শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ভূমিকম্পের সময় দোয়া

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৪:৩৫ পিএম

শেয়ার করুন:

ভূমিকম্পের সময় দোয়া

ভূমিকম্প খুবই বিধ্বংসী এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম। এই দুর্যোগের কারণ নিয়ে ভূতত্ত্ববিজ্ঞানিরা বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করলেও ইসলামি বিশ্বাসমতে তা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মানুষের জন্য সতর্কবার্তা। 

মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলে দাও, ‘আল্লাহ তোমাদের উপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম’ (সুরা আনআম: ৬৫)। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আজাবের) নিদর্শনগুলো পাঠাই।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৫৯)

সুতরাং ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো মানুষের কৃতকর্মেরই ফল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে বিপদ-আপদই তোমাদের ওপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই। আর আল্লাহ তোমাদের অনেক (অপরাধ) ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা শুরা: ৩০)

আরও পড়ুন: হাদিসে ৭টি সর্বনাশা গুনাহ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ

ভূমিকম্পের সময় দোয়া
ভূমিকম্পের সময় বিশেষ দোয়া পাঠের শিক্ষা রয়েছে হাদিসে। দোয়াটি হলো— لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ-লিমিন।’ অর্থ: ‘তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তুমি পবিত্র সুমহান। আমি নিশ্চয়ই জালিমদের দলভুক্ত।’

আল্লাহর নবী ইউনুস (আ.) বিপদে পড়ে বারবার এই দোয়া পড়েছিলেন। দোয়া ইউনুস নামেই পরিচিত দোয়াটি। তখন আল্লাহ তাআলা মুসা (আ.)- এর দোয়া কবুল করে তাকে সংকট থেকে মুক্তি দিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তখন আমি তার (ইউনুসের) ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দুশ্চিন্তা থেকে উদ্ধার করেছিলাম। আর এভাবেই আমি মুমিনদের নাজাত দিয়ে থাকি।’ (সুরা আম্বিয়া: ৮৮)

এই দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে মহানবী (স.) বলেছেন, ‘মাছের পেটে ইউনুস (আ.) এই দোয়া পড়ে আল্লাহকে ডেকেছিলেন এবং মুক্তি পেয়েছিলেন। যদি কোনো মুসলিম বিপদে পড়ে এই দোয়া পাঠ করে, আল্লাহ তা কবুল করবেন।’ (আহমদ, তিরমিজি, মেশকাত: ২২৯২)

প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচতে করণীয়

দান-সদকা
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে মুক্তির জন্য দরিদ্র ও মিসকিনদের দান করতে উৎসাহ দেয় ইসলাম। কেননা রাসুল (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে।’ (বুখারি: ১৭৩২) ইতিহাসে আছে, ভূমিকম্প হলে উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) তার গভর্নরদের দান-সদকা করার প্রতি জোর দিতে চিঠি লিখতেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘সদকা আল্লাহর অসন্তুষ্টিকে নিভিয়ে দেয় এবং অপমৃত্যু রোধ করে।’ (তিরমিজি: ৬০০)

আরও পড়ুন: কাকে দান করবেন? নবীজির দৃষ্টিতে প্রকৃত হকদার যারা

ইস্তেগফার ও তাওবা
এছাড়াও যেকোনো বিপদ-মসিবতে ইস্তেগফার ও তওবা করা মুত্তাকিদের একটি বিশেষ আমল। সেজন্য ভূমিকম্পের সময় প্রত্যেক মুসলমানের আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে তাওবা করা উচিত। এক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (স.) নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে মহান আল্লাহর জিকির করো, তাঁর কাছে তওবা করো।’ (বুখারি: ২/৩০; মুসলিম: ২/৬২৮)

নামাজ ও সবর
সাহাবিদের জীবনেতে আমরা দেখি, বিপদে-মসিবতে তাঁরা নামাজে দাঁড়াতেন ও ধৈর্য ধারণ করতেন। (মেশকাতুল মাসাবিহ: ৫৩৪৫)

আরও পড়ুন: তওবার নামাজ পড়ার নিয়ম

তাকওয়া
আল্লাহর গজব ও যেকোনো মসিবত থেকে বেঁচে থাকার বড় উপায় হচ্ছে তাকওয়া অবলম্বন করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি জনপদের মানুষগুলো ঈমান আনত এবং (আল্লাহকে) ভয় করতো, তাহলে আমি তাদের ওপর আসমান-জমিনের যাবতীয় বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম, কিন্তু তারা (আমার নবীকেই) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য আমি তাদের পাকড়াও করলাম।’ (সুরা আরাফ: ৯৬)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গুনাহমুক্ত জীবন-যাপন করার, বেশি বেশি দান-সদকা ও তওবা করার এবং যেকোনো মসিবত দুর্যোগে দোয়া ইউনুস পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর