বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

অন্যের প্রতি ভালো ধারণা: ইসলাম কী বলে?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:২৪ এএম

শেয়ার করুন:

অন্যের প্রতি ভালো ধারণা: ইসলাম কী বলে?

ইসলাম স্বচ্ছতার ধর্ম। এখানে কারও প্রতি খারাপ ধারণা করার সুযোগ নেই। সুন্দর ও উন্নত সমাজ বিনির্মাণে মানুষে মানুষে সুধারণা পোষণ করতে উৎসাহিত করেছে ইসলাম। অনুমান করা থেকে বিরত থাকতে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ—“হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোনো কোনো অনুমান পাপ। (সূরা হুজরাত: ১২)

আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন, ‘যখন তারা এটা শুনল, তখন মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারীরা আপন লোকদের সম্পর্কে কেন ভালো ধারণা করল না এবং বলল না, এটা তো নির্জলা অপবাদ। ’ (সুরা নুর: ১২)


বিজ্ঞাপন


অন্যের ব্যাপারে উত্তম ধারণার প্রতি তাকিদ দিয়ে হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে—

 ‘সুন্দর ধারণা সুন্দর ইবাদতের অংশ।’ (আবু দাউদ: ৪৯৯৩)

সকল মুসলিম ভাই ভাই। কিন্তু ভাইয়ের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করার কারণে ভাতৃত্ববোধ কলুষিত হয়। এমনকি কারও ক্ষেত্রে ছিদ্রান্বেষণ ও গীবতের মতো মারাত্মক পাপ সংঘটিত হয় এই কুধারণা থেকেই। তাই প্রমাণহীন কোনো বিষয়ে শুধুমাত্র ধারণা করাকে ‘বড় মিথ্যা’ ঘোষণা করেছেন বিশ্বনবী (স.)। ইরশাদ হয়েছে—

‘তোমরা মন্দ ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা তা সবচেয়ে বড় মিথ্যা।’ (সহিহ বুখারি: ৬০৬৪)

 

অনুমাননির্ভর কোনো কথার ওপর যদি অধিকাংশ মানুষও একমত হয়, তবুও যাচাই করে নিতে হবে সত্যতার ভিত্তি কী, অন্যথায় বিভ্রান্তিতে পড়তে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন—

‘আর যদি আপনি অধিকাংশ লোকের কথামত চলেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। তারা তো ধারণার অনুসরণ করে; আর তারা শুধু অনুমানভিত্তিক কথা বলে।’ (সূরা আনআম: ১১৬)

তাই দলিল বা সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া কোনো বিষয়ে হৈচৈ করা বা আন্দাজে কথা বলা মুসলমানদের জন্যে শোভনীয় নয়। এতে আল্লাহ তাআলার পছন্দের বান্দাটিও হতে পারেন অপদস্ত। সমাজে বিভক্তি তৈরি হতে পারে। তাই প্রিয়নবী (স.)-এর ইরশাদ—

‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।’ (বুখারি: ৬০১৮)

এছাড়াও যারা নিছক ধারণার উপর ভিত্তি করে নিজেকে পরিচালনা করে তাদের কাছ থেকে কৈফিয়ত নেওয়া হবে বলে সাবধান করা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। আল্লাহ তাআলা বলেন—

‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হইয়ো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয়—প্রত্যেকের কাছে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ (সূরা বনি ইসরাইল: ৩৬)

রাসূলুল্লাহ সা: আরও বলেন-

‘যারা মৌখিক স্বীকৃতির মাধ্যমে ঈমান এনেছ, অথচ এখনও অন্তঃকরণে ঈমান পৌঁছেনি! তোমরা মুসলিমদের নিন্দা করো না, তাদের ছিদ্রান্বেষণ করো না। কেননা, যে ব্যক্তি অপরের দোষ খোঁজে আল্লাহ তার দোষ অনুসন্ধান করেন। আর আল্লাহ যার দোষ তালাশ করেন, তাকে তার নিজস্ব বাসগৃহেই অপদস্থ করেন’ (আবু দাউদ: ৪৮৮০)

মুমিনরা মূলত মন্দ ধারণা অপছন্দ করেন। মনে তেমন কিছুর উদ্রেক হলে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের মনের মধ্যে এমন কিছু চিন্তার উদ্রেক হয়, যা সূর্য উদিত হওয়ার পরিধির মধ্যকার (মূল্যবান) সব কিছুর বিনিময়েও প্রকাশ করা আমরা সমীচীন মনে করি না। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কি তা অনুভব করো? তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, এটিই ঈমানের সুস্পষ্ট পরিচয়। ’ (আদাবুল মুফরাদ: ৩)

মন্দ ধারণা থেকে আত্মরক্ষা

মুমিন যেমন অন্যের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করে না, তেমন নিজেকেও অন্যের মন্দ ধারণা থেকে রক্ষা করে। মন্দ ধারণা হতে পারে এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে তা ব্যাখ্যা করে দেওয়াও মুমিনের দায়িত্ব। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একবার নবী (সা.) তাঁর কোনো এক স্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। তখন তাঁর কাছ দিয়ে এক ব্যক্তি অতিক্রম করল। নবী (সা.) তাকে ডেকে বলেন, হে অমুক, এ আমার স্ত্রী অমুক। সে বলল, আমি হয়তো কারো সম্পর্কে ধারণা-অনুমান করতে পারি; কিন্তু আপনার সম্পর্কে কখনো ধারণা-অনুমানে লিপ্ত হই না। তিনি বলেন, শয়তান রক্তপ্রবাহের মতো মানুষের ভেতরে বিচরণ করে। ’ (আবু দাউদ: ৪৭১৯)

মন্দ ধারণা থেকে বাঁচার আমল

কারও মনে মন্দ ধারাণা উদয় হয়েছে, কিন্তু তা থেকে তিনি পরিত্রাণ পেতে চান, এই অবস্থায় তার করণীয় হলো— যথাসম্ভব মন্দ ধারণাকে মনে জায়গা না দেওয়ার চেষ্টা করা এবং তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলা।

শাহর ইবনে হাওশাব (রহ.) থেকে বর্ণিত, আমি ও আমার মামা আয়েশা (রা.)-এর কাছে উপস্থিত হলাম। মামা বলেন, আমাদের কারো মনের মধ্যে এমন কিছুর উদ্রেক হয়, সে তা ব্যক্ত করলে তার আখিরাত ধ্বংস হয়ে যায় এবং তা প্রকাশ পেলে সে জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। বর্ণনাকারী বলেন, আয়েশা (রা.) তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি করার পর বলেন, এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বলেছেন—

‘তোমাদের কারো অন্তরে তা অনুভব করলে সে তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে। মুমিন ব্যক্তিই এটা অনুভব করে থাকে।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৪)

তবে, মানুষের পক্ষে প্রাথমিক ধারণা থেকে বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উম্মতের সেসব অসওয়াসা ক্ষমা করে দিয়েছেন, যা তাদের মনে উদিত হয় বা যেসব কথা মনে মনে বলে থাকে; যতক্ষণ না তা বাস্তবে করে বা বলে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৬৬৪)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অন্যের ব্যাপারে মন্দ ধারণা পোষণ করা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

এমএ/

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর