রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ফিতরা না দেওয়ার কোনো সুযোগ আছে কি?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:০২ পিএম

শেয়ার করুন:

ফিতরা না দেওয়ার কোনো সুযোগ আছে কি?

সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা জাকাতেরই একটি প্রকার। আল্লাহ তাআলা এদিকে ইঙ্গিত করে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়।’ (সুরা আলা: ১৪)

ইসলামি শরিয়তে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। হাদিস শরিফে সদকাতুল ফিতরকে কাফফারাতুন লিসসাওম—অর্থাৎ ‘রোজা অবস্থায় অবচেতনভাবে যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে যায়, তার ক্ষতিপূরণ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) সদকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন। অর্থহীন, অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার জোগানোর জন্য। (আবু দাউদ: ১৬০৯)


বিজ্ঞাপন


সদকাতুল ফিতর কী?
‘জাকাতুল ফিতর ও সাদাকাতুল ফিতর’ এর অর্থ হলো জাকাত বা ফিতরের সদকা। রোজাদার যে খাবার খেয়ে রোজা ভঙ্গ করেন, তাকে ফিতর বা ফাতুর বলা হয়। (আল-মুজাম আল-ওয়াসিত, পৃষ্ঠা: ৬৯৪) জাকাত যেমন আর্থিক ইবাদত, ফিতরাও ঠিক তেমনি একটি আর্থিক ইবাদত। রোজা পালন করতে গিয়ে আমাদের অনেক ভুলত্রুটি হয়। তাই এসব ভুলত্রুটির কাফফারাস্বরূপ মহানবী (স.) এই বিধান দিয়েছেন।সুতরাং ফিতরা আদায় করতে হবে। না দেওয়ার সুযোগ নেই। 

ফিতরা কখন আদায় করা উত্তম
ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করা উত্তম। কারণ এর মাধ্যমে ধনী-গরিবের মাঝে আনন্দের ভাগাভাগি হয়। তাছাড়া এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নতও। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, সুন্নত হলো ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা। (আল-মুজামুল কাবির: ১১২৯৬)

ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (স.) আমাদের ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারি: ১৫০৯)

তবে কারো যদি কোনো কারণবশত ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে পরে আদায় করারও সুযোগ রয়েছে। আবার জাকাতের মতো রমজানের যেকোনো সময়েও আদায় করা যায়। 


বিজ্ঞাপন


ফিতরা যাদের ওপর ওয়াজিব
সদকাতুল ফিতরের নিসাব জাকাতের নিসাবের সমপরিমাণ। অর্থাৎ সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত সম্পদ ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় কারো কাছে বিদ্যমান থাকলে তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। ‘ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন ও নারী-পুরুষ সবার ওপরই সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব’ (সহিহ বুখারি: ১৫১২)। এমনকি পবিত্র রমজানের শেষদিনেও যে নবজাতক দুনিয়ায় এসেছে কিংবা কোনো ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছে, তার পক্ষ থেকেও সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/১৯২) যার ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন, তেমনি নিজের অধীনদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। তবে এতে জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। (ফাতহুল কাদির: ২/২৮১)

আরও পড়ুন:
জাকাত কী, কেন কাকে দিতে হয়?
রমজানে যে আমলগুলো বিশেষ ফজিলতপূর্ণ
জাকাত কি রমজানে দেওয়া বাধ্যতামূলক?

সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ
পাঁচ ধরণের খাদ্যদ্রব্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা যায়। খেজুর, পনির, জব, কিসমিস এবং গম। সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ সম্পর্কে শরিয়তে দুটি মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা হচ্ছে ‘এক সা’ বা ‘অর্ধ সা’। ১) খেজুর, পনির, জব ও কিশমিশ দ্বারা আদায়ের ক্ষেত্রে এক ‘সা’ বা ৩২৭০.৬০ গ্রাম (প্রায়)—অর্থাৎ তিন কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি। ২) গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে ‘অর্ধ সা’ বা ১৬৩৫.৩১৫ গ্রাম, অর্থাৎ এক কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি প্রযোজ্য হবে। (আওজানে শরইয়্যাহ, পৃ-১৮)
দুটির যে কোনো একটিকে পরিমাপ ধরে আদায় করলে ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। অবশ্য যিনি সামর্থ্য অনুযায়ী যত বেশি আদায় করবেন তিনি তত বেশি সওয়াবের অধিকারী হবেন।  

এবারের সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ 
১) গম/আটা: পরিমাপ অর্ধ সা। কেজির হিসাবে প্রায় ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম। তবে ন্যূনতম পূর্ণ ২ সের/কেজির মূল্য আদায় করা উত্তম ৷ যার বর্তমান বাজার মূল্য ১১৫ টাকা।

২) যব: যবের পরিমাপ এক সা। কেজির হিসাবে প্রায় ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩৯৬ টাকা।

৩) কিসমিস: এর পরিমাপও এক সা। কেজির হিসাবে প্রায় ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১ হাজার ৬৫০ টাকা।

৪) খেজুর: এর পরিমাপ এক সা। কেজির হিসাবে প্রায় ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১ হাজার ৬৫০ টাকা।

৫) পনির: পনিরের পরিমাপও এক সা। কেজির হিসাবে প্রায় ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। যার বর্তমান বাজার মূল্য ২ হাজার ৬৪০ টাকা।

উল্লেখিত ফিতরার একাধিক পরিমাণ থেকে সামর্থ্যবানদের জন্য বেশিটা আদায় করাই উত্তম। কিন্তু আমাদের সমাজে সামর্থ্যবানরাও ব্যাপকভাবে সর্বনিম্ন দ্রব্যের মূল্য ধরে তা আদায় করে থাকে, যা সত্যিই অপছন্দনীয়। কারণ হাদিস শরিফে এসেছে একবার রাসুলুল্লাহ (স.)-কে সর্বোত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ইরশাদ করেন, ‘দাতার নিকট যা সর্বোত্কৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি।’ (বুখারি: ২৫১৮)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সদকাতুল ফিতর যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর