শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

ভূমিকম্পের সময় নামাজ ছেড়ে দেওয়ার বিধান

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০১:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

ভূমিকম্পের সময় নামাজ ছেড়ে দেওয়ার বিধান

ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হলো নামাজ। মুসলমানদের প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারিত সময়ে আদায় করা ফরজ। যে যেখানে থাকুক না কেন, সময়মতো নামাজ আদায় করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, اِنَّ الصَّلٰوۃَ کَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ کِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا ‘নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।’ (সুরা নিসা: ১০৩)

তাকবিরে তাহরিমার পর পূর্ণ মনোযোগ ও একাগ্রতার সঙ্গে নামাজ পড়তে উৎসাহিত করে ইসলাম। নামাজে দাঁড়িয়ে এ খেয়াল করতে হবে যে, আমি আল্লাহ তাআলার সম্মুখে দাঁড়িয়েছি এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলছি। কেননা নামাজ হলো আল্লাহ তাআলার সঙ্গে একান্তে কথোপকথন করা। সহিহ বুখারিতে এসেছে, সাহাবি আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মুমিন যখন নামাজে থাকে সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে নিভৃতে কথা বলে।’ (সহিহ বুখারি: ৪১৩)


বিজ্ঞাপন


নামাজে মনোযোগ ও একাগ্রতার এত গুরুত্ব থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে নামাজ ভেঙে দেওয়ার অবকাশ দিয়েছে শরিয়ত। তার মধ্যে ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় অন্যতম। কোনো ব্যক্তির নামাজ আদায়কালে যদি ভূমিকম্প বা অগ্নিকাণ্ড শুরু হয় এবং যদি তার ধারণা হয় যে, পালিয়ে গেলে তবেই বাঁচা যাবে, সেক্ষেত্রে নামাজ ছেড়ে দেওয়া তার ওপর আবশ্যক। যদিও ওই নামাজ বিপদশেষে পড়ে নিতে হবে। (সুরা বাকারা ২৩৯ আয়াতের তাফসির; আল-মুগনি: ৩/৯৭)

একইভাবে পানিতে ডুবে যাচ্ছে কিংবা আগুনে পুড়ে যাচ্ছে—এমন ব্যক্তিকে রক্ষা করার জন্যও নামাজ ছেড়ে দিতে হবে। এ বিষয়ের মূল দলিল হলো- তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না। আর ভালো কাজ করো; যারা ভাল কাজ করে আল্লাহ তাদেরকেই ভালোবাসেন। (সুরা বাকারা: ১৯২)

তবে, অজ্ঞতাবশত কেউ নামাজ ছেড়ে না দিলে এবং এতে তার মৃত্যু হলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন ইনশাআল্লাহ। পবিত্র কোরআনে অজ্ঞতার গুনাহ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় তাদের তাওবা কবুল করা আল্লাহর জিম্মায় যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কাজ করে..।’ (সুরা নিসা: ১৭) 

তাছাড়া ভূমিকম্পের মতো দুর্ঘটনাজনিত কারণে কারো মৃত্যু হলে সেই ব্যক্তি শহীদ সাব্যস্ত হবেন। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ, কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, নিউমোনিয়াজাতীয় কঠিন পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ…। (আবু দাউদ: ৩১১১)


বিজ্ঞাপন


অতএব, নিজের জান বাঁচানোর জন্য ভূমিকম্পের সময় নামাজ ছেড়ে দেওয়া জায়েজ। যদি নিরাপদ স্থানে না পালালে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে, তাহলে নামাজ ভেঙে দিয়ে জান বাঁচানো ফরজ। শরিয়তের অনুমতি আছে এমন আরও কিছু নামাজ ছেড়ে দেওয়ার কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো—

মা-বাবা ডাকলে
মা বাবা ডাকলে তাঁদের খেদমতে নামাজ ভেঙে দিতে পারবেন। যদি প্রবল ধারণ হয় যে, মা-বাবা ডেকেছেন সাধারণ কোনো কারণে, তখন নামাজ ভেঙে দিতে হবে না। কিন্তু যদি বুঝতে পারেন যে, তাঁদের তৎক্ষণাৎ সাহায্যের প্রয়োজন হচ্ছে তখন নামাজ ভেঙে দেওয়া জায়েজ। (সূত্র: সহিহ বুখারি: ৪/৪০৪)

অন্ধের বিপদে
কেউ নামাজ আদায় করছে—এমন অবস্থায় দেখল যে, কোনো অন্ধ কূপ অথবা গর্তের দিকে চলে যাচ্ছে, আর তাতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে; তাহলে নামাজ ভেঙে দিতে পারবে। (তিরমিজি: ৩৫৫)

মজলুমকে বাঁচাতে
কোনো নির্যাতিত ব্যক্তি যদি নামাজ আদায়কারীর প্রতি সাহায্যের আবেদন জানায় এবং চিৎকার করে তাকে ডাকে; আর যদি নামাজ আদায়কারী মনে করে, সে ওই ব্যক্তিকে জুলুম থেকে রক্ষা করতে পারবে, তাহলে নামাজ ভেঙে দেওয়া আবশ্যক। (তিরমিজি: ৩৩৫)

মালামাল হেফাজতের জন্য
নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি যদি নিজের বা অন্যের মোটামুটি মূল্যের কোনো জিনিস নষ্ট কিংবা চুরি হওয়ার আশঙ্কা করে, এর হেফাজতের জন্য নামাজ ছেড়ে দেয়া জায়েজ আছে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজজাক: ৩২৯১; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১০৯; আদ্দুররুল মুখতার: ২/৫১; সহিহ বুখারি: ৪/৪১২)

যানবাহন ছেড়ে দেওয়ার আশঙ্কা থাকলে
দুরপাল্লার যানবাহন ছেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে এবং যানবাহনে থাকা নিজের মালামাল চুরি বা খোয়ানোর আশঙ্কা থাকলে নামাজ ছেড়ে দেওয়া জায়েজ। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১০৯; আদ্দুররুল মুখতার: ২/৫১)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শরিয়তসম্মত কারণগুলো ছাড়া নামাজ ছেড়ে দেওয়ার গুনাহ থেকে রক্ষা করুন। নিজের এবং অন্যের জান বাঁচানো সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ইলম দান করুন। আমিন। 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর