জাকাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো, যাকাত আদায় করো। আর তোমরা নিজেদের জন্য যে উত্তম আমল করে থাকো তার প্রতিদান মহান আল্লাহর নিকট পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যেসব নেক আমল করে থাকো তা আল্লাহ দেখেন।’ (সুরা বাকারা: ১১০)
জাকাতে দারিদ্র্য বিমোচন হয়। বিত্তবানদের সম্পদ পবিত্র হয়। জাকাত অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করে এবং সমাজে শান্তি আনে। এটি মহান আল্লাহর অবশ্যপালনীয় বিধান। কেউ জাকাতের বিধান অস্বীকার করলে সে মুসলিম হিসেবে গণ্য হবে না। তাকে অতিসত্বর তার ঈমান নবায়ন করে নিতে হবে। (ফাতহুল বারি: ৩/৩০৯)
বিজ্ঞাপন
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জাকাত আদায় না করলে কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং যারা সোনা ও রুপা জমা করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, আপনি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দিন, যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দিয়ে তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) এটা তা-ই, যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ করো।’ (সুরা তাওবা: ৩৪-৩৫)
আরও পড়ুন: জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ
এই আয়াতে জমা করা সোনা-রুপাকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে সেই সোনা-রুপা দিয়েই শাস্তি দেওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। এখানে অবৈধভাবে জমাকৃত অর্থ-সম্পদেরও জাকাত আদায় না করা বা পরিপূর্ণভাবে আদায় না করা আজাবের কারণ হিসেবে ধর্তব্য হবে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে ‘রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর জাকাত আদায় করেনি, কেয়ামতের দিন তার সম্পদকে টাক (বিষের তীব্রতার কারণে) মাথাবিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দিয়ে তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের দুই পাশ কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত সম্পদ।’ (বুখারি: ১৪০৩)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: মেরাজে নবীজির দেখা কিছু পাপের ভয়ঙ্কর শাস্তি
যারা তাদের পালিত পশুর জাকাত আদায় করে না, তাদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘আর যেসব উট, গরু ও ছাগলের মালিক এর জাকাত আদায় করবে না, কেয়ামতের দিন উট, গরু, ছাগল মোটাতাজা অবস্থায় মালিকের নিকট আসবে এবং তাকে (মালিককে) ওদের পা ও খুর দিয়ে দলিত-মথিত করবে এবং শিং দিয়ে আঘাত করবে। এক পশু অতিক্রম শেষ করলে প্রথমটি পুনরায় এসে এমন করতে থাকবে। আর এভাবে চলতে থাকবে, যতক্ষণ না মানুষের বিচার শেষ হবে। (মুসলিম: ২১৯০)
পক্ষান্তরে জাকাত আদায়কারীর জন্য রয়েছে মহাপুরস্কারের ঘোষণা। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা সালাত আদায় করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদেরকে মহাপুরস্কার দিব।’ (সুরা নিসা: ১৬২)
তাই আসুন, আমরা সবাই সঠিকভাবে জাকাত আদায় করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি। দুনিয়ার লোভ-লালসা ত্যাগ করি। মহান আল্লাহর ভয়াবহ শাস্তি থেকে নিজেদের রক্ষা করি। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।

