সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ধূমপান: ইসলাম যা বলে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০৬:৫৫ পিএম

শেয়ার করুন:

বাজেটে ধূমপায়ীদের জন্য দুঃসংবাদ 

ধূমপান একটি মারাত্মক বদভ্যাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরাসহ মোটামুটি সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত যে, ধূমপান যক্ষ্মা, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ নানা রোগের অন্যতম প্রধান কারণ এবং ধারক ও বাহক। কিন্তু তিক্ত হলেও সত্য—বিশ্বের বর্তমান জনসংখ্যার বড় একটি অংশ এই মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত। ধূমপানের ফলে যে শুধু নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা নয়; বরং তাদের সংস্পর্শে থাকা অধূমপায়ীও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়ে ফুসফুসের নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

ধূমপান প্রয়োজনীয় নয় এবং উপকারীও নয়; বরং শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই এটি সম্পূর্ণ অপচয়ের শামিল। ইসলামি বিধানে অপচয় করা হারাম; অপচয়কারী শয়তানের ভাই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না; নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই; আর শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা ইসরা: ২৬-২৭) 


বিজ্ঞাপন


ধূমপান মৃত্যু ঘটায়—বিষয়টি জেনেও মানুষ নিজ হাতে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। অথচ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(তোমরা) নিজের হাতে নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না।’ (সুরা বাকারা: ১৯৫)

এই আয়াতে সরাসরি ধূমপানের কথা উল্লেখ না থাকলেও ধূমপান এমন একটি কাজ, যার মাধ্যমে মানুষ নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। অনেকে যুক্তি দিয়ে থাকেন, ধূমপান করে সবাই তো আর মারা যায় না।  হ্যাঁ, সব ধূমপায়ী ধূমপানের প্রথম পুরস্কার মৃত্যু উপহার না পেলেও এর পরের পুরস্কারগুলো ঠিকই পান।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সর্বজনীনভাবে এটি স্বীকৃত যে, ধূমপান যক্ষ্মা, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ নানা রোগের অন্যতম প্রধান কারণ।

এ ছাড়া ধূমপানে রয়েছে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি। ধূমপান ত্বকের একদম বাইরের দিকের ধমনিগুলোতে রক্ত সঞ্চালন কমিয়ে দেয়। ফলে ত্বকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনটুকুও পৌঁছায় না। যা অল্প বয়সেই মানুষকে বুড়ো বানিয়ে দেয়। এ ছাড়া সিগারেটের তামাকে থাকে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, যা মানুষের ত্বকের এলাস্টিন এবং কোলাজেনকে নষ্ট করে দেয়। সে কারণেই ধূমপায়ীদের ত্বকে বলিরেখা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

সিগারেটের নিকোটিনের কারণে দাঁতের ঝকঝকে সাদা রং পালটে হলদেটে হয়ে যায়। ধূমপানের ফলে চুলেরও ক্ষতি হয়। গবেষণায় জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে যারা ধূমপান করছেন তাঁদের চুল বাকিদের তুলনায় অনেক পাতলা হয়। কারণ সিগারেট চুলের ডিএনএগুলোকে নষ্ট করে দেয়। এ ছাড়া ধূমপানের ফলে চোখের তলায় কালি, ‘ব্ল্যাকহেডস’-এর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। অতিরিক্ত ধূমপানের ফলে হিমোগ্লোবিন বেশি পরিমাণে অক্সিজেন বহনে অক্ষম হয়ে পড়ে। যে কারণে শরীরের ক্ষত সারতেও অধিক সময় লাগে।

এ কারণে ইসলামি আইনজ্ঞরা ধূমপান করাকে মাকরুহ বলে থাকেন। (ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ১১/৪০৬)। তাছাড়া এটি সর্বজনস্বীকৃত বিষয় যে, ধূমপান কোনো ভালো কাজ নয়। ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশেই জনসম্মুখে প্রকাশ্যে ধূমপান কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কারণ এর দ্বারা অধূমপায়ী ও শিশুদের যেমন কষ্ট হয়, তেমনি তারাও পড়ে যান স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। 

