রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ফাতেমা (রা.) ঘুমিয়ে পড়লে ফেরেশতারা কি তাঁর কাজ করে দিতেন?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ জুন ২০২৩, ১২:৫৯ পিএম

শেয়ার করুন:

ফাতেমা (রা.) ঘুমিয়ে পড়লে ফেরেশতারা কি তাঁর কাজ করে দিতেন?

ইসলামে নবী (স.)-এর বংশধর ও আত্মীয়-স্বজনের মর্যাদা অনেক বেশি। আর ফাতেমা (রা.) হলেন প্রিয়নবী (স.)-এর কন্যা। তাঁর চরিত্র,ত্যাগ, আনুগত্য ও ইবাদত তাকে আহলে বাইতের মধ্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী করেছে। ফাতেমা (রা.)-এর আলোকজ্জ্বল জীবনকে আরো অধিক মর্যাদাময় করে তোলে যে কারণটি, সেটি হলো- তাঁর প্রতি মহানবীর অত্যধিক স্নেহ ও ভালবাসা। ফাতেমা (রা.) সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। তাঁর জীবনী নিয়ে যুগ যুগ ধরে গ্রন্থ রচিত হচ্ছে।

অধিকাংশ গ্রন্থ নির্ভরযোগ্য হলেও কিছু গ্রন্থে মা ফাতেমার মর্যাদাকে আরও ফুটিয়ে তোলার জন্য অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। একটি বইয়ে ফেরেশতারা ফাতেমা (রা.)-এর ঘুমের সময় তাঁর কাজ করে দিতেন বলেও কিসসা বর্ণিত হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


তেমনই একটি বইয়ের নাম ‘হযরত ফাতেমা (রা.)-এর জীবনী’। হকারদের মাধ্যমে সমাজে ছড়িয়ে পড়া এই পুস্তকে ফাতেমা (রা.) কেন্দ্রিক একটি কিসসা (ঘটনা) লেখা হয়েছে এভাবে- ‘প্রখ্যাত মহিলা সাহাবী উম্মে আইমান রা. বর্ণনা করেন, কোনো এক সময় আমি দ্বিপ্রহরে বিশেষ প্রয়োজনে নবীকন্যা হযরত ফাতেমা রা.-এর গৃহে গমন করলাম। আমি দেখতে পেলাম, তার গৃহের দরজা বন্ধ হলেও গৃহাভ্যন্তর হতে জাঁতা ঘূর্ণনের শব্দ আসিতেছিল। এহেন শব্দ পাওয়ার পর আমি গৃহের ছিদ্রপথ হতে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, নবীকন্যা হযরত ফাতেমা রা. অঘোরে নিদ্রা যাইতেছেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হইল তিনি নিদ্রা গেলেও তার পাশে জাঁতা আপনা হতেই ঘুরতেছে। নবীকন্যা হযরত ফাতেমার আদরের দুলালি অন্যের সাহায্য ছাড়াই দুলতেছে এবং নবীদুলালী হযরত ফাতেমা রা.-এর পাশে জনৈক রমণী তাসবীহ পাঠে রত আছেন।

উম্মে আইমান বলেন, এহেন কাহিনীটি আমি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বললাম। তিনি বললেন, হে উম্মে আইমান! দ্বিপ্রহরের তীব্র দহনে হয়তোবা অবসন্ন ফাতেমা জাঁতা ঘুরাতে ঘুরাতে নিদ্রামগ্ন হয়ে পড়েছে। তবে নিদ্রা গেলেও তার আটা তৈরির খুবই প্রয়োজন ছিল। এদিকে নিজের তাসবীহ পাঠও বাকি ছিল এবং গরমে শিশু হুসাইনের নিদ্রা টুটিবারও আশংকা ছিল। যার কারণেই রহমানুর রাহীম আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় দাসী ফাতেমার ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে তিনজন ফিরিশতা পাঠিয়ে তাদের মাধ্যমে ফাতেমার সংসারের সকল কাজ সমাধা করে রেখেছেন।’

এ কিসসাটি হাদিস ও সিরাতের নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে পাওয়া যায় না। আসলে এটি শিয়াদের বানানো একটি কিসসা। শিয়ারা আহলে বাইতের নামে বহু কিসসা জাল করেছে। এটি তেমনই একটি কিসসা। তাদের থেকেই পাক-ভারত উপমহাদেশে এ কিসসাসহ এ জাতীয় বহু কিসসা প্রসিদ্ধি পেয়েছে।

প্রসিদ্ধ শিয়া পণ্ডিত মুহাম্মাদ বাকের আলমাজলিসী (১০৩৭-১১১০ হি.)কৃত বিহারুল আনওয়ার (খণ্ড ৩৭, পৃষ্ঠা ৯৭-৯৮)-এ ঘটনাটি কোনো প্রকার সূত্র ছাড়া উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে, ‘...কোনো মানুষ ছাড়া জাঁতাটি একাই ঘুরছিল এবং হুসাইন রা.-এর দোলনাও কোনো মানুষ দোল দেওয়া ছাড়াই দুলছিল এবং ফাতেমা রা.-এর হাতের কাছে একটি হাত দেখা যাচ্ছিল, যা তাসবীহ পড়ছিল।...


বিজ্ঞাপন


(শেষে রয়েছে,) উম্মে আইমান রা. নবীজীকে জিজ্ঞেস করেন, দয়া করে আমাকে বলুন, কে জাঁতা ঘুরাচ্ছিল, কে দোল দিচ্ছিল এবং কে তাসবীহ পাঠ করছিল? তখন নবীজী বললেন, জাঁতা ঘুরাচ্ছিল জিবরীল আ. আর হুসাইনকে দোল দিচ্ছিল মিকাঈল আ. এবং তাসবীহ পাঠ করছিল ইসরাফীল আ.।

কিসসাটি বিহারুল আনওয়ারে কোনো প্রকার সূত্র ছাড়া- ورأيت في بعض مؤلفات أصحابنا ‘আমাদের (শিয়াদের) কোনো কোনো কিতাবে দেখেছি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিহারুল আনওয়ার ছাড়াও শিয়া পণ্ডিত সায়্যেদ হাশেম আলবাহরানী (মৃত্যু : ১১০৭/১১০৯ হি.)কৃত ‘মাদীনাতুল মাআজিয’ (খ. ৪, পৃ. ৪৬-৪৮)-এও কিসসাটি রয়েছে।

শিয়াদের মাঝে ফাতেমা (রা.)-এর ঘরে একা একা জাঁতা ঘূর্ণনের এ কিসসাটি আরো বিভিন্নভাবে প্রসিদ্ধ আছে। কিন্তু কোনোটিরই নির্ভরযোগ্য কোনো সনদ নেই। অর্থাৎ তা একটি বানোয়াট কিসসা।

(সূত্র: উচ্চতর ফতোয়া ও হাদিস গবেষণা বিভাগ মারকাযুদ্দাওয়াহ আল ইসলামিয়া)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর