সালাম ইসলামে সর্বোত্তম ও একমাত্র অভিবাদন। সালাম দেওয়া নেওয়া নবী-রাসুলদের সুন্নত। আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করে সর্বপ্রথম সালামের শিক্ষা দেন। তিনি সালাম দিলে ফেরেশতারাও উত্তর দেন। রাসুল (স.)-কে মেরাজের রাতে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা সালাম দিয়েছেন এভাবে—‘আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’। উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন এ অভিবাদনরীতি বহাল থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত।
জান্নাতেও সালামের প্রচলন থাকবে। মুসলিমরা জান্নাতে যাওয়ার সময় ফেরেশতারা বলবেন, ‘তোমাদের প্রতি সালাম’, তোমরা সুখী হও’ (সুরা জুমার: ৭৩)। এক জান্নাতি অপর জান্নাতিকে সালাম দেবে। ‘সেখানে তাদের অভিবাদন হবে সালাম’ (সুরা ইউনুস: ১০)। মহান আল্লাহ তাআলাও জান্নাতিদের সালাম দেবেন। ‘সালাম, পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সম্ভাষণ।’ (সুরা ইয়াসিন: ৫৮)
বিজ্ঞাপন
ইসলামে সালাম দেওয়ার একটাই পদ্ধতি। অর্থাৎ ইসলামের দৃষ্টিতে সালাম বলতে যা বুঝানো হয় তা হলো- আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলা। সাহাবায়ে কেরামরা রাসুল (স.)-কে আসসালামু আলাইকুম বলেই সালাম দিয়েছেন। ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুল (স.)-এর নিকট এসে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম’। রাসুলুল্লাহ (স.) তার সালামের উত্তর দিলে লোকটি বসল। তারপর রাসুল (স.) বললেন ‘দশ’। তারপর অপর এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।’ রাসুল (স.) তার সালামের উত্তর দেওয়ার পর লোকটি বসল। তার সম্পর্কে রাসুল (স.) বললেন ‘বিশ’। তারপর অপর এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’, রাসুল (স.) তার সালামের উত্তর দিয়ে বললেন ‘ত্রিশ’। (আবু দাউদ: ৫১৯৫; তিরমিজি: ২৬৮৯)
হাদিসে লক্ষণীয়, যত উত্তমভাবে সালাম দেওয়া যায় তত বেশি সওয়াব। আবার উত্তমভাবে সালামের জবাব দিতেও বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যখন তোমাদেরকে সালাম দেওয়া হবে তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে। অথবা জবাবে তাই দেবে। নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে পূর্ণ হিসাবকারী।’ (সুরা নিসা: ৮৬)
সালামের ব্যবহার প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, ‘কথার আগে সালামের ব্যবহার হবে।’ (তিরমিজি: ২৬৯৯) অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে কথা শুরু করে না, তোমরা তাকে কথা বলার অনুমতি দিও না।’ (মুসনাদ আবু ইয়ালা: ১৮০৯)
সুতরাং পা ছুঁয়ে সালাম তথা কদমবুচি করা ইসলামি সংস্কৃতি নয়। হাদিসে বড়জোর মুসাফাহা-মুআনাকার কথা এসেছে, কিন্তু পা ছুঁয়ে সালামের কথা আসেনি। সুতরাং উম্মত হিসেবে আমাদের উচিত- আসসালামু আলাইকুম বলে সালাম দেওয়া। আনাস (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি যখন তার কোনো ভাই বা বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তখন সে কি মাথা ঝুঁকাবে বা তাকে জড়িয়ে ধরবে বা চুমু খাবে? তিনি বললেন, না। লোকটি বলল, তাহলে কি কেবল হাত ধরবে ও মুসাফাহা করবে? রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, হ্যাঁ।’ (তিরমিজি: ২৭২৮; ইবনে মাজাহ: ৩৭০২; আহমদ: ১৩০৪৪)
বিজ্ঞাপন
রাসুলুল্লাহ (স.) আল্লাহ ছাড়া কারো সামনে মাথা ঝুঁকাতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং ‘রুকুর কাছাকাছি হয়ে সালামের জন্য ইশারা করা, ঝুঁকে পড়া এসব মাকরুহ।’ (সাকবুল আনহুর: ৪/২০৫)
আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যখন দুজন মুসলিমের সাক্ষাৎ হয়, তারপর তারা মুসাফাহা করে, তাহলে তারা পরস্পর আলাদা হওয়ার আগেই তাদের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (মুসনাদে আহমদ: ১৮৫৪৭, ইবনে মাজাহ: ৩৭০৩, আবু দাউদ: ৫২১২, তিরমিজি: ২৭২৭)
আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) আমাদের লক্ষ করে বললেন, হে বৎস! তুমি গৃহে পরিবার-পরিজনের কাছে প্রবেশকালে সকলকে সালাম করবে। এতে তোমার এবং তোমার গৃহের সকলের জন্য কল্যাণ হবে।’ (তিরমিজি: ২৬৯৮, আলমুজামুল আওসাত: ৫৯৯১)
উল্লেখিত সবগুলো হাদিসই প্রমাণ করছে- পা ছুঁয়ে সালাম বা কদমবুসি করা ইসলামি সংস্কৃতি নয়। যদিও কেউ কেউ কদমবুসি বা পদচুম্বনকে সম্মানসূচক জায়েজ বলেছেন। সাথে অবশ্য এ শর্তও দিয়েছেন যে, ‘যদি রুকু বা সেজদার সুরত হয়, তাহলে তা জায়েজ হবে না। (আলমুজতাবা: ৪/২০৫, আলমুহিতুল বুরহানি: ৮/১১৮, ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ৫/৩৬৯)
তবে মুহাক্কিকিনদের মতে তা জায়েজ নয়। কারণ বর্তমান প্রচলিত কদমবুসিতে রুকুর হালত এবং সেজদার হালত হওয়া স্পষ্ট। সেইসঙ্গে এটি মুসলিম সংস্কৃতি নয়। তাই সালামের এই নতুন পদ্ধতি থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

