বুধবার, ৮ মে, ২০২৪, ঢাকা

হাদিসের আলোকে সর্বোত্তম বিয়ে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০৫:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

হাদিসের আলোকে সর্বোত্তম বিয়ে

বিয়ে মহান আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত এবং রাসুলুল্লাহ (স.)-এর পবিত্র সুন্নত। ভালোবাসা, দয়া, শান্তি ও সুশৃঙ্খল জীবনের অন্যতম মাধ্যম বিয়ে। এই বিয়ে জমকালো আয়োজন, জৌলুসপূর্ণ হওয়া উচিত নয়। আলোকসজ্জা, গান-বাদ্য এবং খরচের প্রতিযোগিতা বিয়ের বরকত নষ্ট করে।

হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, সর্বোত্তম, কল্যাণকর ও বরকতময় বিয়ে হলো, যা খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সহজসাধ্যভাবে অল্প খরচে অনুষ্ঠিত হয়। ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম  বিয়ে হলো যা খরচের দিক থেকে সহজসাধ্য হয়।’ (আবু দাউদ: ২১৯)

বিয়ে যত অনাড়ম্বর হবে, খরচ যত কম হবে, ততই তা বরকতপূর্ণ হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘সর্বাধিক বরকতপূর্ণ বিয়ে হচ্ছে, যার খরচ যত সহজ ও স্বাভাবিক হয়।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৪৫২৯)

এ ছাড়া অপব্যয় ও অপচয় নিন্দনীয় কাজ। পবিত্র কোরআনে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমাদের অর্থ-সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রেখো, যারা অপব্যয় করে, তারা শয়তানের ভাই।’ (বনি ইসরাইল: ২৬-২৭)

প্রস্তাব, মোহরানা সহজ হওয়া বরকতের আলামত
বিয়ের প্রস্তাব, মোহরানা ইত্যাদি সহজ হওয়া বরকতের আলামত। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন: ‘কনের বরকতের আলামত হচ্ছে- বিয়ের প্রস্তাবনা সহজ হওয়া, মোহরানা সহজসাধ্য হওয়া এবং গর্ভধারণ সহজ হওয়া।’ (সহিহুল জামে: ২২৩৫) 

আরেক হাদিস হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘সাবধান, তোমরা নারীদের মোহরানা নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। যদি মোহরানা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা দুনিয়াতে সম্মানের বিষয় হত কিংবা আল্লাহর কাছে তাকওয়া হত তাহলে তোমাদের নবী তা করতেন। (সুনানে তিরমিজি, ১১৪) 

মোহরানার পরিমাণ
বিয়ের ক্ষেত্রে মোহরানা আদায় করা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মোহরের শরয়ি বিধান হলো, ১০ দিরহামের কম না হওয়া (১০ দিরহামের পরিমাণ বর্তমান হিসাবে পৌনে তিন ভরি খাঁটি রুপা)। পৌনে তিন ভরি খাঁটি রুপার মূল্য যখন যা, মহরের সর্বনিম্ন মূল্যও তখন তা। তবে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোনো নারীকে ঠকানো যাবে না।  স্ত্রীর বংশ ও তার সমমানের মেয়েদের মোহরের পরিমাণ বিবেচনা করাও উচিত। মোহরের সর্বোচ্চ কত হবে কোনো পরিমাণ শরিয়ত নির্ধারণ করেনি। (বাদায়েউস সানায়ে: ২/২৭৫, মিরকাতুল মাফাতিহ: ৬/৩৫৮)

মোহরে ফাতেমির পরিমাণ হলো ৫০০ দিরহাম বা ১৩১.২৫ তোলা রুপা। বর্তমানে প্রতি তোলা রূপার মূল্য ১২০০/- টাকা হলে মহরে ফাতেমির মূল্য হয় ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা। আর সর্বনিম্ন মোহর বা ১০ দিরহামের মূল্য দাঁড়ায় ৩ হাজার ১৫০ টাকা। (শরহু মুখতাসারিত তাহাবি: ৪/৩৯৮)

ওলিমা সুন্নত
স্বামী-স্ত্রী রাতযাপনের পর শুকরিয়াস্বরূপ স্বামী বা তার নিকটবর্তীদের পক্ষ থেকে মানুষকে খাওয়ানো সুন্নত, যাকে ওলিমা বলে। রাসুলুল্লাহ (স.) নিজে ওলিমা করেছেন এবং সাহাবিদের করতে বলেছেন। জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.)-কে বিয়ে করার পরদিন নবীজি (স.) ওলিমা করেছিলেন। (বুখারি: ৫১৭০)। রাসুলুল্লাহ (স.) ছাফিয়াহ (রা.)-কে বিয়ের পর তিন দিন যাবত ওলিমা খাইয়েছিলেন। (মুসনাদে আবু ইয়ালা: ৩৮৩৪)

তবে এতে বিরাট কোনো আয়োজনের প্রয়োজন নেই, অপচয় তো নয়ই; বরং প্রত্যেকে সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা করবে। এছাড়া অন্যকোনো খানাপিনার আয়োজন সুন্নতসম্মত নয়। (বুখারি: ২০৪৮)

ওলিমায় ধনী-দরিদ্র পার্থক্য করা নিষিদ্ধ

অনেকেই বিয়েতে শুধু ধনীদের দাওয়াত দেয়, যাতে তারা উপঢৌকন দিতে পারে, গরিব আত্মীয়দের এড়িয়ে যায়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘ওই ওলিমার খাবার সর্বনিকৃষ্ট, যাতে দরিদ্রদের বাদ দিয়ে শুধু ধনীদেরই দাওয়াত দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি: ৫১৭৭)

ওলিমা অনুষ্ঠানে উপহারসামগ্রী গ্রহণ
বর্তমানে দেখা যায়, বিয়ের অনুষ্ঠানে উপহার গ্রহণের জন্য ক্যাম্প খুলে বসা হয়। এটি অত্যন্ত দৃষ্টিকটু ও নিম্ন রুচির পরিচায়ক। এতে আগত মেহমানরা লজ্জায় পড়ে যান। যেসব উপঢৌকন দেওয়া হয়, তা যদি চক্ষুলজ্জার খাতিরে বা সামাজিক চাপে বা সুখ্যাতি কিংবা তার বিনিময় পাওয়ার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, তাহলে তা গ্রহণ করা অবৈধ। আর যদি প্রফুল্ল চিত্তে ভালোবাসার স্মারকস্বরূপ দেওয়া হয় এবং না দিলে কোনো ধরনের অপমান করা না হয়, তাহলে ওই উপহারসামগ্রী গ্রহণ করা বৈধ। (বায়হাকি: ১১৫৪৫)

বরযাত্রী আগমন ও আপ্যায়ন
বিয়ে উপলক্ষে বরযাত্রী গমন ও মেয়ের বাড়িতে আপ্যায়ন যদি কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতাহীন এবং সানন্দে হয়, তাহলে তা বৈধ, অন্যথায় অবৈধ। কিন্তু বর্তমানে বরযাত্রী গমন ও মেয়ের বাড়িতে খাবারের আয়োজনের জন্য পারিবারিক ও সামাজিক চাপ সৃষ্টি করা হয়, যা খুবই নিন্দনীয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি মেয়ের পরিবারের প্রতি অবিচার। সুতরাং এমন কাজ পরিহার করা উত্তম। (আস-সুনানুল কুবরা: ১১৫৪৫, ফতোয়ায়ে দারুল উলুম: ৭/৫২২)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর অবিবাহিত যুবক-যুবতীর হাদিসের শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর