ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নামাজ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ৮২ বার নামাজের কথা বলেছেন। ‘নিশ্চয়ই মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ ফরজ’ (সুরা নিসা: ১০৩)।
আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আবশ্যক করে দেওয়া এই ফরজ আদায়ে তাড়াহুড়া করা, রুকু-সেজদা ঠিকভাবে না করা, এদিক-সেদিক তাকানো এবং খুশু খুজু প্রত্যাখ্যান করা শোভনীয় নয়।
বিজ্ঞাপন
বরং নামাজের সব রুকন ধীরস্থিরভাবে আদায় করা ওয়াজিব। (অর্থাৎ রুকু, সেজদা ও রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এবং দুই সেজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসে কমপক্ষে এক তাসবিহ পরিমাণ দেরি করা)। (বুখারি ১/১০৯: ৭৯৩, মুসলিম ১/১৭০: ৩৯৭, আবু দাউদ ১/১২৪, ১২৪: ৮৫৬, ৮৫৭, ৮৫৮)
নামাজে যারা পূর্ণভাবে রুকু-সেজদা আদায় করে না, তাদেরকে সবচেয়ে বড় চোর সাব্যস্ত করেছেন মহানবী (স.)। হজরত নোমান ইবনে মুররা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—
মদ্যপ, চোর ও ব্যভিচারী সম্পর্কে তোমাদের কী মত? যখন এই প্রশ্ন করা হয়, তখনো এদের সম্পর্কে কোনো হুকুম অবতীর্ণ হয়নি। তাঁরা উত্তর দিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল অধিক জ্ঞাত। রাসুল (স.) বললেন, এগুলো ঘৃণ্য ও জঘন্য পাপ, এসবের সাজা রয়েছে। আর যে ব্যক্তি নিজের নামাজ চুরি করে, সে চুরি হচ্ছে সর্বাপেক্ষা বড় চুরি। তাঁরা (সাহাবিরা) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপন নামাজ চুরি করে কীভাবে? তিনি বলেন, যে নামাজের রুকু ও সেজদা পূর্ণভাবে আদায় করে না। (মুয়াত্তায়ে মালেক: ৩৮৯)
যারা যত্নসহকারে একাগ্রতার সঙ্গে সময়মতো শুদ্ধভাবে নামাজ আদায় করেন, তাদের সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, যা আল্লাহ তাআলা (বান্দার জন্য) ফরজ করেছেন, যে ব্যক্তি এ সালাতের জন্য ভালোভাবে অজু করবে, সঠিক সময়ে আদায় করবে এবং এর রুকু ও খুশুকে পরিপূর্ণরূপে করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়াদা রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আর যে তা না করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়াদা নেই। ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করে দিতে পারেন, আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। (মিশকাত: ৫৭০)
অন্য একটি হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি নামাজ কায়েম করল, সে দ্বীন কায়েম করল। আর যে নামাজ ধ্বংস করল, সে দ্বীন ধ্বংস করল। (বায়হাকি: ২৫৫০)
তাই আমাদের উচিত পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে নামাজ আদায় করা। এর সহজ উপায় হলো, প্রতিটি নামাজকে জীবনের শেষ নামাজ মনে করা। কারণ, আল্লাহ আমাদের মনের অবস্থা জানেন। একটি হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, মহান আল্লাহ আমাদের নামাজের মান অনুযায়ী আমাদের প্রতিদান দেবেন।
হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, এমন লোকও আছে যারা নামাজ আদায় করা সত্ত্বেও নামাজের রুকন ও শর্তগুলো সঠিকভাবে আদায় না করায় এবং নামাজে পরিপূর্ণ একাগ্রতা ও খুশু-খুজু না থাকায় তারা নামাজের পরিপূর্ণ সাওয়াব পায় না। বরং তারা ১০ ভাগের এক ভাগ, ৯ ভাগের এক ভাগ, ৮ ভাগের এক ভাগ, ৭ ভাগের এক ভাগ, ৬ ভাগের এক ভাগ, ৫ ভাগের এক ভাগ, ৪ ভাগের এক ভাগ, ৩ ভাগের এক ভাগ বা অর্ধাংশ সাওয়াবপ্রাপ্ত হয়। (আবু দাউদ: ৭৯৬)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী নামাজের হক যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।