বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার সওয়াব

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার সওয়াব

আল্লাহ তাআলা পৃথিবীকে মুমিনদের জন্য পরীক্ষাগার বানিয়েছেন। এখানে তিনি বিপদ-মসিবত, ভয়, ক্ষুধা ইত্যাদি দিয়ে পরীক্ষা করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) তোমাদের ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি ধৈর্যশীলদের শুভ সংবাদ দাও, যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, ‘আমরা তো আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫-১৫৬)

বিপদ-আপদ আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া হয় না। পবিত্র কোরআনে আছে, ‘আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো বিপদই আপতিত হয় না।’ (সুরা তাগাবুন: ১১)


বিজ্ঞাপন


ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, অতিবৃষ্টিসহ সকল দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশা দাঁড়াতে উৎসাহিত করে ইসলাম। এটি উৎকৃষ্ট নেক আমল বা মহান ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। নিজের জীবন যেন বিপন্ন না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে অপর ভাইয়ের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আর্থিক ও শারীরিকভাবে যতটুকু সাধ্যে কুলোয় ততটুকু সহযোগিতা করতে হবে। 

রাসুলুল্লাহ (স.) সব মুসলমানকে একটা দেহের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, ‘পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া-মায়া ও স্নেহ-মমতার দিক থেকে গোটা মুসলিম সমাজ একটি দেহের সমতুল্য। যদি দেহের কোনো বিশেষ অঙ্গ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তা হলে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও তা অনুভূত হয়; সেটা জাগ্রত অবস্থায়ই হোক কিংবা জ্বরাক্রান্ত অবস্থায়।’ (মুসলিম: ৬৭৫১)

আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন মুমিনের জন্য ইমারতসদৃশ, যার এক অংশ অন্য অংশকে মজবুত করে। এরপর তিনি (হাতের) আঙুলগুলো (অন্য হাতের) আঙুলে (ফাঁকে) ঢোকালেন। (বুখারি: ৬০২৬)

আরও পড়ুন: মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করার সওয়াব


বিজ্ঞাপন


রাসুল (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে দুনিয়ার বিপদসমূহের মধ্যকার কোনো বিপদ থেকে রক্ষা করবে, এর প্রতিদানে আল্লাহ কেয়ামতের দিনের বিপদসমূহের কোনো বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করবেন। দুনিয়ায়ও আল্লাহর দয়া পেতে অন্য ভাইয়ের সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নবীজি (স.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা বান্দার সাহায্যে ততক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ সে অপর ভাইয়ের সাহায্যে থাকে।’ (মুসলিম: ২৩১৪)। 

হাদিসে আরও এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে।’ (বুখারি: ১৭৩২)

মহান আল্লাহর ওপর সবাইকে অগাধ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, তিনি অবশ্যই বান্দার জন্য কল্যাণকর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন এবং তিনিই বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন এবং সাময়িক বিপদের বিনিময়ে আরও উত্তম কোনো নেয়ামত দিয়ে পুরস্কৃত করবেন।

ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাব। এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের রবের পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ এবং রহমত বর্ষিত হয়, আর তারাই সৎপথে পরিচালিত।’ (সুরা বাকারা: ১৫৬-১৫৭) 

মনে রাখতে হবে, কখনো মানুষের গুনাহের কারণেও বিভিন্ন বিপদ আসে। তাই বিপদ আসার আগে তওবা-ইস্তেগফারে অভ্যস্ত হতে হবে, আল্লাহভীতি গুণ অর্জন করতে হবে। আর আল্লাহ তাআলার কাছে সবসময় দোয়া করতে হবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ তৈরি করে দেন।’ (সুরা তালাক: ০২)

আরও পড়ুন: তাকওয়া অর্জনের ৭ উপায়

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ধৈর্যধারণ করা। কঠিন সময়ে ধৈর্য ধরা নবীদের গুণ। সব রকম কষ্ট-বাধা-সমস্যার বিপরীতে শক্ত থেকে দায়িত্ব শেষ করাই হচ্ছে ধৈর্য। এতে দুনিয়ার বিপদ থেকে যেমন সহজে মুক্ত হওয়া যায়, আখেরাতেও পুরস্কার পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সফলকাম বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ আমি তাদেরকে তাদের ধৈর্যের কারণে এমন প্রতিদান দিয়েছি যে তারাই সফলকাম।’ (সুরা: মুমিনুন: ১১১)

অতএব, প্রাকৃতিক যেকোনো দুর্যোগে এগিয়ে আসতে হবে সামর্থ্যবানদের। উদ্ধার সরঞ্জাম, টাকা-পয়সা, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানবিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। 

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা! আমি তোমাদের যে জীবনের উপকরণ দিয়েছি, তা থেকে তোমরা ব্যয় করো সেদিন আসার আগেই যেদিন কোনো বেচাকেনা, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না।’ (সুরা বাকারা: ২৫৪)।

কেউ মসিবতের সময় মারা গেলে তাকে জানাজা বা দাফন-কাফনে শরিক হওয়া জরুরি না হলেও পবিত্র দায়িত্ব। এতে বিপুল সওয়াব রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুর্দাকে গোসল দেয় এবং তার ত্রুটি গোপন করে, আল্লাহ সে ব্যক্তির গুনাহ গোপন (মাফ) করে দেন। আর যে ব্যক্তি মুর্দাকে কাফন পরাবে আল্লাহ তাকে (জান্নাতি) ফাইন রেশমের বস্ত্র পরিধান করাবেন। (তাবারানি কাবির: ৮০০৪)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রহম করুন। বিপদ-মসিবতে ধৈর্যধারণ করার, তওবা-ইস্তেগফার করার তাওফিক দিন। অন্যের বিপদে সবাইকে এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর