বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

দ্বিতীয় স্বামীকে তালাক দিয়ে প্রথম স্বামীকে বিয়ে করা যাবে?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ মে ২০২৩, ০৬:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

দ্বিতীয় স্বামীকে তালাক দিয়ে প্রথম স্বামীকে বিয়ে করা যাবে?

তালাক ইসলামে একটি অপছন্দনীয় জায়েজ বিষয়। তালাকের বিধান না থাকলে নারীরা বা পুরুষেরা জুলুমের শিকার হত, ‎এই হিকমতে তা বৈধ রাখা হয়েছে, অপপ্রয়োগ করার জন্য নয়। ইসলামি শরিয়তে তালাকের ক্ষমতা স্বামীর হাতে ন্যস্ত। তবে যৌক্তিক কারণে স্ত্রীও তালাক চাইতে পারে। অর্থাৎ বিবাহবিচ্ছেদের পথ স্ত্রীর জন্যও এভাবে খোলা আছে যে সে স্বামীকে বুঝিয়ে তালাকের ওপর রাজি করাবে অথবা কোনো বিনিময়ের মাধ্যমে তালাকের সম্মতি নেবে। এটিকে ইসলামি পরিভাষায় ‘খোলা তালাক’ বলা হয়। (দেখুন: সহিহ বুখারি: ৫২৭৩)

যদি ‘খোলা তালাকের’ ওপর স্বামী রাজি না হয়, সেক্ষেত্রে স্ত্রী আদালতে মামলা করে যৌক্তিক কারণ দর্শিয়ে স্বামীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিচারকের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ করাতে পারে। (শরহুস সগির, দরদির: ২/৭৪৫, কিফায়াতুল মুফতি: ৬/২৫২)


বিজ্ঞাপন


প্রশ্ন হলো—দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর কি প্রথম স্বামীকে পুনরায় বিয়ে করা যাবে? এর উত্তর হলো—শরিয়ত অনুমোদিত উপায়ে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন হলে এবং দ্বিতীয় স্বামীর সাথে পরিপূর্ণ সহবাস হলে ইদ্দত শেষ করার পর প্রথম স্বামীর সঙ্গে পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েজ।

কেননা পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, فَاِنۡ طَلَّقَہَا فَلَا تَحِلُّ لَہٗ مِنۡۢ بَعۡدُ حَتّٰی تَنۡکِحَ زَوۡجًا غَیۡرَہٗ ؕ فَاِنۡ طَلَّقَہَا فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡہِمَاۤ اَنۡ یَّتَرَاجَعَاۤ اِنۡ ظَنَّاۤ اَنۡ یُّقِیۡمَا حُدُوۡدَ اللّٰہِ ؕ وَتِلۡکَ حُدُوۡدُ اللّٰہِ یُبَیِّنُہَا لِقَوۡمٍ یَّعۡلَمُوۡنَ ‘অতএব যদি সে তাকে তালাক দেয় তাহলে সে পুরুষের জন্য হালাল হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ভিন্ন একজন স্বামী সে গ্রহণ না করে। অতঃপর সে (স্বামী) যদি তাকে তালাক দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের অপরাধ হবে না যে, তারা একে অপরের নিকট ফিরে আসবে, যদি দৃঢ় ধারণা রাখে যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা কায়েম রাখতে পারবে। আর এটা আল্লাহর সীমারেখা, তিনি তা এমন সম্প্রদায়ের জন্য স্পষ্ট করে দেন, যারা জানে। (সুরা বাকারা: ২৩০)

আরও পড়ুন: তালাক দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি

সুতরাং দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে সহবাস হলে এবং তালাক সম্পন্ন হলে প্রথম স্বামীকে গ্রহণ করতে কোনো আপত্তি নেই। 


বিজ্ঞাপন


তবে এখানে একটি বিষয় জানা জরুরি যে প্রচলিত হিলা বিয়ে নামের ছলচাতুরী ইসলামে নিষিদ্ধ। সমাজে দেখা যায়, তিন তালাকের মাধ্যমে একে অপরের জন্য হারাম হওয়ার পরও নানা রকম হিলা নামের বাহানা শুরু করে, যা যেমন অশালীন, তেমনি শরিয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ ও লানতযোগ্য কাজ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘(হিলা-বাহানার মাধ্যমে) অন্যজনের জন্য স্ত্রী হালাল করার উদ্দেশ্যে বিবাহকারী এবং যার জন্য হালাল করা হয়েছে, উভয়ের ওপরই আল্লাহর লানত।’ (আবু দাউদ: ২০৭৬)

মূলত ইসলামের বিধান হলো, তিন তালাকের পর উভয়ে উভয়ের রাস্তা ধরবে। স্বামী অন্যত্র বিয়ে করে নেবে। তদ্রূপ স্ত্রীও ইদ্দতশেষে অন্যত্র বিয়ে করে তার সঙ্গেই ঘর-সংসার করবে। স্ত্রী প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার বা স্বামী তাকে ফিরিয়ে নিতে কোনো হিলা-বাহানা করা অবৈধ। 

তবে হ্যাঁ, কোনো কারণে যদি দ্বিতীয় স্বামী কখনো তালাক দিয়ে দেয় বা মারা যায়, তখন ইদ্দতের শেষে চাইলে সে আবার প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর