শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

শাবান মাসে আইয়ামে বিজের রোজার গুরুত্ব

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ মার্চ ২০২৩, ১২:২১ পিএম

শেয়ার করুন:

শাবান মাসে আইয়ামে বিজের রোজার গুরুত্ব

আইয়ামে বিজ তথা প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখার গুরুত্ব অনেক বেশি। সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব হয় এই তিনটি রোজায়। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘প্রতি মাসে তিনটি করে রোজা রাখা সারাবছর রোজা রাখার সমান।’ (বুখারি: ১১৫৯, ১৯৭৫)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধু রাসুলুল্লাহ (স.) আমাকে তিনটি অসিয়ত করেছেন—এক. প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা, দুই. দুই রাকাত চাশতের নামাজ পড়া, তিন. ঘুমের আগে বিতরের নামাজ পড়া।’ (সহিহ বুখারি: ১১৭৮)

হাদিসগুলো প্রমাণ করছে, আইয়ামে বিজের রোজা অত্যধিক সওয়াব লাভের আমল এবং নবীজি (স.)-এর পছন্দের আমল। শাবান মাসে এই তিন রোজার গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। কেননা প্রিয়নবী (স.) রমজান ছাড়া অন্য যেকোনো মাসের চেয়ে শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি রোজা রাখতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি নবী কারিম (স.)-কে শাবান মাসের মতো এত অধিক (নফল) রোজা অন্যকোনো মাসে রাখতে দেখিনি। এ মাসের অল্প ক’দিন ছাড়া বলতে গেলে সারা মাসই তিনি রোজা রাখতেন। (তিরমিজি: ৭৩৭)

আরও পড়ুন: শাবান মাসে নবীজির প্রিয় আমল

শাবান মাসে ইবাদত বন্দেগীর গুরুত্ব বোঝাতে নবীজি (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘রমজান ও রজবের মধ্যবর্তী এ মাসের ব্যাপারে মানুষ উদাসীন থাকে। এটা এমন মাস, যে মাসে বান্দার আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আমি চাই, আল্লাহর কাছে আমার আমল এমন অবস্থায় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার।’ (সুনানে নাসায়ি: ২৩৫৭)

এছাড়াও শাবান মাসে আইয়ামে বিজের সময়ের মধ্যেই রয়েছে এক মর্যাদাপূর্ণ রাত ‘শবে বরাত’। ১৪ শাবান দিবাগত রাতকে শবে বরাত বলা হয়। একাধিক সহিহ হাদিসে শবে বরাতের মর্যাদা প্রমাণিত। এ রাতের মাহাত্ম্য সম্পর্কে রয়েছে বিশিষ্ট ইমামগণের নির্ভরযোগ্য বহু বক্তব্য। শবে বরাতে আল্লাহর অপার অনুগ্রহ নাজিল হয়। বিখ্যাত সাহাবি মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তাঁর সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া ‘গুনাহের কাজ’

তাই শাবান মাসে আইয়ামে বিজের রোজা রাখতে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন আলেমরা। আর নফল রোজা শুধু সওয়াবের মাধ্যম নয়, জাহান্নাম থেকেও রোজাদারকে দূরে সরিয়ে দেয়। রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে তার থেকে ১০০ বছরের দূরত্বে সরিয়ে রাখবেন। (আস সিলসিলাতুস সহিহাহ: ২৫৬৫, খণ্ড-৬)

সুতরাং, আগামী তিনটি দিন সোমবার থেকে বুধবার (৬ মার্চ-৮ মার্চ) মুসলিম উম্মাহর জন্য গুনাহ মাফ, সওয়াব লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভের জন্য সুন্দর একটি সুযোগ। 

উল্লেখ্য, আগামী সোমবার থেকে বুধবার (৬ মার্চ-৮ মার্চ) বাংলাদেশসহ ওমান, আলজেরিয়া, মরক্কো, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যে আইয়ামে বিজের রোজা রাখার সময়।

অন্যদিকে, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, বাহরাইন, ইয়েমেন. ‍সিরিয়া, তুর্কিয়ে, মিশর, সুদান, তিউনিশিয়া, উজবেকিস্তান, আফগানিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও জার্মানিতে আইয়ামে বিজের রোজা রাখার সময় হলো রোববার (৫ মার্চ-৭ মার্চ) থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত।

যদি আপনার দেশ এই লিস্টে না থাকে তাহলে অনুগ্রহ করে ইসলামিক ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে তারিখ নিশ্চিত হয়ে নিন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে শাবান মাসে আইয়ামে বিজের রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর