মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রমজানের আগমুহূর্তে উম্মতের প্রতি নবীজির বিশেষ বার্তা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৩, ০৫:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

মাহে রমজান এমন একটি মাস যে মাসটিকে মহানবী (স.) সহমর্মিতার মাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। রাসুলুল্লাহ (স.) শাবান মাসের শেষের দিন জুমার খুতবায় একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন। যে বক্তব্যটি বর্ণনা করেছেন বিশিষ্ট সাহাবি সালমান ফারসি (রা.)। 

বক্তব্যে মহানবী (স.) পবিত্র রমজানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য খুব চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, হে মানবজাতি! তোমাদের মাঝে ছায়া বিস্তার করে আসছে একটি সুমহান মাস। যে মাসটি বরকতময়, যে মাসটির মধ্যে একটি রাত রয়েছে, যে রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। হাজার মাস ধরে ইবাদত বন্দেগি করলে যে মর্যাদা পাওয়া যাবে, সেই মর্যাদা আল্লাহ তাআলা ওই একরাতেই দান করবেন। সেই রাতটি হচ্ছে লায়লাতুল কদর।


বিজ্ঞাপন


পবিত্র রমজান পরস্পরের দুঃখ-কষ্ট উপলব্ধি করার মাস। যে ব্যক্তি এই মাসে তার অধীনস্থের দায়িত্ব হালকা করে দেবে আল্লাহ তাআলা তাকে এর বিনিময়ে জান্নাত দান করবেন।

বিত্তবানরা সাধারণত দরিদ্র-অসহায়, না খেয়ে পড়ে থাকা মানুষের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে পারে না। কিন্তু পবিত্র রমজানে সব মুসলিমকে ফরজ রোজা পালন করতে হয়, তাই তারা বুঝতে পারে যে ক্ষুধার জ্বালা কত কষ্টের। তখনই তারা দরিদ্র, মিসকিন ও অসহায়দের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। এজন্য এই মাসটিকে সহানুভূতির মাস বলা হয়ে থাকে।

প্রিয়নবী (স.) পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রমজান মাসে যে ব্যক্তি কোনো দরিদ্রকে বা কোনো রোজাদারকে ইফতার করালো, সে যেন একটি পরিপূর্ণ রোজার সওয়াব লাভ করল। উপরন্তু যে ব্যক্তি রোজা পালন করেছে, তার রোজা থেকে সওয়াব কমতি করা হবে না। (তিরমিজি: ৮০৭; ইবনে মাজাহ: ১৭৪৬)

আর মাহে রমজানকে আল্লাহ পাক দিয়েছেন তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করার জন্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। (সুরা বাকারা: ১৮৩)


বিজ্ঞাপন


পূর্ববর্তী নবী-রাসুলদের উম্মতের ওপরও রোজা ফরজ ছিল। যদিও তা রমজান মাসে ছিল না, বরং তা বিভিন্ন মাসে ও সময়ে ছিল। আর তাদের রোজা একমাস ছিল না। কেউ ৬ মাস, কেউ তিন দিন রোজা রেখেছেন। এভাবে বিভিন্ন নিয়মে রোজা রাখতে হত তাদের। কিন্তু এই উম্মতের ওপর আল্লাহ তাআলা পূর্ণ একমাস রোজা রাখা ফরজ করেছেন।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, বনি আদমের প্রত্যেক নেক আমলের সওয়াব ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। অর্থাৎ কেউ যদি এই মাসটিতে দরিদ্র অসহায়দের প্রতি সহানুভূতিশীল হয় এবং তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করেন অথবা অন্য একটি নেক আমল করেন, কল্যাণজনক কাজ করেন, তার প্রতিদানটা কতটুকু হবে? সে সম্পর্কে নবী (স.) বলেছেন, তার প্রত্যেকটি কাজ ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করে দেওয়া হবে। আবার যদি সেই আমলটি ইখলাস ও ভালোবাসার সাথে হয়, তাহলে নবীজি (স.)-এর হাদিস অনুযায়ী, আল্লাহ তাআলা তাকে যত ইচ্ছা সওয়াব দান করবেন।

হাদিসে এসেছে, জান্নাতের ৮টি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে রাইয়ান। ওই দরজা দিয়ে শুধুমাত্র রোজাদাররাই প্রবেশ করবে, অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। 

এসব হাদিসের আলোকে আমরা বুঝতে পারি, একজন রোজাদারের অনেক মর্যাদা ও ফজিলত রয়েছে। একইসঙ্গে দরিদ্র-অসহায়দের প্রতি সহানুভূতিশীল হলে, শুধুমাত্র একজন রোজাদারকে ইফতার করালেই নিজের রোজার সওয়াব ছাড়া বাড়তি একটি রোজার সওয়াব দান করা হবে। সুতরাং এই মাসে অভাবীদের দান সদকা করার অনেক ফজিলত রয়েছে। 

এই মাসে বেশি বেশি দান-সদকা করার ফজিলত বর্ণনা করেছেন রাসুল (স.)। আমাদের যাদের জাকাত ফরজ হয়নি তারাও নফল সদকা করতে পারি। কেননা রমজান মাসের যেকোনো নফল ইবাদত অন্য মাসের ফরজের সমান। 

এই মাসে যদি আমরা কারো অভাব মোচন করে দেই কিংবা কাউকে সদকা করি সেই সম্পর্কে সুনানে তিরমিজির হাদিসে নবী (স.) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে কল্যাণের রাস্তাসমূহ দেখিয়ে দেব না? তখন মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) বলেন, হ্যাঁ আল্লাহর রাসুল আপনি বলে দিন। তখন নবীজি (স.) বললেন, রোজা হচ্ছে ঢালস্বরূপ এবং সদকা হচ্ছে গুনাহকে এমনভাবে মোচন করে দেয়, যেভাবে পানি আগুনকে নির্বাপিত করে দেয়।

অতএব এই মাসটিতে দরিদ্র-অসহায়দের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে দান-সদকা করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যাবে। এমনকি সে যদি জাহান্নামেরও উপযুক্ত হয়ে থাকে, জাহান্নামের আগুনকে তার জন্য নির্বাপিত করে দেওয়া হবে। জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম করে দেওয়া হবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজানে দরিদ্র-অসহায়দের প্রতি, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর