষোভে মামাদের দলের বিপরীতে ঝিনাইদহের পরিচিত খেলোয়াড় আসাদ (যাকে সবাই ‘ধলাপাহাড়’ বলে চিনে)। তাদের দলের হয়ে খেলতে যাই। এই ম্যাচে হাফ টাইমের আগে দুই দল দুইটি করে গোল দেয়। এই সময় দর্শকের চাপে ঝিনাইদহের হয়ে মামাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামি। মাঠে নেমেই দুই গোল শোধ করে আরও দুই গোল দিয়ে ঝিনাইদহ দলেকে জয়ী করি। তখন থেকে আমার নামডাক হয়ে গেল। ম্যাচ সেরা হওয়ায় চেয়ারম্যান একটা সিকো ফাইভ ঘড়ি দেয়। আমি ওই ঘড়ি ফিরিয়ে দিয়ে নিয়ে চেয়ারম্যানের কাছ থেকে পাঁচশ টাকার দুটি নোট নেই ।

ওই সময় এক হাজার টাকা উপহার পেয়ে খেলার প্রতি আমার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। এরপর একদিন নিজ গ্রাম যশোরের দর্গাপুর খেলা হয়। সেখানে খেলে নিজের গ্রামকে চ্যাম্পিয়ন করি। ওই দিন দর্শকরা বলে আমাদের কবির বাঘের মতোন খেলছে। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। যেখানে খেলেছি বাঘের মতো করে খেলেছি। সেই থেকে আমার নাম ‘টাইগার’ কবির হয়ে গেল। সবাই এখন টাইগার কবির বলেই চিনে। বাবা-মায়ের দেওয়া এনামুল কবির নাম হয়ে গেল ‘টাইগার’। তবে দর্শকরা বলে, খেলার সময় চেহারা অনেকটা বাঘের রূপ নেয়।


বিজ্ঞাপন


kabadi

তিনি আরও বলেন, ১৯৯৬-৯৭ সালের দিকে জাতীয় দলে চান্স পাই। দীর্ঘদিন খেলেছি জাতীয় দলে হয়ে। ৩৫ বছরে খেলোয়াড়ী জীবনে প্রায় সাড়ে চার হাজার ম্যাচ খেলেছি। এর মধ্যে জয়ী হয়েছি চার হাজার ম্যাচ। তবে খেলার জন্য সর্বোচ্চ ফি হিসেবে ঢাকার সাভারে মাঠে তিন লাখ টাকা নিয়েছি। আমি এখনও রানিং খেলোয়াড়, দেশের বহু জায়গায় খেলেছি। একই সঙ্গে ভারতে খেলেছি কয়েক শ ম্যাচ।

খাওয়া-দাওয়া বিষয়ে বলেন, জমিদার পরিবারে ছেলে ছিলাম। আগে গরুর মাংস ৭ থেকে ৮ সের (কেজি) খেতাম। এখন সেটা কমিয়ে ৩ থেকে ৪ কেজি করে খাই। প্রতিদিন ৫ কেজি করে দুধ পান করি। প্রতিদিন সকালে ব্যায়াম শেষে  ৫০০ গ্রাম ছোলা খাই। ২০ থেকে ২৫টি ডিম খাই। প্রতিদিন ২ থেকে আড়াই কেজি মধু খাই।

তবে অনেকে মনে করে মাঠে নামার আগে ‘টাইগার’ সরিষা তেল পান করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে বিষয়টি সেটা না; শরীরে তেজ আনার জন্য খেলার আগে ২ থেকে ৩ কেজি মধু পান করি। এতে শরীরে শক্তি তৈরি হয়।

ব্যক্তি জীবনে তিনি শখ বসে ঘোড়া লালন-পালন পছন্দ করেন বলে জানান।

ব্যক্তিগত জীবনে টাইগার কবিরের দুই ছেলে। বড় ছেলে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়াশুনা করে যশোর সরকারি এমএম কলেজে এবং ছোট ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশুনা করে। বিখ্যাত এই খেলোয়াড়ের স্ত্রী প্রয়াত।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর