বদরযুদ্ধে মহান আল্লাহ কোরাইশদের এক হাজার সশস্ত্র সৈন্যের বিপরীতে মুসলমানদের মাত্র ৩১৩ জনের নিরস্ত্র সেনাবাহিনীকে বিজয় দান করেছিলেন। পবিত্র কোরআনের সুরা আলে ইমরান ও সুরা আনফালে বদর যুদ্ধের সবিস্তার বর্ণনা এসেছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর মতে, সুরা আনফাল বদর যুদ্ধ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। এ সুরায় যুদ্ধলব্ধ সম্পদ, যুদ্ধবন্দি, ফেরেশতাদের অংশগ্রহণসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহের আলোচনা রয়েছে।
আর সুরা আলে ইমরানে মুসলমানদের অবস্থা, আল্লাহর সাহায্য ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ভবিষ্যতেও সাহায্যের ধারা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। বদর যুদ্ধের অবস্থা তুলে ধরে সুরা আলে ইমরানে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের বদরে সাহায্য করেছেন। অথচ তোমরা হীনবল ছিলে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১২৩)
বিজ্ঞাপন
সেদিন পবিত্র কোরআনের আয়াত নাজিলের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মুসলিম বাহিনীর মনোবল বৃদ্ধি করে দিয়েছিলেন এবং সাহায্য করার সুসংবাদ দিয়েছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ এটা করেছেন, তোমাদের সুসংবাদ দেওয়ার জন্য এবং যাতে এর দ্বারা তোমাদের অন্তর প্রশান্ত হয়। সাহায্য শুধু মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর পক্ষ থেকে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১২৬)
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সেই সময়ের কথা স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলেন যে আমি তোমাদের সঙ্গেই আছি। সুতরাং তোমরা ইমানদারদের অবিচল রাখো। যারা বেইমান, শিগগিরই আমি তাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করে দেব। কাজেই তাদের গর্দানের ওপর আঘাত হানো এবং তাদের জোড়ায় জোড়ায় হত্যা করো। (সুরা আনফাল: ১২)
এই আয়াতে বদর যুদ্ধে ফেরেশতাদের প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা যেসব ফেরেশতাকে মুসলমানদের সাহায্যে পাঠিয়েছেন, তাদের সম্বোধন করে বলেছেন যে আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। তোমরা ইমানদারদের অভয় দিতে থাকো। আমি কাফিরদের মনে ভীতি সঞ্চার করে দিচ্ছি।
আরও পড়ুন
আজ ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ
বদরযুদ্ধে অংশ নেওয়া সাহাবিদের অনন্য মর্যাদা
বিজ্ঞাপন
শুধু বদর নয়, বান্দা যদি মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা-ভরসা রাখে, তবে ভবিষ্যতেও আল্লাহ আসমানি এই সাহায্যের ধারা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বরং তোমরা যদি ধৈর্যধারণ করো, আল্লাহকে ভয় করো এবং তারা দ্রুত গতিতে তোমাদের ওপর আক্রমণ করে, তবে আল্লাহ তাআলা তোমাদের পাঁচ হাজার ফেরেশতার সুবিন্যস্ত বাহিনী দ্বারা সাহায্য করবেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১২৫)
সুরা আনফালে আল্লাহ তাআলা বদর প্রান্তে মুসলিম বাহিনীর অবস্থানের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘স্মরণ করো, যখন তোমরা ছিলে নিকটপ্রান্তে এবং তারা ছিল দূরপ্রান্তে। উষ্ট্রারোহী দল ছিল তোমাদের চেয়ে নিম্নভূমিতে।’ (সুরা আনফাল: ৪২)
এরপরের আয়াতেই আল্লাহ মুমিনদের সাহস জোগানের একটি চিত্র তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো! যখন আল্লাহ আপনাকে স্বপ্নে দেখিয়েছিলেন, তারা সংখ্যায় অল্প। যদি তিনি তাদের সংখ্যায় বেশি দেখাতেন, তবে তোমরা সাহস হারাতে এবং যুদ্ধের ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি করতে। কিন্তু আল্লাহ রক্ষা করেছেন। নিশ্চয় তিনি অন্তরের খবর জানেন।’ (সুরা আনফাল: ৪৩)
আল্লাহ ফেরেশতাদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে বলেছেন, ‘যদি তুমি দেখতে ফেরেশতাগণ অবিশ্বাসীদের মুখে ও পিঠে আঘাত করে জীবন কেড়ে নিচ্ছে এবং বলছে, তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ করো।’ (সুরা আনফাল: ৫০)
বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল এক অধ্যায়। দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর প্রান্তরে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধ ছিল অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের লড়াই। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে উভয়পক্ষের শক্তির পার্থক্য, মুসলিম উম্মাহর প্রতি তাঁর অনুগ্রহ ও মুসলিম বাহিনীর ঘুরে দাঁড়ানোর চিত্র তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বদর যুদ্ধের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।