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! যে সমস্ত পাক-পবিত্র (উৎকৃষ্ট) জিনিস আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দিয়েছি সেগুলো খাও এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত করে থাকো।’ (সুরা বাকারা: ১৭২)। এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, ধূমপান করা কোনো মুমিনের জন্য শোভা পায় না। 

তাছাড়া এটি সর্বজনস্বীকৃত বিষয় যে, ধুমপায়ীর মুখের দুর্গন্ধে অন্যের কষ্ট হয়, যা পৃথক একটি গুনাহ। তাই অন্যের কষ্টের কারণ না হতে ধুমপান থেকে বিরত থাকা জরুরি। কোনো মুমিন ধূমপান করে অন্যকে কষ্ট দিতে পারে না। রাসুল (স.) বলেছেন, কেউ অপরের ক্ষতি করলে আল্লাহ তার ক্ষতিসাধন করবেন। (আবু দাউদ: ৩৬৩৫)। আর ধূমপানের কারণে মুখ দুর্গন্ধযুক্ত হলে, এ অবস্থায় নামাজে দাঁড়ানো মাকরুহে তাহরিমি। বরং এ অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করাও মাকরুহ। হাদিসে ধূমপানের চেয়ে অনেক কম দুর্গন্ধ বস্ত্ত কাঁচা পেঁয়াজ-রসুন খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করতেও নিষেধ করা হয়েছে।

অবশ্য এ কারণে নামাজ ত্যাগ করা যাবে না এবং মসজিদে গমনাগমনও বন্ধ করা যাবে না। বরং অতি দ্রুত এ বদ অভ্যাস ত্যাগ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে হবে। আর নামায আদায়ের পূর্বে এবং মসজিদে প্রবেশের আগে ভালো করে মেসওয়াক বা ব্রাশ করে দুর্গন্ধ দূর করে নিতে হবে। -(ফাতাওয়াল লাজনাতিদ দাইমা ১৩/৫৬; আলফাতাওয়াশ শারইয়্যাহ ১০/১৪৫; রদ্দুল মুহতার ১/৬৬১)

ই-সিগারেট কি জায়েজ?
ই-সিগারেট মূলত সিগারেটের বিকল্প। অনেকে সিগারেট ছাড়ার জন্যও ই-সিগারেট ব্যবহার করেন। এই সিগারেটের ভেতরে নিকোটিন, প্রপাইলিন গ্লাইকল অথবা ভেজিটেবল গ্লিসারিন এবং সুগন্ধি মিশ্রিত থাকে। কিন্তু তামাকের ভেতর থাকা অনেক বিষাক্ত রাসায়নিকের তুলনায় (যেমন টার ও কার্বন মনোক্সাইড) নিকোটিন তুলনামূলক কম ক্ষতি করে। অর্থাৎ ই-সিগারেটও স্বাস্থ্যের পক্ষে শতভাগ নিরাপদ নয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাক নিয়ে তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদন ই-সিগারেটকে সুনিশ্চিতভাবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম শহর হিসেবে ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক সিগারেট নিষিদ্ধ করেছে সান ফ্রান্সিসকো।

বাংলাদেশে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, ‘বিষয়টি আমাদের জন্য নতুন। একসময় ই-সিগারেট জাতীয় পণ্যকে সিগারেটের নিরাপদ বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও এখন বিভিন্ন গবেষণায় এর ক্ষতির বিষয়গুলো সামনে আসছে। সুতরাং আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তা করছি।’ তাই বিনা প্রয়োজনে ই-সিগারেট গ্রহণ করাও মাকরুহ হবে। স্কটল্যান্ডে এক জরিপে দেখা গেছে, তরুণদের অনেকে ই-সিগারেট ব্যবহার করে পরে ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়েছে। (বিবিসি)

কিন্তু কেউ যদি ডাক্তারের পরামর্শে সিগারেট বন্ধ করার জন্য তা গ্রহণ করে, তবে তা ‘মুবাহ’ (বৈধ) হবে। (আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল: ৭/১৮২)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ক্ষতিকর সকল অভ্যাস থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর