রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ইসলামে নতুন চাঁদ দেখা ও দোয়া পড়ার গুরুত্ব

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০২৩, ০৬:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

ইসলামে নতুন চাঁদ দেখা ও দোয়া পড়ার গুরুত্ব

দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র রমজান। একখানি বাঁকা চাঁদের অপেক্ষায় পুরো মুসলিম বিশ্ব। নতুন চাঁদটি দেখা দিলেই শুরু হবে মহিমান্বিত মাস রমজান। রমজান মাসের রোজা, হজ ও কোরবানির মতো ইসলামের বহু গুরুত্বপূর্ণ বিধান চন্দ্রমাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা তোমার নিকট নতুন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে? বলে দাও— এটি মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ এবং হজের সময় ঠিক করার মাধ্যম।’ (সুরা বকারা: ১৮৯)

ইসলামি আইনজ্ঞদের মত হলো—চন্দ্রমাসের হিসাব সংরক্ষণ করা মুসলিম উম্মাহর জন্য ফরজে কেফায়া। অর্থাৎ মুসলিম জাতির অন্তত একটি দল সর্বদা চন্দ্রমাসের হিসাব সংরক্ষণ করবে। তা না হলে সবাই গুনাহগার হবে। 

রাসুলুল্লাহ (স.) নিজে চাঁদ দেখতেন এবং অন্যদের উৎসাহিত করতেন। বিশেষত রমজানের চাঁদ দেখার ব্যাপারে একাধিক হাদিসে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) শাবান মাসের খুব হিসাব করতেন। এছাড়া অন্য কোনো মাসের এত হিসাব করতেন না। এরপর রমজানের চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন। আকাশ মেঘলা থাকার কারণে চাঁদ দেখা না গেলে শাবান মাস ৩০ দিনে গণনা করতেন, অতঃপর রোজা রাখতেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৩২৫)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজান মাসের জন্য শাবান মাসের চাঁদের হিসাব রেখো।’ (সুনানে তিরমিজি: ৬৮৭)

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) উল্লিখিত হাদিসের অর্থ করেন—‘তোমরা হিসাব সংরক্ষণের চেষ্টা করো। এভাবে যে তোমরা চাঁদের উদয়স্থল অনুসন্ধান করবে এবং নিয়মিত সেদিকে তাকাবে (লক্ষ্য রাখবে)। যেন রমজানের চাঁদ তোমরা নিজ চোখে দেখতে পারো এবং তা তোমাদের থেকে ছুটে না যায়।’ (তুহফাতুল আহওয়াজি: ৩/২৪৯)

সৌদি আরবসহ আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনো রমজানের আগে রাষ্ট্রীয়ভাবে জনসাধারণকে চাঁদ দেখতে উৎসাহিত করা হয়। সাধারণ মুসলিমরাও আগ্রহের সঙ্গে চাঁদ দেখে। দুই তিন দশক আগেও বাংলাদেশের শহর ও গ্রাম অঞ্চলে দলবেঁধে রোজা ও ঈদের চাঁদ দেখার প্রচলন ছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তা বহুলাংশে হ্রাস পাচ্ছে।

যেহেতু রাসুলুল্লাহ (স.) নিজে রমজানের চাঁদ দেখতেন এবং চাঁদের দেখার নির্দেশ দিয়েছেন তাই ইসলামি আইনজ্ঞরা বলেন, সাধারণ মুসলমানের জন্য চাঁদ দেখা মোস্তাহাব। 

নতুন মাসের চাঁদ দেখে মহানবী (স.) খুশি প্রকাশ করতেন এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতেন। কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) নতুন চাঁদ দেখে বলতেন, ‘কল্যাণ ও হেদায়াতের চাঁদ, কল্যাণ ও হেদায়াতের চাঁদ, কল্যাণ ও হেদায়াতের চাঁদ। যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন আমি তাঁর ওপর ঈমান আনলাম—এই বাক্য তিনবার বলতেন। অতঃপর বলতেন, আল্লাহর প্রশংসা যিনি অমুক মাস শেষ করলেন এবং এই মাস এনে দিলেন।’ (আবি দাউদ: ৫০৯২)

নতুন মাসের চাঁদ দেখে দোয়া করা সুন্নত। নতুন মাসটি যেন বিপদমুক্ত, নিরাপদ, বরকতপূর্ণ, ঈমানদীপ্ত ও শান্তিময় হয়, সেজন্য আল্লাহ তাআলার কাছে প্রিয়নবী (স.) দোয়া করতেন। 

নতুন চাঁদ দেখার দোয়া
 اللَّهُمَّ أهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالأمْنِ وَالإيمانِ، وَالسَّلاَمَةِ وَالإسْلاَمِ، رَبِّي وَرَبُّكَ اللهُ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলামি, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ। অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি ওই চাঁদকে আমাদের ওপর উদিত করো নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে। (হে চাঁদ) আমার ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহ। হেদায়াত ও কল্যাণের চাঁদ। (সুনানে তিরমিজি: ১২২৮)

ছোট্ট এই দোয়ায় রাসুলুল্লাহ (স.) অনেক কিছু প্রার্থনা করেছেন। আমরা দুনিয়ার বিপদ-আপদ থেকে বাঁচার জন্য, নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে থাকি। কিন্তু প্রিয়নবী (স.) প্রতি মাসের শুরুতে চাঁদ দেখেই এই অবলম্বন চেয়ে নিতেন।

যেকোনো মাসের নতুন চাঁদ, এমনকি রোজা ও ঈদের চাঁদ দেখার দোয়াও এটি। মহানবী (স.) নতুন চাঁদ দেখেই দোয়াটি পড়তেন। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত প্রতি মাসে চাঁদ দেখার চেষ্টা করা এবং চাঁদ দেখে দোয়া করা।

আসন্ন পবিত্র রমজানের চাঁদ বিশ্ব মুসলিমের জন্য বয়ে আনুক ঈমানি শক্তি, অনাবিল শান্তি, আল্লাহর রহমত ও হেদায়ত। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে নবীজির সুন্নতের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর