বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ভূমিকম্প থেকে বাঁচার আমল

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:১৮ পিএম

শেয়ার করুন:

ভূমিকম্প থেকে বাঁচার আমল

ভূমিকম্প খুবই বিধ্বংসী এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম। এই দুর্যোগের কারণ নিয়ে ভূতত্ত্ববিজ্ঞানিরা বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করলেও ইসলামি বিশ্বাসমতে তা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মানুষের জন্য সতর্কবার্তা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলে দাও, ‘আল্লাহ তোমাদের উপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম’ (সুরা আনআম: ৬৫)। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আজাবের) নিদর্শনগুলো পাঠাই।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৫৯)

ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার জন্য কিছু করণীয় রয়েছে, যা মুসলিম উম্মাহর আমল করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। কেননা অদূর ভবিষ্যতে ভূমিকম্প হওয়ার আশংকা হাদিসে যেমন রয়েছে, বিশেষজ্ঞরাও নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে একই কথাই বলছেন। তাছাড়া তুরস্ক ও সিরিয়ার সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এখন ভূমিকম্পভীতি তৈরি হয়েছে। আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ নিয়েও অনেকে শংকার কথা বলছেন। তাই গুনাহের কাজ ত্যাগ করে এখনই সতর্ক হওয়া ও আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা জরুরি। 


বিজ্ঞাপন


আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘যখন আমার আজাব তাদের ওপর পৌঁছল তখন কেন তারা বিনীত হলো না? বরং তাদের হৃদয়গুলো কঠিন হয়ে গেল। তারা যা (অবাধ্যতা) করে যাচ্ছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করে দেখিয়েছিল। (সুরা আনআম: ৪৩)

নিচে ভূমিকম্পের মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো তুলে ধরা হলো।

দান-সদকা
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে মুক্তির জন্য দরিদ্র ও মিসকিনদের দান করতে উৎসাহ দেয় ইসলাম। কেননা রাসুল (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে।’ (বুখারি: ১৭৩২) ইতিহাসে আছে, ভূমিকম্প হলে উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) তার গভর্নরদের দান-সদকা করার প্রতি জোর দিতে চিঠি লিখতেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘সদকা আল্লাহর অসন্তুষ্টিকে নিভিয়ে দেয় এবং অপমৃত্যু রোধ করে।’ (তিরমিজি: ৬০০)

ইস্তেগফার ও তাওবা
এছাড়াও যেকোনো বিপদ-মসিবতে ইস্তেগফার ও তওবা করা মুত্তাকিদের একটি বিশেষ আমল। সেজন্য ভূমিকম্পের সময় প্রত্যেক মুসলমানের আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে তাওবা করা উচিত। এক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (স.) নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে মহান আল্লাহর জিকির করো, তাঁর কাছে তওবা করো।’ (বুখারি: ২/৩০; মুসলিম: ২/৬২৮)

সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ
ভূমিকম্পসহ যেকোনো বিপদ থেকে রক্ষা পেতে নেতৃস্থানীয়দের করণীয় হলো— অধীনদের সত্য ও সঠিক পথে চলতে আদেশ দেওয়া, নিজ নেতৃত্বাধীন এলাকায় আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করা এবং লোকদের সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘আর বিশ্বাসী পুরুষরা ও বিশ্বাসী নারীরা হচ্ছে পরস্পর একে অন্যের বন্ধু, তারা সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজে নিষেধ করে। আর যথাযথভাবে নামাজ আদায় করে ও জাকাত প্রদান করে, আর আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে। এসব লোকের প্রতিই আল্লাহ অতিসত্বর করুণা বর্ষণ করবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ অতিশয় ক্ষমতাবান হেকমতওয়ালা।’ (সূরা তাওবা: ৭১)

তাছাড়া সৎকাজের আদেশ ও অন্যায়ে বাধা দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত। হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ করে বলছি—তোমরা অবশ্যই ভালো কাজে মানুষকে আদেশ দেবে এবং অবশ্যই অন্যায় থেকে নিষেধ করবে। যদি তা না করো তাহলে আল্লাহ তোমাদের উপর তাঁর পক্ষ থেকে শাস্তি প্রেরণ করবেন। এরপর তোমরা তাঁর নিকট প্রার্থনা করলেও তিনি কবুল করবেন না।’ (তিরমিজি: ৪/৪০৬, নম্বর: ২১৬৯, ভা-২/৪০) 

নামাজ ও সবর
সাহাবিদের জীবনেতে আমরা দেখি, বিপদে-মসিবতে তাঁরা নামাজে দাঁড়াতেন ও ধৈর্য ধারণ করতেন। (মেশকাতুল মাসাবিহ: ৫৩৪৫) 

তাকওয়া
আল্লাহর গজব ও যেকোনো মসিবত থেকে বেঁচে থাকার বড় উপায় হচ্ছে তাকওয়া অবলম্বন করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি জনপদের মানুষগুলো ঈমান আনত এবং (আল্লাহকে) ভয় করতো, তাহলে আমি তাদের ওপর আসমান-জমিনের যাবতীয় বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম, কিন্তু তারা (আমার নবীকেই) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য আমি তাদের পাকড়াও করলাম।’ (সুরা আরাফ: ৯৬)

দোয়া
ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক যেকোনো দুর্যোগ, বিপদ-মসিবতে দোয়া পাঠের শিক্ষা রয়েছে হাদিসে। যে কোনো দোয়া করা যায়, তবে বিপদ-মসিবতে বিশেষভাবে যে দোয়াটি পড়ার কথা পাওয়া যায় তা হলো—

 لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ-লিমিন।’ অর্থ: ‘তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তুমি পবিত্র সুমহান। আমি নিশ্চয়ই জালিমদের দলভুক্ত।’ 

আল্লাহর নবী ইউনুস (আ.) বিপদে পড়ে বারবার এই দোয়া পড়েছিলেন। দোয়া ইউনুস নামেই পরিচিত দোয়াটি। এই দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে মহানবী (স.) বলেছেন, ‘মাছের পেটে ইউনুস (আ.) এই দোয়া পড়ে আল্লাহকে ডেকেছিলেন এবং মুক্তি পেয়েছিলেন। যদি কোনো মুসলিম বিপদে পড়ে এই দোয়া পাঠ করে, আল্লাহ তা কবুল করবেন।’ (আহমদ, তিরমিজি, মেশকাত: ২২৯২)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গুনাহমুক্ত জীবন-যাপন করার, বেশি বেশি দান-সদকা ও তওবা করার এবং যেকোনো মসিবত দুর্যোগে দোয়া ইউনুস পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর