বৃষ্টি কখনও বিপদের কারণ হলেও অধিকাংশ সময় তা আল্লাহর রহমত। বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমাদের রিজিকের ব্যবস্থা করেন। উত্তপ্ত পরিবেশ শীতল হয় বৃষ্টিপাতের কারণে। এছাড়াও বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা সকল প্রাণীর নানাবিধ উপকার করেন।
বৃষ্টির কারণে মন প্রফুল্ল হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা (বায়ু) মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে (মেঘমালাকে) স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য হতে বৃষ্টিধারা নির্গত হয়। তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছা তা (বৃষ্টি) পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়।’ (সুরা রুম: ৩৮)
বিজ্ঞাপন
আল্লাহ তাআলা বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দিলে চারণভূমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। খাদ্যসংকটে মানুষ ও প্রাণীকুল মারা যেত। এজন্য কল্যাণকর বৃষ্টির জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (স.) এই দোয়া পাঠ করতেন— اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا ‘হে আল্লাহ কল্যাণকর বৃষ্টি দাও।’ (বুখারি: ১০৩২)
বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়, তাই এ সময়ে দোয়া করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘দুই সময়ের দোয় প্রত্যাখ্যাত হয় না কিংবা কম প্রত্যাখ্যাত হয়। (এক) আজানের সময়। (দুই) বৃষ্টির সময়।’ (সহিহুল জামে: ৩০৭৮)
সুতরাং বৃষ্টির সময় আমরা যার যার চাহিদামতো আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে পারি। দোয়ার আগে অবশ্যই আল্লাহর শুকরিয়া, আল্লাহর গুণগান গাওয়া এবং নবীজির ওপর দরুদ পাঠ করতে ভুলব না। কেননা তা দোয়া কবুলের মাধ্যম। এরপর আমরা ইচ্ছামতো দোয়া করব।
যেমন এই দোয়াটি করা যায়—رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্ দুনইয়া হাসানাহ, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়াকিনা আজাবান্নার।’ অর্থ: ‘হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে সুখ দান কর, আখেরাতেও সুখ দান কর এবং আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।’ (সুরা বাকারা: ২০১) এ দোয়াকে সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া বলা হয়ে থাকে। নবী কারিম (স.) এ দোয়াটি সবচেয়ে বেশি পাঠ করতেন। (সহিহ মুসলিম: ৭০১৬)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ‘বৃষ্টির সময়ের ৬টি সুন্নাহ’
অথবা জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য সুন্দর এই দোয়াটি করা যায়— اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়াআউজুবিকা মিনান্না-র।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই’ (আবু দাউদ: ৭৯৩)। আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৩ বার আল্লাহর কাছে জান্নাত চায়, জান্নাত তখন বলে, ‘হে আল্লাহ! এই ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। পক্ষান্তরে যে ব্যাক্তি ৩ বার জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া করে, জাহান্নাম বলে, ‘হে আল্লাহ এই ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দাও।’ (তিরমিজি: ২৫৭২)
এছাড়াও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার এই দোয়াটি করতে পারেন— أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ ‘আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাজি লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি।’ অর্থ: ‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। আর আমি তাঁর দিকেই ফিরে যাচ্ছি (তাওবা করছি)।’ ফজিলত: রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো। কেননা আমি তাঁর কাছে দৈনিক ১০০ বার করে তাওবা করি। (মুসলিম, মেশকাত: ২৩২৫)
আরও পড়ুন: বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার যেসব উপকার করেন
আল্লাহ বৃষ্টিকে যেহেতু আমাদের রিজিকের মাধ্যম বানিয়েছেন তাই রিজিক বৃদ্ধির জন্য এই দোয়াটিও করা যায়— اللَّهُ لَطِيفٌ بِعِبَادِهِ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ ‘আল্লাহু লাতীফুম্ বি-ইবাদিহি ইয়ারজুকু মাইয়্যাশায়ু, ওয়া হুয়াল কাভিয়্যুল আজিজ।’ অর্থ: আল্লাহ নিজের বান্দাদের প্রতি মেহেরবান। তিনি যাকে ইচ্ছা রিজিক দান করেন। তিনি প্রবল, পরাক্রমশালী। (সুরা শুরা: ১৯)
এছাড়াও উত্তম জীবন যাপনের জন্য এই দোয়াটি পড়া যায়— اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা; ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আফাফা; ওয়াল গেনা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে হেদায়াত কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা তাকওয়া কামনা করি এবং আপনার কাছে সতীত্ব তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ তথা সামর্থ্য বা সচ্ছলতা কামনা করি।’ (মুসলিম: ২৭২১; তিরমিজি: ৩৪৮৯; ইবনে মাজাহ: ৩৮৩২; মুসনাদে আহমদ: ৩৬৮৪, ৩৮৯৪)
উল্লেখ্য, বৃষ্টির সময় একটু ভিজলেও সওয়াব লাভ হয়। তবে নিয়ত সহিহ রাখতে হবে। মনে মনে বলবেন- নবীজি বৃষ্টির পানি গায়ে লাগিয়েছেন বলেই আমিও লাগাচ্ছি। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বৃষ্টির পানি গায়ে লাগাতেন। (সহিহ মুসলিম: ১৯৫৬)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহান রবের নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দান করুন। দোয়া কবুলের সময় বেশি বেশি দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বৃষ্টির সময় দোয়া, বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল, বৃষ্টিতে ভিজলে সওয়াব, বৃষ্টি হলে দোয়া, বৃষ্টির দিনে যে দোয়া পড়বেন