সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

অসুস্থতায় গুনাহ মাফ, আবার দ্বিগুণ সওয়াব যেভাবে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০২২, ০৬:০৫ পিএম

শেয়ার করুন:

অসুস্থতায় গুনাহ মাফ, আবার দ্বিগুণ সওয়াব যেভাবে

সুস্থতা যেমন নেয়ামত, মুমিনের জন্য অসুস্থতাও বড় নেয়ামত। আসলে ‘মুমিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক। সবকিছুই তার জন্য কল্যাণকর; মুমিন ছাড়া আর কারও এই বৈশিষ্ট্য নেই। তার জন্য আনন্দের কোনো কিছু হলে সে আল্লাহর শোকর করে; তাতে কল্যাণ হয়। আবার ক্ষতিকর কিছু হলে সে ধৈর্যধারণ করে, এতেও তার কল্যাণ হয়।’ (মুসলিম: ৫৩১৮)

অসুস্থতার সঙ্গে আল্লাহর নাফরমানির কোনো সম্পর্ক নেই। নবী-রাসুলগণও অসুস্থ হতেন। অথচ তাঁরা ছিলেন সৃষ্টির সেরা মাখলুক। মহান আল্লাহ বান্দাকে অসুস্থতা, ভয়, দুঃখ-বেদনা ও বিপদ-আপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। কিন্তু দ্বিগুণ সওয়াবের কারণ কী? এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে—


বিজ্ঞাপন


হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি অসুস্থ। আমি তাঁর শরীরে হাত দিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার শরীরে অত্যন্ত জ্বর। তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। তোমাদের দুই জনের সমান জ্বরে ভুগছি। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম- তাহলে তো এতে আপনার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব অর্থাৎ প্রতিদান। তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। (বুখারি: ৫৬৪৮)

সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় এ হাদিসের বর্ধিত অংশে আছে, ‘কোনো মুসলিম ব্যক্তি রোগ-ব্যাধি বা অন্য কোনো মাধ্যমে কষ্টে পতিত হলে, আল্লাহ এর দ্বারা তার পাপগুলোকে এমনভাবে মুছে দেন, যেমনভাবে গাছ থেকে পাতাগুলে ঝরে পড়ে।’  (মুসলিম: ২৫৭১)

সুতরাং অসুখ-বিসুখ ও সকল প্রকার বিপদাপদে দ্বিগুণ সওয়াব লাভের আশায় এবং গুনাহ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ধৈর্যধারণ করা উচিত।

আল্লাহ তাআলা অসুস্থতাকে ব্যক্তির গুনাহের কাফফারা হিসেবেও নির্ধারণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে—


বিজ্ঞাপন


নবীজি (সা.) বলেন, ‘সত্যের কাছাকাছি থাকো এবং সরল-সোজা পথ অবলম্বন করো। মুমিনের যে কষ্টই হোক না কেন, এমনকি তার গায়ে যদি কোনো কাঁটা বিঁধে বা সে কোনো বিপদে পতিত হয়—সব কিছুই তার গুনাহর কাফফারা হয়ে যায়।’ (তিরমিজি: ৩০৩৮)

বস্তুত মুমিন বান্দার মঙ্গল দুঃখ-কষ্টের মধ্যে নিহিত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবিজী (স.) বলেছেন—

‘আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ কামনা করেন, তাকে তিনি দুঃখকষ্টে পতিত করেন।’ (বুখারি: ৫৬৪৫)

মনে রাখা উচিত, অসুস্থতা বা রোগ-ব্যাধির নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। এমনকি ছোঁয়াচে রোগও সংক্রমণের কারণে হয় না। অনেকে এ বিষয়ে ভুল বুঝে থাকেন। সকল প্রকার অসুস্থতাই দেওয়ার মালিক যেমন আল্লাহ, দূর করার মালিকও একমাত্র আল্লাহ। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে—

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (স.) ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই বললে জনৈক বেদুইন আরব জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে সেই উটপালের অবস্থা কী, যা কোনো বালুকাময় প্রান্তরে অবস্থান করে এবং সুস্থ-সবল থাকে? অতঃপর সেখানে কোনো খুজলি-পাঁচড়ায় আক্রান্ত উট এসে সবগুলোকে ওই রোগে আক্রান্ত করে ছাড়ে? (উত্তরে) তিনি বলেন, তাহলে প্রথম উটটিকে কে রোগাক্রান্ত করেছিল? যে মহান আল্লাহ প্রথম উটটিকে রোগাক্রান্ত করেছিলেন, তিনিই তো অন্যান্য উটকে আক্রান্ত করেছেন। (মুসলিম: ৫৭৪২) তবে আল্লাহ কোনো রোগে সংক্রমিত হওয়ার গুণ দিয়ে থাকলে তা সংক্রমিত হবে। তা থেকে নিরাপদে থাকতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, অসুস্থ উটগুলোকে সুস্থ পশুর দলে পাঠিয়ে দেবে না। (মুসলিম: ২৮৭৩)

বান্দা যদি অসুখ-বিসুখ ও পরীক্ষায় ধৈর্যধারণ করতে সক্ষম হয়, তাহলে দুনিয়ার এই কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহ তাকে আখেরাতে সম্মানিত করেন এবং তাকে এত বিশাল পুরস্কার প্রদান করেন যে, দুনিয়ার সুস্থ ব্যক্তিরা নিজেদের রোগ না হওয়ার জন্য আক্ষেপ করবে। জাবের (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) এরশাদ করেছেন—

يَوَدُّ أَهْلُ العَافِيَةِ يَوْمَ القِيَامَةِ حِيْنَ يُعْطَى أَهْلُ البَلَاءِ الثَّوَابَ لَوْ أَنَّ جُلُودَهُمْ كَانَتْ قُرِضَتْ فِي الدُّنْيَا بِالـمَقَارِيْضِ، ‘কেয়ামতের দিন বিপদে পতিত ব্যক্তিদের যখন প্রতিদান দেওয়া হবে, তখন (পৃথিবীর) বিপদমুক্ত মানুষেরা আফসোস করে বলবে, হায়! দুনিয়াতে যদি কাঁচি দ্বারা তাদের শরীরের চামড়া কেটে টুকরো টুকরো করে দেওয়া হতো!’। (তিরমিজি: ২৪০২; মেশকাত:১৫৭০, সনদ হাসান)

সুতরাং, মুমিন মুসলমানের উচিত, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নেওয়া সকল পরীক্ষায় ধৈর্যধারণ করা। আর তাতে একাধারে মিলবে গুনাহ থেকে মুক্তি, বাড়বে মর্যাদা এবং অর্জিত হবে দ্বিগুণ সাওয়াব।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিপদ-আপদ কিংবা রোগ-ব্যধিতে তাঁর উপর অবিচল আস্থা ও ভরসা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর