শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ভালো কথা জাহান্নামের প্রতিবন্ধক

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৫:৩৫ পিএম

শেয়ার করুন:

ভালো কথা জাহান্নামের প্রতিবন্ধক

ভালো কথা ইবাদত। ইসলামি শরিয়তে দুই রকম ভালো কথার বর্ণনা পাওয়া যায়। সালিহ আল উসাইমিন (রহ.) বলেন, ভালো কথা দুভাগে বিভক্ত। এক. প্রত্যক্ষ ভালো কথা। হাদিসের ভাষ্যমতে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবর, আলহামদুলিল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ, কোরআন তেলাওয়াত প্রভৃতি প্রত্যক্ষ ভালো কথার অন্তর্ভুক্ত। দুই. পরোক্ষ ভালো কথা—তা যেকোনো ভালো কথাকে অন্তর্ভুক্ত করে। (শারহু রিয়াজুস সালিহিন: ১/২৯০)

ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন, ‘কোনো বান্দা যখন সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, লা ইলাহা ইল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর পড়ে—তখন একজন ফেরেশতা তা ডানায় করে আসমানে নিয়ে যায়। যখন সে ফেরেশতা কোনো ফেরেশতাদের দলের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে তখন তারা ওই ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। এভাবে জমিন থেকে আগত ফেরেশতাটি তা নিয়ে আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির: ৬/৫৩৭)

জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে ভালো কথা বলতে উৎসাহিত করা হয়েছে হাদিসে। আদি ইবনু হাতিম (রা.) বলেন, একদা রাসুল (স.) জাহান্নাম নিয়ে আলোচনা করলেন। এরপর তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং এক অস্বস্তির ভাব প্রকাশ করলেন আর বললেন, তোমরা নিজদের জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো। এরপর তিনি আবার মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং এক অস্বস্তির ভাব প্রকাশ করলেন। অতঃপর বললেন, ‘তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে আত্মরক্ষা করো, যদিও তা এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হয়। আর যে ব্যক্তির একটুকুও সামর্থ্য নেই, তাহলে সে যেন অন্তত ভালো কথা দিয়ে জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা করে।’ (সহিহ মুসলিম: ১৬৮৯)

যেকোনো ভালো কথা এবং ভালো কাজ সদকার সমতুল্য। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘ভালো কথা সদকা’ (সহিহ বুখারি: ২৯৮৯)। সালিহ আল উসাইমিন (রহ.) বলেন, সদকাটা শুধু সম্পদের সঙ্গে নির্দিষ্ট নয়। ব্যাপকার্থে এটি যেসব কাজ আল্লাহর নিকটবর্তী করে—তার সব কিছুকে শামিল করে। (শারহু রিয়াদিস সালিহিন: ১/২৯০)

ভালো কথা ঈমানের অঙ্গ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আখেরাতের ওপর ঈমান আনে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আখেরাতের ওপর ঈমান আনে সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আখেরাতের ওপর ঈমান আনে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা নীরবতা অবলম্বন করে।’ (বুখারি: ৬১২০)

ভালো কথার মাধ্যমে গুনাহ ক্ষমা করা হয়। হানি ইবনু ইয়াজিদ (রা.) রাসুলুল্লাহ (স.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘পাপ মোচনের অন্যতম মাধ্যম হলো, বেশি বেশি সালাম দেওয়া এবং ভালো কথা বলা।’ (তিবরানি: ২২/১৮০)

এছাড়াও ভালো কথা মর্যাদা বৃদ্ধির মাধ্যম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘নিশ্চয় বান্দা কখনো কখনো আল্লাহর সন্তুষ্টির এমন কথা ফেলে, তার দ্বারা আল্লাহ তাআলা তার সম্মান বৃদ্ধি করে দেন। আবার কখনো কখনো বান্দা আল্লাহর অসন্তুষ্টির এমন কথা বলে ফেলে, যার পরিণতি সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই নেই, অথচ সে কথার পরিণতিতে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৪৭৮)

পরিশেষে বলা যায়, ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অপ্রয়োজনীয় ও অনর্থক কথা পরিহার করা। কথা যদি বলতেই হয়, ভেবেচিন্তে বলতে হবে। নবী (স.) বলেন, মানুষ চিন্তা-ভাবনা না করে এমন কথাবার্তা বলে, যার দ্বারা তার পদস্খলন ঘটে পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যবর্তী দূরত্ব থেকে বেশি দূরত্ব দোজখে গিয়ে পতিত হয়। (বুখারি: ৬৪৭৭; মুসলিম: ৭৬৭২)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সারা জীবন ভালো কথা বলার তাওফিক দান করুন। খারাপ কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর