আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পেয়ে মহানবী (স.) প্রথমে নিজ পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের ইসলামের দাওয়াত দেন। এ সময় বেশ কয়েকজন নারী ও পুরুষ ইসলাম গ্রহণ করেন। পবিত্র কোরআনে যাঁদেরকে ‘সাবিকুনাল আউয়ালুন’ (প্রথমদিকের অগ্রগামী) আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সিরাত গবেষকদের বর্ণনামতে, এমন নারী ও পুরুষের সংখ্যা সব মিলিয়ে ৪০ থেকে ৫০ জনের মধ্যে। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ৯০-৯১)
সর্ব সম্মতিক্রমে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর আহ্বানে সর্বপ্রথম যিনি সাড়া দেন তিনি হলেন উম্মুল মুমিনিন খাদিজাতুল কুবরা (রা.)। ড. আলী মুহাম্মদ সাল্লাবির বর্ণনামতে, প্রথম ইসলাম গ্রহণের ধারাক্রমটি নিম্নরূপ—
বিজ্ঞাপন
১. খাদিজাতুল কুবরা (রা.)।
২. আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)। কিশোরদের মধ্যে তিনিই প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন।
৩. রাসুলুল্লাহ (স.)-এর পালকপুত্র জায়িদ বিন সাবিত (রা.)
৪. রাসুলুল্লাহ (স.)-এর চার কন্যা তথা জয়নব, উম্মে কুলসুম, ফাতিমা ও রুকাইয়া (রা.)
৫. আবু বকর সিদ্দিক (রা.)। তাঁর প্রচেষ্টায় আরো পাঁচ পুরুষ ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁরা হলেন—ওসমান ইবনে আফফান (রা.), আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.), সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.), জুবায়ের ইবনে আউয়াম (রা.) ও তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রা.)। (আস-সিরাতুন-নববিয়্যা, পৃষ্ঠা: ৮৬-৯০)
প্রথম পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণকারী আরো কয়েকজন হলেন—আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ, আবু সালামা ইবনে আবদুল আসাদ, আরকাম ইবনে আবুল আরকাম, উসমান ইবনে মাজউন, তাঁর দুই ভাই কুদামা ও আবদুল্লাহ, উবাইদা ইবনে হারিস, সাঈদ ইবনে জায়িদ, ওমর (রা.)-এর বোন ফাতিমা, আসমা বিনতে আবু বকর, খাব্বাব ইবনে আরাত, উমায়ের ইবনে আবু ওয়াক্কাস, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, মাসউদ ইবনে কারি, সালিত ইবনে আমর, আইয়াশ ইবনে আবু রাবিয়া, আসমা বিনতে সুলামা, খুনাইস ইবনে হুজাফা, আমের ইবনে রাবিয়া, আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশ, তার ভাই আবু আহমদ, জাফর ইবনে আবি তালিব, আসমা বিনতে উনাইস, হাতিব ইবনে হারিস, ফাতিমা বিনতে মুজাল্লাল, হুতাব ইবনে হারিস, ফুকাইহা বিনতে ইয়াসার, মা’মার ইবনে হারিস, সায়িব ইবনে উসমান, মুত্তালিব ইবনে আজহার, রামলা বিনতে আবু আউফ, নাঈম ইবনে আবদুল্লাহ, আমের ইবনে ফুহাইর, খালিদ ইবনে সাঈদ, আমিনা বিনতে খালাফ, হাতিব ইবনে আমর, আবু হুজাইফা ইবনে উতবা, ওয়াকিদ ইবনে আবদুল্লাহ, বুকাইরের পুত্র খালিদ, আমের, আকিল, ইয়াস, আম্মার ইবনে ইয়াসার, সুহাইব ইবনে সিনান (রা.) প্রমুখ। (সিরাতে ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা: ৫৯-৬০)
প্রসঙ্গত, মহানবী (স.)-এর দাওয়াতে যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তাঁরা সবাই জলিলুল কদর সাহাবি। কেয়ামত পর্যন্ত তাঁরা সম্মানিত। সাহাবিরা উম্মাহর শ্রেষ্ঠ মানুষ এবং অনুসরণীয়। তাঁদের সংখ্যা এক লাখের বেশি। যদিও সঠিক সংখ্যা নিয়ে মতানৈক্য আছে। ইমাম মুসলিমের উস্তাদ হাফেজ আবু জুরয়া (রহ.) দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, সাহাবিদের সংখ্যা এক লাখ ১৪ হাজার। (আল জামে: ২/২৯৩, খতিব বাগদাদি)। জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) বলেন, সাহাবিদের সংখ্যা এক লাখ ২৪ হাজার। (আল খাসাইসুল কুবরা)।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সাহাবিদের অনুসরণে সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। বিশুদ্ধ ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

