রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মুনাফিক যে নামাজকে ভয় পায়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২৩, ০৬:২৭ পিএম

শেয়ার করুন:

মুনাফিক যে নামাজকে ভয় পায়

প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ। পাগল না হলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছেড়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নামাজ না পড়াকে মহানবী (স.) কুফরি কাজ ও অবিশ্বাসীদের স্বভাব বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। হাদিসে এসেছে, যার ভেতর নামাজ নেই, তার ভেতর দ্বীনের কোনো হিস্যা নেই। (মুসনাদে বাজ্জার: ৮৫৩৯)

অন্য হাদিসে জাবির (রা.) বলেন, আমি নবী (স.)-কে বলতে শুনেছি, বান্দা এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত ছেড়ে দেওয়া। (মুসলিম: ১৪৮) নামাজ না পড়ার পরিণাম জাহান্নাম। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘(জাহান্নামিদের জিজ্ঞাসা করা হবে) তোমাদের কোন জিনিস সাকারে (জাহান্নাম) নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।’ (সুরা মুদ্দাসসির: ৪২-৪৩)

সুতরাং নামাজ না পড়া কুফুরি। কিন্তু নামাজিদের মধ্যে কিংবা মুসলমানদের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে একজন মুনাফিক। সে সারাদিন নামাজ পড়লেও দুই ওয়াক্ত নামাজ তার জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এর গুরুত্ব সে উপলব্ধি করতে চায় না। সেই নামাজগুলো কী? এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুনাফিকদের জন্য ফজর ও এশার নামাজের চেয়ে অধিক ভারী কোনো নামাজ নেই। এ দুই নামাজের ফজিলত যদি তারা জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হতো।’ (বুখারি: ৬৫৭)

উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একবার মহানবী (স.) আমাদের ফজরের নামাজ পড়িয়েছেন। সালাম ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করেন, অমুক কি আছে? লোকেরা বলল, নেই। তারপর আরেকজনের নাম নিয়ে জিজ্ঞেস করেন, অমুক কি আছে? লোকেরা বলল, নেই। তিনি বলেন, এ দুই নামাজ (এশা ও ফজর) মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন। তোমরা যদি জানতে যে এই দুই নামাজে কী পরিমাণ সওয়াব আছে, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে শরিক হতে।’ (আবু দাউদ: ৫৫৪)

উল্লেখিত হাদিসগুলো প্রমাণ করছে, এই দুই ওয়াক্ত নামাজ মুনাফিকের জন্য খুবই কষ্টের। অথচ এই দুই নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এ দুই সময়ে মানুষ সাধারণত পরিবারের সঙ্গে সময় কাটায় ও বিশ্রাম করে। ফলে এই দুই ওয়াক্তে জামাতে শরিক হতে যথেষ্ট অবহেলা ও গাফিলতি হয়ে থাকে। আর মুনাফিকরা থাকে সবচেয়ে থাকেল।

এই দুই ওয়াক্তের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত নামাজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করল সে যেন সারারাত জেগে নামাজ আদায় করল’ (মুসলিম: ১৩৭৭)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ল, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ল।’ (মুসলিম: ৬৫৬)

শুধুমাত্র ফজরের সুন্নত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম: ৭২৫)। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘শত্রুবাহিনী তোমাদের তাড়া করলেও তোমরা এই দুই রাকাত কখনো ত্যাগ করো না।’ (আবু দাউদ: ১২৫৮)

এশার পরের দুই রাকাত সুন্নতের ফজিলত সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে- আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দৈনিক ১২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা নিয়মিত আদায় করবে তার জন্য আল্লাহ জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। ১২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা হলো—জোহরের আগে চার রাকাত, পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পরে দুই রাকাত, এশার পরে দুই রাকাত এবং ফজরের আগে দুই রাকাত।’ (তিরমিজি: ৪১৪)

যেকোনো নামাজের ব্যাপারে অবহেলা করা অনুচিত। যারা নামাজের ব্যাপারে উদাসীন তাদের ব্যাপারে আল্লাহ শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘দুর্ভোগ সেসব নামাজির জন্য, যারা নিজেদের নামাজের ব্যাপারে গাফেল’ (সুরা মাউন: ৪-৫)। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফজর-এশাসহ প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজ সময়মতো জামাতে পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর