রোজাদারকে অনন্য মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে ইসলাম। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য আবশ্যক করা এই বিধান যথাযথ আদায়ের কারণে রোজাদারের অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে—
‘যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সাথে ও সওয়াবলাভের আশায় রমজানের রোজা পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াবলাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত (নামাজ) আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি: ১৮৮৭)
এছাড়াও হাদিসে এসেছে, রোজাদারদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়, তাদের দোয়া কবুল করা হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, 'অবশ্যই আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের প্রতিদিন ও রাতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দোয়া কবুল করেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ৭৪৫০; মুসনাদে বাজ্জার: ৯৬২)
অন্য হাদিসে আছে, ‘ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে‘ (আহমদ: ৫/২৫৬)
‘সিয়াম ঢাল স্বরূপ। এ দ্বারা বান্দা তার নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে পারো।’ (আহমদ: ১৫২৯৯)
অন্য হাদিসে এসেছে,‘সিয়াম ঢালস্বরূপ এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার এক মজবুত দূর্গ।’(আহমদ : ৯২২৫)
বিজ্ঞাপন
স্বয়ং আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রোজাদারের বিশেষ পুরস্কারের কথা এসেছে হাদিসে, যা রোজাদারের অনন্য মর্যাদার প্রমাণ। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—
‘নিশ্চয়ই রোজা আমার জন্য এবং এর প্রতিদান স্বয়ং আমিই দিব।’ (মুসলিম: ১১৫১/১৬৫)
‘রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মিশকের চেয়েও সুগন্ধিময়...।’ (বুখারি: ১৯০৪, মুসলিম: ২৭৬২)
আবু উমামা (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন, যার কারণে আমি জান্নাতে যেতে পারি। তিনি বললেন, ‘তুমি সিয়াম পালন করো। কেননা এর চেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন কোনো ইবাদত নেই।’ (নাসায়ি: ২২২১)
শয়তানের হয়রানি থেকেও মুক্ত থাকেন একজন রোজাদার। কারণ, রোজা শুরু হওয়ার সময় শয়তানকে শেকলবন্দি করা হয়। একইসঙ্গে জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয় এবং খুলে দেওয়া হয় জান্নাতের সকল দরজা।
মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘রমজান মাসের প্রথম রজনীতে শয়তানদের মজবুতভাবে বেঁধে রাখা হয় এবং অবাধ্য জিনদেরও বন্দি করে রাখা হয়। দোজখের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোনো দরজা পুরো রমজান মাসে খোলা হয় না এবং জান্নাতের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়। একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। সঙ্গে সঙ্গে একজন আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকেন—
হে সওয়াবপ্রত্যাশী! অগ্রসর হও। হে পাপিষ্ঠ! পাপ থেকে হাত গুটিয়ে নাও। আল্লাহ তাআলা এই পবিত্র মাসের সম্মানার্থে অনেক পাপিষ্ঠকে ক্ষমা করে দেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। আর এটি রমজানে প্রতি রাতেই হয়ে থাকে।’(বায়হাকি, শুআবুল ইমান: ৩৫৯৭-৯৮)
‘মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, কিন্তু সিয়ামের বিষয়টি ভিন্ন। কেননা সিয়াম শুধুমাত্র আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব।’ (মুসলিম: ১১৫১)
অর্থাৎ কী পরিমাণ সংখ্যা দিয়ে গুণ করে এর প্রতিদান বাড়িয়ে দেয়া হবে, তার কোনো হিসাব নেই, শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন সিয়ামের পুণ্যের ভাণ্ডার কত সুবিশাল হবে।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য) একদিন সিয়াম পালন করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে ৭০ বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তীস্থানে রাখবেন।’ (বুখারি: ২৮৪০; মুসলিম: ১১৫৩)
রোজাদার যখন আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, তখন তাঁর আনন্দের সীমা থাকবে না। তাকে আনন্দের একটি মুহূর্ত দুনিয়াতেই দেওয়া হয়েছে। এসম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সিয়াম পালনকারীর জন্য দুটো বিশেষ আনন্দ-মুহূর্ত রয়েছে : একটি ইফতারের সময়, আর দ্বিতীয়টি হলো তার রবের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। (বুখারি: ৭৪৯২; মুসলিম: ১১৫১)
‘জান্নাতে রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে শুধুমাত্র রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি: ১৮৯৬; মুসলিম: ১১৫২)।
রোজা ও কোরআন কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, রোজা বলবে- হে আমার রব, আমি দিনের বেলায় তাকে (এ রোজা পালনকারীকে) পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল করো। অনুরূপভাবে কোরআন বলবে, হে আমার রব, আমাকে অধ্যয়নরত থাকায় রাতের ঘুম থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল করো। তিনি (স.) বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে। (আহমদ: ২/১৭৪)
এভাবে বহু নেকি, নেয়ামত ও ফজিলত অর্জন করেন একজন রোজাদার আর অভিষিক্ত হন অনন্য মর্যাদায়। মহান আল্লাহ মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেককে এ মর্যাদার অংশীদার করুন। আমিন।

