মহিমান্বিত এক মাসের নাম মাহে রমজান। এই মাস সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে উপস্থিত হয়। হাদিসে এসেছে, ‘যখন রমজানের প্রথম রাতের আগমন ঘটে, তখন দুষ্ট জ্বিন ও শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, (সারা মাস) একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, (সারা মাস) একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না।
একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে- হে কল্যাণের প্রত্যাশী! আরো অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের যাত্রী! ক্ষান্ত হও। আর আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন।’ (ইবনে মাজাহ: ১৬৪২; সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১৮৮৩; মুসতাদরাক হাকেম: ১৫৩২)
রোজা অবস্থায় কোনো নেককার বান্দার মৃত্যু হলে বুঝতে হবে, এটি সৌভাগ্যময় মৃত্যু। এমন মৃত্যুর বিশেষ ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন রোজা রাখে এবং এই রোজাই তার জীবনের শেষ আমল হয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩৩২৪; বায়হাকি: ৬৫১; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১১৯৩৫)
অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রোজা রেখে সেই অবস্থায় মৃত্যু হলে তার বিনিময় জান্নাত ছাড়া অন্যকিছু নয়। রোজা ছাড়াও যেকোনো ভালো কাজের ওপর মৃত্যু হলে সেই মৃত্যুকে ভালো মৃত্যু বলে অভিহিত করা হয়েছে হাদিসে। নবী (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যখন কোনো বান্দার কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তাকে মৃত্যুর আগে পবিত্র করেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, পবিত্র করেন কীভাবে? তিনি বললেন, মৃত্যুর আগে তাকে নেক আমলের তাওফিক দেন। অতঃপর তার উপর তার মৃত্যু ঘটান’। (সহিহুল জামে: ৩০৬)
রমজানের রোজা জাহান্নামের প্রতিবন্ধক
জাহান্নাম শাস্তির প্রধান জায়গা; অপরাধীর আবাস্থল। রোজা মানুষকে সেই জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়। তাই রোজাকে বলা হয় জাহান্নামের প্রতিবন্ধক। রাসুল (স.) বলেন, ‘যুদ্ধের মাঠে ঢাল যেমন তোমাদের রক্ষাকারী, সিয়ামও তদ্রূপ জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল।’ (ইবনে মাজাহ: ১৬৩৯; বায়হাকি: ৪/২১০)
অপর একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিন রোজা রাখে, আল্লাহ তার বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে তার মুখমণ্ডলকে ৭০ বছরের দূরত্বে রাখেন। (ইবনে মাজাহ: ১৭১৮)
গুনাহ মাফের মাস রমজান
রোজা ছাড়াও রমজানে বিশেষকিছু আমল রয়েছে, যেমন রোজাদারকে ইফতার করানো, রাত জেগে ইবাদত করা, সামর্থ্য থাকলে ওমরা করা ইত্যাদি আমল গুনাহমুক্ত হওয়া, অসীম সওয়াব লাভ করা এবং জান্নাতে প্রবেশ করার মতো ফজিলতপূর্ণ আমল। ওমরার সওয়াবের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘রমজান মাসের ওমরা (সওয়াবের ক্ষেত্রে) হজের সমতুল্য।’ (ইবনে মাজাহ: ২৯৯১)
রোজাদারকে ইফতার করানোর ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে; রোজাদারের সওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না।’ (তিরমিজি: ৮০৭; ইবনে মাজাহ: ১৭৪৬)
রমজানে তাহাজ্জুদ পাঠও বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আমল। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৩৬)
রমজানে জাহান্নামের দরজা বন্ধ
রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যখন রমজান মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের আবদ্ধ করা হয়। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘শয়তানদের শিকল পরানো হয়।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৪৭)
স্বতন্ত্র রোজার কারণে অতীতের গুনাহ মাফ
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় রমজানের রোজা পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত (নামাজ) আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি: ১৮৮৭)
রমজানের ব্যাপারে যারা গাফেল
যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপগুলো ক্ষমা করানো থেকে বঞ্চিত হলো, মহানবী (স.) তাকে ধিক্কার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক, যার কাছে রমজান মাস এসে চলে গেল অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করা হয়নি।’ (জামেউল উসুল: ১৪১০)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যার সামনে আমার নাম উল্লেখ করা হলো আর সে আমার ওপর দরুদ পড়ল না এবং ওই ব্যক্তির ধ্বংস হোক যে তার মা-বাবাকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল কিন্তু জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। আর ওই ব্যক্তির ধ্বংস হোক যে রমজান মাস পেল অথচ তার গুনাহ মাফ করা হলো না। (মুসনাদে বাজ্জার: ৮৪৬৫)
সুতরাং রমজানে বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কালেমা মুখে নিয়ে নেক আমলের ওপর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

