রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ইমাম বুখারির দেখা সেই স্বপ্নটি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০১:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

ইমাম বুখারির দেখা সেই স্বপ্নটি

শুক্রবার জুমার নামাজের পর উজবেকিস্থানের বুখারায় জন্মেছিলেন হাদিসশাস্ত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি ইমাম বুখারি (রহ)। দিনটি ছিল ১৯৪ হিজরির ১৩ শাওয়াল। তাঁর উপনাম আবু আব্দুল্লাহ। পুরো নাম মুহাম্মদ বিন ইসমাইল বিন ইবরাহিম বিন মুগিরা বিন বারদিজবাহ।

বাল্যকালে মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকা অবস্থায় বসন্ত রোগে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এক রাতে তাঁর মা স্বপ্নে ইবরাহিম (আ.)-কে দেখেন। ইবরাহিম (আ.) তাঁকে বলেন, ‘তোমার কান্নাকাটির কারণে আল্লাহ তাআলা তোমার সন্তানের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন।’ সকালে উঠে তিনি দেখতে পান যে তাঁর সন্তানের দৃষ্টিশক্তি ফিরে এসেছে। তিনি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। (গোলাম রসুল সাঈদি, তাজকেরাতুল মোহাদ্দেসিন, পৃষ্ঠা-১৭২)


বিজ্ঞাপন


বাল্যকাল থেকেই ইমাম বুখারির চরিত্রে তাকওয়া, পরহেজগারি, বিশ্বস্ততা ইত্যাদি গুণাবলী ভেসে উঠেছিল। তিনি শরিয়তের পূর্ণাঙ্গ অনুসারী ছিলেন। নবীজির প্রতি তিনি অত্যধিক ভালোবাসা পোষণ করতেন। ফলে বেশ কয়েকবার প্রিয়নবী (স.)-কে স্বপ্নে দেখেন তিনি। 

ইমাম বুখারি বলেন, ‘আমি একদা প্রিয়নবী (স.)-কে স্বপ্নে দেখি যে, আমি তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার হাতে পাখা ছিল যা দিয়ে তাঁকে বাতাস করছিলাম।’ এর ব্যাখ্যায় স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারক বলেন, নবীজির দিকে সম্পর্কিত অসত্য কথাগুলো থেকে তুমি শুদ্ধ কথাগুলো বের করে আনবে। তখন থেকেই আমার মনে এ ধরনের গ্রন্থের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। যার জন্য আমি আমার জীবনের ১৬ টি বছর অতিবাহিত করেছি। বিশিষ্ট মোহাদ্দিস নজম ইবনে ফুজাইল (রহ) বলেন, ‘একদা আমি রাসুলে পাক (স.)-কে স্বপ্নে দেখলাম যে, তিনি রওজা মোবারক থেকে বের হয়ে আসছেন আর ইমাম বুখারি তাঁর পেছনে পেছনে হাঁটছেন। নবীজি যে স্থানে পা মোবারক রাখেন তাঁর পা তোলার পর ইমাম বুখারি ঠিক সে স্থানেই পা রেখে হাঁটছেন’। (খতিব বাগদাদী, তারিখু বাগদাদ, খণ্ড-২য়: পৃ- ১০)

ইমাম বুখারি মুসলিম বিশ্বে এতই মর্যাদাবান যে, তার সহপাঠীরা তো বটেই, তার সম্মানিত উস্তাদগণও তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। ইবনে আল মুরজি (মৃত্যু- ২৪৯ হিঃ/৮৬৩ খ্রিঃ) বলেন, ‘তিনি হচ্ছেন মহান আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে অন্যতম, যা ধরণীর বুকে বিচরণ করছে। (ইবনে কাসির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, পৃ- ৪৮২)

মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক ইবনে খুজাইমা (রহ) (মৃত্যু ২২৩/ ৮৩৭) বলেন, ‘আকাশের নিচে ইমাম বুখারি অপেক্ষা হাদিস শাস্ত্রে সর্বাধিক জ্ঞানী ও অধিক সংরক্ষণকারী আমি আর কাউকে দেখিনি।’ (ইবনে হাজর, তাজকিরাতুল হুফফাজ, খণ্ড-২, পৃ-৫৫৬)

ইমাম বুখারি অনেক যাচাই-বাছাই করে লক্ষ লক্ষ হাদিস থেকে গবেষণা চালিয়ে সর্বাধিক বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ সহিহ বুখারি সংকলন করেন। পৃথিবীর সকল মোহাদ্দিস একমত যে, ইমাম বুখারি সংকলিত ‘সহিহুল বুখারি’তে সহিহ হাদিস ছাড়া অন্য কোনো হাদিস স্থান দেননি। এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারি বলেন, ‘আমি এ গ্রন্থে সহিহ হাদিস ব্যতীত একটি হাদিসও সংযোজন করিনি। আর গ্রন্থের পরিধি বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক সহিহ হাদিস লিপিবদ্ধ না করে ছেড়ে দিয়েছি। অর্থাৎ, এ গ্রন্থের বাইরেও অনেক সহিহ হাদিস রয়েছে। (বদরুদ্দিন আইনি, উমদাতুল কারি, খণ্ড- ১ম, পৃ:- ১০)

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ছয় লক্ষ হাদিস যাচাই-বাছাই করে সুদীর্ঘ ১৬ বছরে এ সহিহ গ্রন্থটি সংকলন করেছি এবং এ গ্রন্থটিকে আমার ও আল্লাহ তাআলার মাঝে নাজাতের ওসিলারূপে স্থাপন করেছি। (ইবনে হাজার, হুদাস সারী- পৃ: ৬৭৫)

ইলমে হাদিস জগতের উজ্জ্বল এই নক্ষত্র শাওয়ালের এক তারিখ ২৫৬ হিজরিতে ঈদুল ফিতর এর রাতে এশার নামাজের পর সমরকন্দে ইন্তেকাল করেন। ঈদের দিন জোহরের সালাতের পর তাকে দাফন করা হয়। দাফনের পর তার কবর থেকে মিশক আম্বরের মতো সুগন্ধি বের হতে থাকে এবং কবর বরাবর আকাশে লম্বাকৃতি একটি সাদা রেখা দেখা দিলে মানুষ তা বিস্ময়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করে। পরে আল্লাহর একজন নেককার বান্দা আল্লাহর দরবারে এই সুগন্ধি বন্ধ করার জন্য দোয়া করলে তা বন্ধ হয়ে যায়। (হাফিজ ইবনে কাসির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড: ১১, পৃষ্ঠা-২৩)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর