সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সীরাত কেন পড়বেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ০২:০৪ পিএম

শেয়ার করুন:

সীরাত কেন পড়বেন

মুসলমানদের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুবারক সীরাত বা জীবনী অধ্যয়ন শুধু জ্ঞানবৃদ্ধির বিষয়ই নয়, এটা তার দ্বীনি প্রয়োজন। কারণ, মানবজীবনের এমন কোনো দিক নেই, যা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্পর্শ করেনি। ব্যবহারিক, আধ্যাত্মিক, ইহলৌকিক, পারলৌকিক— সব কিছুই তার জীবন ও সাধনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। ফলে তার জীবনাদর্শ মানবজাতির জন্য অনুকরণীয়। জীবন পথে আলোর মশাল ও দিকনির্দেশনা স্বরূপ।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا


বিজ্ঞাপন


“অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর (স.) মধ্যে রয়েছে অনুপম আদর্শ, তাদের জন্যে যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।” (সূরা আহযাব: ২১)

ইসলামি শরিয়তে কোন আমল উত্তীর্ণ— তা যাচাইয়ের নিখুঁত মানদণ্ড হলো নবীজির সীরাত। আর যেই আমল সীরাত ও সুন্নাতের মানদণ্ডে ঠিক না, সেটি ইসলামে অশুদ্ধ ও বর্জনীয় বলে বিবেচিত। এক্ষেত্রে সুফিয়ান ইবনে উয়াইনার বক্তব্য উল্লেখযোগ্য, যা খতীবে বোগদাদী (রহ.) তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল-জামে লি-আখলাকির রাওয়ী ওয়া আদাবিস সামে’ এর মুখবন্ধে উল্লেখ করেছেন,

“নিঃসন্দেহে এটা সর্বজন স্বীকৃত বিষয় যে— রাসূল (সা.) এর সীরাত হলো ইসলামের সকল বিষয়ের সত্যতা যাচাইয়ের অন্যতম মানদণ্ড। সুতরাং, সকল আমলকে তার জীবনাচার, স্বভাব-চরিত্রের নিক্তিতে মেপে দেখতে হবে। যা কিছু এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখবে, তাই সত্য। আর যা কিছু সামঞ্জস্য রাখবে না তা অসত্য।”

কাজেই সঠিক ও শুদ্ধ উপায়ে আমল করতে চাইলে সীরাত পাঠের বিকল্প নেই। সীরাত পাঠে কোরআন অনুধাবনও সহজ হয়। কারণ, তাঁর জীবনই ছিল কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ তরজমা ও তাফসির।


বিজ্ঞাপন


একজন মুসলমান হিসেবে প্রাণাধিক প্রিয়পাত্র ও ভালোবাসার পাত্র হওয়া উচিত প্রিয় নবী (সা.)। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসূলের (স.) এই ভালোবাসাকে আমাদের উপর আবশ্যক করে দিয়ে বলেন—

قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُم من ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ

“বলো, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার (রাসূল) অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আলে-ইমরান-৩১)

রাসূল (সা) ইরশাদ করেন, ‏ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ

অনুবাদ: “সেই আল্লাহর শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা ও সন্তানাদির চেয়ে অধিক ভালবাসার পাত্র হই।” (সহিহ বুখারী: ১৪)

যিনি যতো বেশি সীরাতের গভীরে অবগাহন করবেন, তিনি তত বড় রাসূল প্রেমিকে রূপ নেবেন। নিখুঁত জীবনের সন্ধান পাবেন। মানবিক হয়ে উঠবেন। গঠিত হবে মজবুত ইমান।

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন—

এক লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে দু’ পাহাড়ের মাঝামাঝি ছাগলগুলো চাইলে তিনি দিয়ে দিলেন। অতঃপর লোকটি তার গোত্রের কাছে প্রত্যাবর্তন করে বলল, হে আমার জাতি ভাইয়েরা! তোমরা ইসলাম কবুল কর। আল্লাহর শপথ! মুহাম্মাদ (সা.) অভাবের আশঙ্কা না করেই দান করেন।

আনাস (রা.) বলেন—

যদিও মানুষ শুধু ইহকালের উদ্দেশ্যেই ইসলাম গ্রহণ করে তবুও ইসলাম গ্রহণ করতে না করতেই ইসলাম তার কাছে পৃথিবী এবং পৃথিবীর সকল প্রাচুর্যের চাইতে অধিকতর প্রিয় হয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম: ৫৯১৫)

তাই মানবজীবনে সৌভাগ্যের চাবিকাঠি এই সীরাত। আধুনিক নয়, বরং সর্বাধুনিক জীবনপদ্ধতির গ্যারান্টি। সীরাত অনুসরণ-অনুকরণ এবং দৈনন্দিন জীবনে এর বাস্তবায়ন ছাড়া কারো পক্ষেই পার্থিব কিংবা অপার্থিব কোন সফলতার আশা করা বোকামি।

ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন—

দুনিয়া-আখেরাতের একমাত্র সফলতা আর সকল সৌভাগ্য রাসূলের পদাঙ্ক অনুসরণের মাঝেই নিহিত। তাই যে নিজের জীবনে কল্যাণ, সফলতা আর সৌভাগ্য কামনা করে, সে যেন নবীজীর সীরাত অধ্যয়ন করে। এতে করে সে রাসূলকে চিনতে পারবে। রাসূলের সত্যিকার অনুসারী হতে পারবে। (যাদুল মা’আদ-১/৩৬)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি সীরাত পাঠ এবং তা থেকে কল্যণ লাভের তাওফিক দান করুন। সেইসঙ্গে বিশ্বনবী (স.)-এর আশেক হিসেবে কবুল করুন। আমিন।

এমএ/

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর